- হোম
- >
- শিল্প-সাহিত্য
- >
- বেদনার নাম
বেদনার নাম
মেঘ ভাসলে মাঠের চোখে ছায়া পড়ে। ঝরাপাতার শব্দ হয় ঝাঁপতাল, বিকেল আর সন্ধ্যাকে করে মোহময়। কোনোদিন প্রিয়তম করতল ভুলিয়ে দেয় একটি মদের বোতল। তারপর মদ ফিরে আসে। মদ সেতো কুকুরের মতো, পায়ে পায়ে ঘুরে; বিশ্বাস রাখে। মদের গ্লাস প্রতিদিনই মাতাল হয়ে কাঁদে। আর আমি রোদনহীন। কান্নাগুলি জানিয়ে দেয় যাপনের মানে।
কোথাও ফুলগুলি সব বকুল হলে বাতাস রঙিন হয়। অচেনা কাঁপন অধরে বাজলে একজন মানুষ কাঁপে। কারো বুক আবাদি হলে শস্যের ঘ্রাণ অভিমান; অভিমান লেলিহান হলে বিচ্ছেদ হয় দিগন্তের গান। সেইসব আমার কাছে ছিলো না বলিনি, ছিলো তা অথৈ নিবিড়। শুনে তুমি ভাবলে, বুঝি বা হারিয়ে গেছে। তারপর চুপ। চুপিচাপ শুয়ে আছো জানলার দোলপর্দায়। তোমার হাতে ধরা সুরশৃঙ্গার। তার তারে বেজে যাচ্ছে চিরদিন অমৃত দীপক। আমার হারানো সকাল খুঁজিনি। শুধালাম একদিন ঝিকিমিকি রোদের কাছে। সেও হেসে চুপিচাপ থির। তারপর বললো, যাই।
যেদিন তুমি প্রথম রৌদ্রের তলে দাঁড়ালে, যেদিন তুমি আমার চোখের ভিতর তাকিয়ে বিস্ময়ে থ— দেখলে আমার দুইটিচোখ হয়ে আছে অশোকের বন— এর আগের রাতে আমার সহবাস ছিলো দূর আকাশের একটি তারার সঙ্গে। নক্ষত্রের নাম অরুন্ধতী। তারাটি একদিন অগ্নিতেও ভুলেনি। আমার সুখের ভিতর তখন শেষরাত্রির ভয়ানক অসুখ। আমার করতলে তখন সুন্দর অগ্নি জ্বলে। আমার পাঁজরের বনে তখন দাবানল। ক্লান্তি যেমন সুখের উত্তরাধিকার, ক্লান্তির উত্তরাধিকার বহ্নিমান চিতা। তারাটি আমার চোখের ভিতর আগুন ঢেলে, আমার দুইটি চোখে অশোক জ্বেলে দিয়ে ফিরে যায়। একজন একদিন আমাকে একটি অশোকগাছের সাথে তুলনা করেছিলো। তারাটিও তেমনই ভেবে উড়ে গেলো দূরে। গেলো আশয্যা নদীচর আমাকে ফেলে। বনে বনে আমার পাশে হাঁটতে হাঁটতে কেউ কথা বলে। বলে অশোকের বল্কলের রূপ আমার দেহের মতন গাঢ়। গাছটির ভিতরে একটি দীর্ঘ নদী আছে, রঙের নদী।
নদী শেষে রাত্রির গল্প দুলে। তখন তারাটি ফেরারি স্বপ্ন। আমার চোখে ভাসছিলো তোমার মুখ। আমার চোখে তখন তুমি। তুমি হুডখোলা রিকশায় উড়ে যাচ্ছো পুনর্বার অলকায়। তোমার চুল উড়ছে এলোমেলো হাওয়ায়। তুমি তখন হলুদ জামা। জামার খাপে লুকিয়ে রেখেছো সমুদ্র। লুকিয়ে রেখেছো সমুদ্র আর রোদের শৃঙ্গার। তুমি তখন তিমিরাহত অনিন্দ্য। তুমি তখন নির্ঝর গায়ত্রী, অবিরাম বেজে যাচ্ছো। বেজে যাচ্ছো বাদামি পাতার শীৎকারে। তুমি তখন হাসছিলে ঝরাপাতাদের সঙ্গে। তুমি ভাসমান মৃত্যুর সহোদর বোন তখন। তুমি তখন কাঁদছো নীরবে। তোমার আস্তিনে শিশির ফুটে আছে। শিশির মানে গোপন কান্নার রং। কখনো দুঃস্বপ্ন দেখে আমাকে লিখছো প্রথম চিঠি। এই চিঠিই তখন তোমার প্রথম পাপ। কখনো কিশোর প্রেমিকের হাত ধরে তুমি পলাতক। পালিয়ে গিয়েছো পাহাড়ে, লুকিয়ে আছো অসূর্যম্পশ্যা। লুকিয়ে আছো নবীন বালিকা নীরব রতিঘুম। মেঘদূত এসে তোমার কানে বলে গেছে আমার বাসনা। তুমি তখন আমার সমুখে দাঁড়িয়ে। তুমি ধূলিকণা। তুমি চির বৃষ্টির প্রতীক্ষা। তুমি তখন বিস্ময়ে থ। দেখছো আমার দুইটি চোখ হয়ে আছে অশোকের বন। আমি তোমাকে শোনালাম ওই পুষ্পের ইতিহাস, অভিশাপের পুরাণ। আর নিবেদন করলাম সাষ্টাঙ্গ কামনা।
দিন শেষ হয়ে আসে। উত্তরের বাতাসে লেগেছে রং। একটি পূর্ণিমার পর গাছে গাছে নামবে পাতা। নামবে ফুলের ভয়াল মিছিল। তখনও তুমি রামধনু যাতনায় থরথর। তখনও তুমি অনেক ঘুমের আশে বন্দনারত। বুনো কুকুরের চোখের রেকাবে স্বপ্ন কাঁপে। আমার কিছু করার নেই। আমার রক্তের ভিতর বাড়ছে ক্রমে শ্বেতকণা। আমাকে যদি মিথ্যে ভাবো, তোমার চোখে ছিলো না একদিনও বনের ছায়া।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।