- হোম
- >
- আইন-মানবাধিকার
- >
- পুলিশ চার্জশিট দিলেও কান্না থামেনি লালমনিরহাটের হিন্দু পরিবারের
পুলিশ চার্জশিট দিলেও কান্না থামেনি লালমনিরহাটের হিন্দু পরিবারের
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউড়া ইউনিয়নের শফিরহাট এলাকায় এখনো কান্না থামেনি জামায়াত-বিএনপি সমর্থকদের হামলার শিকার একটি হিন্দু পরিবারের লোকজনের। পুলিশ মামলার চার্জশিট দিলেও আতংক আর ভয় নিয়ে কাটছে ওই পরিবারটি লোকজনের। আইন ও শালিস কেন্দ্রের সার্বিক সহযোগিতায় পরিবারটি উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করলেও হুমকী তাদের জন্য এক নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে।
ওই পরিবারটির দায়ের করা বাঁশ কাটা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাটগ্রাম থানার এসআই নজরুল ইসলাম ৬ জামায়াত-বিএনপি সমর্থকের নামে চার্জশিট দাখিল করেছেন রবিবার।
“আমরা আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছি এখন আদালতের নির্দেশে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিবো,” এসআই নজরুল ইসলাম জানান।
পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় জামায়াত নেতা আবুল হোসেনের নেতৃত্বে একদল জামায়াত-বিএনপি সমর্থকরা গতবছর ১৩ জুলাই সকালে ওই হিন্দু পরিবারটির জমি বেদখল করতে যায়। এসময় পরিবারের লোকজন বাধা দিলে তারা হিন্দু পরিবারটির চার সদস্যকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে এবং তাদের বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আহতদের প্রথমে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই জামায়াত নেতার প্রভাব রংপুর পর্যন্ত থাকায় আহত হিন্দু পরিবারের লোকজনকে চিকিৎসার আগেই রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে বের করে দেয়।
খবর পেয়ে ১৮ জুলাই আইন ও শালিস কেন্দ্র থেকে একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে ওই হিন্দু পরিবারটির গুরুতর আহত বৃদ্ধা পুষ্প রানী সেন, তার ছলে শ্যামল চন্দ্র সেনকে ঢাকায় নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করেন। বেশ কয়েকটি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়ে বাড়ীতে ফেরেন তারা।
হিন্দু পরিবারটি জমি বেদখল, বাড়ীতে অগ্নি সংযোগ ও রক্তাক্ত আহত করার ঘটনায় মামলাটির চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ আর সেটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এ মামলায় কয়েকজনের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টও রয়েছে এবং পুলিশ তাদের গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশের এসআই নজরুল ইসলাম জানান, প্রথম দফার হামলার পরও ওই চক্রটি থামেনি। চক্রটি পুনরায় গতবছর ২৮ সেপ্টেম্বও দিন জোড়পুর্বক ওই হিন্দু পরিবারটির বাঁশঝাড়ে এসে বিপুল পরিমানে বাঁশ কেটে নিয়ে যায়। হিন্দু পরিবারটি থানায় ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করলে পুলিশ সুষ্ঠ্য তদন্ত স্বাপেক্ষে চার্জশিট তৈরী করে। এর মধ্যে ওই জামায়াত নেতা আবুল হোসেন আদালতের আশ্রয় নিয়ে হিন্দু পরিবারটির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ তদন্তে এর কোন সত্যতা পায়নি তাই মামলাটিকে মিথ্যা ঘোষনা দিয়ে পুলিশ চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
ওই হিন্দু পরিবারটি গৃহবধু দিপালী রানী সেন জানান, তারা ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। হামলাকারীরা প্রভাবশালী এবং যেকোন সময় বড় ধরনের কুচক্রান্তে তাদের ফাঁসাতে পারে এমনকি হামলাও করতে পারে।
কমল চন্দ্র সেন জানান, আইন ও শালিস কেন্দ্র সহযোগিতা না করলে তারা তাদের বৃদ্ধা মা বাঁচাতে পারতো না। আইন ও শালিস কেন্দ্রের দেয়া আইনি সহযোগিতায় তারা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করছেন। ”জানি না জামায়াত- বিএনপি’র এ খপ্পর থেকে আমরা কবে মুক্তি পাবো। ভয় আর আতংক নিয়ে জীবন চলা অমানবিক হয়ে উঠেছে,” এমনটি জানালেন কমল চন্দ্র সেন।
শেষ সম্বল বসতভিটা, একটি বাঁশ ঝাড় আর একটুকরো আবাদি জমি নিয়ে এই হিন্দু পরিবারটি বেঁচে আছে। সেটির উপর জামায়াত নেতার অবৈধ লোভ পরিবারটিকে ক্লান্ত শ্রান্ত করে তুলেছে। আইনি লড়াই কবে শেষ হবে আর তারা পূর্ণ অধিকার নিয়ে নিজেদের সম্পদ ভোগ করবেন এটাই এখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।