আগামীকাল সাংবাদিক নির্মল সেনের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী
আগামীকাল বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও মুক্তিযোদ্ধা কমরেড নির্মল সেনের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় নির্মল সেন স্মৃতি সংসদ এক স্মরণ সভার আয়োজন করেছে।
বর্ষিয়ান এ সাংবাদিক ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ৮৩ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন। মৃত্যুর আগে তিনি তার দেহ চিকিৎসাশাস্ত্রের উৎকর্ষের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার জন্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করে যান।
নির্মল সেন ১৯৩০ সালের ৩ আগস্ট গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার দিঘীরপাড় গ্রামে সম্ভ্রান্ত এক হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। মাতা লাবণ্য প্রভা সেনগুপ্ত। তবে তিনি ঝালকাঠি জেলায় পিসির বাড়িতে বড় হয়েছেন। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম।
ঝালকাঠি জেলার কলসকাঠি বিএম একাডেমি থেকে ১৯৪৪ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি প্রবেশিকা পাস করেন। বরিশাল বিএম কলেজ থেকে আইএসসি করেন ১৯৪৬ সালে। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগ হলে নির্মল সেনের পিতা তার মা, ভাইবোনদের নিয়ে ভারতে চলে যান। জন্মভূমির প্রতি অকুণ্ঠ ভালবাসার কারণে তিনি মাতৃভূমিতেই থেকে যান। ১৯৪৮ সালে বিএসসি পড়ার সময় ছাত্র আন্দোলন করতে গিয়ে রাজবন্দী হিসেবে গ্রেফতার হন, ছাড়া পান ১৯৫৩ সালে। কারাবন্দী থাকার কারণে বিএসসি পরীক্ষা দিতে না পেরে পরবর্তীতে ১৯৬১ সালে জেলে থেকেই বিএ পাশ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ করেন।
১৯৪২ সালে ৯ম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে নির্মল সেনের রাজনৈতিক জীবন শুরু। কলেজ জীবনে তিনি অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আরএসপিতে যোগ দেন। তিনি দীর্ঘ দিন শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রাজনীতি করতে গিয়ে নির্মল সেনকে জীবনের অনেকটা সময় জেলে কাটাতে হয়েছে। বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট এবং তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি গঠনে তার নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রয়েছে। ২০০৮ সালে গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হন। আমৃত্যু তিনি এ পার্টির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
লেখক হিসেবেও নির্মল সেনের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তার লেখা পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ, মানুষ সমাজ রাষ্ট্র, বার্লিন থেকে মস্কো, মা জন্মভূমি, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই, আমার জীবনে ৭১’র যুদ্ধ, লেনিন থেকে গর্বাচেভ, আমার জবানবন্ধী উল্লেখযোগ্য। নিজ বাড়িতে একটি মহিলা কলেজ স্থাপন করা তাঁর জীবনের শেষ ইচ্ছা ছিল। জীবদ্দশাতেই তিনি কলেজটির জন্য তাঁর বাড়ির ১ একর ৫০ শতক জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। কলেজটির নামকরণ করা হয়েছে সাংবাদিক নির্মল সেন মহিলা কলেজ।
নির্মল সেনের সাংবাদিকতা বা লেখালেখি শুরু হয় ৮ম শ্রেণিতে পড়াকালীন ‘কমরেড’ পত্রিকার মধ্যদিয়ে। ১৯৫৬ সালে তিনি পেশাদার সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। কাজ শুরু করেন দৈনিক জেহাদে। ১৯৬১ সালে ইত্তেফাক পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৪ সালের ৬ অক্টোবর দৈনিক পাকিস্তান, পরবর্তীতে দৈনিক বাংলা পত্রিকায় একটানা ৩৩ বছর সাংবাদিকতা করেন। প্রেস ট্রাস্টের এই পত্রিকাটি ১৯৯৭ সালে বন্ধ হওয়ার দিন পর্যন্ত তিনি এ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্মল সেন সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আগরতলা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধকালীন তিনি একাধিকবার আগরতলা থেকে ঢাকায় এসে তরুণদের সংগঠিত করেন এবং ভারতের আগরতলায় আরএসপির সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেন।
১৯৭২-৭৩ সালে নির্মল সেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও ১৯৭২-৭৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য ছিলেন। এছাড়াও নির্মল সেন প্রায় ৮ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অতিথি শিক্ষক ছিলেন।
সাংবাদিকদের নেতা হিসেবে তিনি ভারত, জার্মান, রাশিয়া, হাঙ্গেরি, নেপাল, যুগোস্লোভিয়া, চেকোস্লোভেকিয়া এবং রাজনৈতিক নেতা হিসেবে ব্রিটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, সুইজারল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, চীনসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।