- হোম
- >
- কৃষিজ ও প্রাণিজ
- >
- ছাতকে ব্রি-হাইব্রিড ধান চাষের বিপ্লব
ছাতকে ব্রি-হাইব্রিড ধান চাষের বিপ্লব
এলাকায় ধান চাষের জমি দিন দিন কমছে আর বাড়ছে জনসংখ্যা। প্রতিবছর প্রাকৃতিক বন্যা ও খড়ার কারণে কৃষক প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আরেক দিকে কৃষকদের কৃষি কাজে খরচ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাঙ্কিত ফল না পাওয়ার কারণে অনেকেই কৃষিক্ষেত্র থেকে সরে যাচ্ছে। এ কথা গুলো ভেবে চিন্তে আধুনিক চাষ পদ্ধতির ও উন্নত মানের বীজের মাধ্যমে অধিক পরিমান ধান ফলনের বিপ্লব ঘটাতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষক মতিউর রহমান সাদিক। তিনি ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের বদিরগাঁও গ্রামের মরহুম আব্দুল হাই’র পুত্র।
সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের সু-পরামর্শ নিয়ে তিনি দীর্ঘ ৯ বছর থেকে কৃষি কাজ করে যাচ্ছেন। ব্রি-হাইব্রীড ধান ও ব্রি’র উৎপাদিত উচ্চ ফলনশীল আধুনিক জাতের ধান চাষ করে বীজ উৎপাদন করে আসছেন প্রায় দু’বছর ধরে। এসব চাষাবাদে তিনি ভালো ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তার বিশ্বাস একদিন সে ছাতকসহ সুনামগঞ্জ জেলায় ব্রি-হাইব্রিড ধান ও ব্রি’র উৎপাদিত উচ্চ ফলনশীল আধুনিক ধান উৎপাদন করে কৃষক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হবেন। ইরি ধান নয় ব্রি-ধান বলুন, ভিত্তি বা প্রত্যায়িত বীজ দিয়ে চাষাবাদ করুন” এই স্লোগানকে প্রাধান্য দিয়ে কৃষকদের মাঝে ব্রি-হাইব্রিড ধান চাষের বিপ্লব ঘটাতে উৎসাহ যোগিয়ে যাচ্ছেন কৃষক সাদিক।
উফশী জাতের ধান ফলনের চেয়ে হাইব্রিড জাতের ধান উৎপন্ন হবে বেশী। খরচ একটু বেশী হলেও হাইব্রিড জাতের ধান ফলনে কৃষক অতি লাভবান হবে। এলাকার মাটি ও পরিবেশ, আর্থ সামাজিক অবস্থায় যুগ-উপযোগি ও সঠিক মানের অনেকগুলো জাতের ধান নির্বাচন করে চাষ করলে রোগ-বালাই এবং প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবেলা করে ফলন ভালোই হয়। ব্রি-হাইব্রিড ধান-৪ এফ ওয়ান জাতের ধান বৃহত্তর সুনামগঞ্জ জেলায় রোপা আমন মৌসুমে প্রথম বারের মতো পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করে ৬৫ শতাংশ সফলতা দেখেছেন তিনি।
ব্রি হাইব্রিড জাতের ধান বন্যা মুক্ত এলাকায় রোপা আমন চাষের অনুকূল পরিবেশে চাষাবাদের জন্য উপযোগী। এ বার পর পর দু’বন্যা এবং খড়ায় ৩৫ শতাংশ ক্ষতি হয়। ক্ষতি না হলে প্রতি বিঘা জমিতে ২১ মন ধান উৎপাদন হতো। রোপা আমন রোপন মৌসুমে ৪২বিঘা জমিতে ১১জাতের ধান চাষাবাদ করেন। এর মধ্যে ব্রিডার বীজ বি আর ১১, ২৩, ব্রি ধান ৩১, ৩২, ৩৪, ৩৯, ৪৯ জাতের ধান বীজ থেকে চাষাবাদ করে ভিত্তি বীজ ২১টন, ভিত্তি বীজ ৫২, ৫৬, ৫৭ জাতের ধান বীজ থেকে চাষাবাদ করে মান ঘোষিত ৫ টন বীজ উৎপাদনের কথা ছিল।
রোপা আমন মৌসমে ৪২ বিঘা ধান চাষ করতে খরচ হয়েছিল প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা। বন্যা ও খড়ায় সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তবোও তিনি ঘরে বসে নেই। বর্তমান বোরো মৌসুমে কৃষক মতিউর রহমান সাদিক ৪৮বিঘা জমিতে ১৫ জাতের ধান চাষাবাদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর মধ্যে ব্রিডার বীজ ব্রি-ধান ২৮, ২৯, ৫৮ জাতের ধান ১৯ বিঘা জমিতে চাষ করবেন। এই ধান চাষের ফলে যে ফলন পাওয়া যাবে তা থেকে ভিত্তিবীজ সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া ২৯ বিঘা জমিতে বি আর ৯, ১৪, ১৭, ১৯ ব্রি-ধান ২৮, ২৯, ৫০, ৫৫, ৫৮, ৬০, ৬৪ জাতের ধান চাষ করবেন। এ গুলো থেকে মান ঘোষিত বীজ সংগ্রহ করবেন। ইতোমধ্যে হাইব্রিড ধান বীজ উৎপাদনের জন্য ব্রি-হাইব্রিড ধান ৩ সহ উপরোল্লেখিত সকল জাতের বীজ বপন করেছেন। বি আর ১ থেকে ব্রি-ধান ৬৪ পর্যন্ত ২৭জাতের ও ব্রি-হাইব্রিড ধান ১, ২, ৩ ও প্রস্তাবিত জাত ৫ এর ধান প্রদর্শনীর জন্য রোপন করবেন।
এদিকে গত সোমবার দুপুরে সাদিকের গ্রাম বদির গাঁওয়ে ব্রি-হাইব্রিড-৪ এফ ওয়ান ধানের ফলন কর্তন পরিদর্শন করেন উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার নজরুল ইসলাম, উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আবদুল হামিদ, আনিসুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন, সফল কুমার শর্মা। এ সময় স্থানীয় কৃষকরাও উপস্থিত ছিলেন।
সরকার অনুমোদিত বীজ উৎপাদন কারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আরাফাত সীড’র স্বত্বাধিকারী মতিউর রহমান সাদিক জানান, এলাকার কৃষকরা যুগযুগ ধরে চাষাবাদ করে ভালো কোন ফলন পাচ্ছেন না, যার ফলে অনেকেই কৃষি ক্ষেত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। খাদ্যের চাহিদা মেটাতে হলে বর্তমানে হাইব্রিড ধান চাষাবাদের বিকল্প নেই। এতে কৃষক লাভবান হবে, অন্যদিকে খাদ্যের চাহিদা কিছুটা হলেও পূর্ণ হবে। বাহিরেও খাদ্য শস্য রপ্তানী করা যাবে। অন্যের উপর নির্ভর করে আমদানী করতে হবে না। কৃষকদের উৎসাহিত করতে তিনি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন, “ইরি ধান নয় ব্রি-ধান বলুন, ভিত্তি বা প্রত্যায়িত বীজ দিয়ে চাষাবাদ করুন।”
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।