বিএনপি চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা ডাঃ জাহিদ হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে স্ত্রী ও দু’ সন্তানকে রেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রে গিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তখন কি কেউ জানতো বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দী দশা থেকে এনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসিয়েছেন। 

রাজনীতিবিদ কথা বললে তাকে রাজাকার অথবা রাষ্ট্রদ্রোহী অথবা তার বিরুদ্ধে ২৫ টি মামলা অন্তর্ভূক্ত করা হয়। তারেক রহমান লন্ডনে যে বক্তব্য দিয়েছেন, ওনার বক্তব্যে মিথ্যা কিছু হয়নি, আপনারা দয়া করে বক্তব্য দিয়ে তা খণ্ডন করুন। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে এত নোংরা ভাষায় সমালোচনা করেন কিন্তু কোন কথা খণ্ডন করতে পারে না। 

তারেক রহমান পরে বিবৃতিতে বলেছেন আপনারা (আ.লীগ) ভালোভাবে কথা বলুন, দেশের মানুষ ভালো কিছু শিখবে, আমরাও শিখবো। ৯৬ সনে দেলোয়ার হোসেন সাইদী সাহেব খুব ভালো লোক ছিলেন। কারণ তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আ.লীগের সাথে জামায়াতে ইসলাম আন্দোলন করেছিল। আজকে সাইদী সাহেব খুব খারাপ লোক, কারণ সাইদী সাহেব বিএনপির সাথে আন্দোলনে আছে। এজন্য তাকে বলা হয় রাজাকার এবং আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমকে বলা হয় রাজাকার। অর্থাৎ  যে যখনই এই আ.লীগ, এই নব্য স্বৈরাচারীর বিপক্ষে, দেশের পক্ষে কথা বলবেন তখনই তাকে বিভিন্নভাবে রং লাগানো হচ্ছে। 

ঝালকাঠি জেলা বিএনপির প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে জেলা বিএনপির সভাপতি, বিএনপি চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিষ্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম এতে সভাপতিত্বে করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্যারিষ্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম সহধর্মিনী ফারজানা ওমর। 

এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল মন্টু, অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর বাবুল, আঃ ওয়াহেদ মৃধা, রফিকুল ইসলাম মিরন সিকদার, নিজাম উদ্দিন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান খান বাপ্পী, যুববিষয়ক সম্পাদক রবিউল হোসেন তুহিন, শহর সভাপতি অনাদী দাস, সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ দেলোয়ার হোসেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকত, যুগ্ম ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক সাজু, শ্রমিক দল সভাপতি টিপু সুলতান প্রমুখ। 

জাহিদ হোসেন আরো বলেন, আওয়ামী লীগ কথায় কথায় বলে বিএনপি নাকি মুক্তিযুদ্ধের দল নয়, এটা নাকি ক্যান্টনমেন্টের দল। বিএনপি নাকি এদেশের স্বৈরশাসক ও অগণতান্ত্রিক শাসন চায়। ১/১১ সরকার আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল ঘোষণা করে শেখ হাসিনা বলেছেন তারা যা কিছু করবে আ.লীগ ক্ষমতায় গেলে তার সমস্ত কাজের বৈধতা দেয়া হবে। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সংসদে দাড়িয়ে বলেছেন ওনাকে  (শেখ হাসিনা) বিষ খাইয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাকে যারা হত্যা করার চেষ্টা করেছিল তার বিরুদ্ধে কোন বিচার নেই এবং কোন তদন্ত নেই। 

এদেশের একদলীয়, অসাংবিধানিক, সেনা শাসন এসেছে তার প্রত্যেকটির সাথে আওয়ামী লীগ জড়িত। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে কি হয়েছে। ১৫৪ টি আসনে কোন লোক নেই, ৫ পার্সেন্ট ভোটার ভোট দিতে গেল না,  ভোট সেন্টারের কোথাও প্রিজাইডিং অফিসার, কোথাও কুকুর, কোথাও পুলিশ ঘুমাচ্ছে।  ভোট গ্রহণের ৩ দিন পরে তারা ঘোষণা দেয় তাদের ৪০ পার্সেন্ট ভোট কাস্ট হয়েছে। কেউ ভোট দিতে গেল না, কোন প্রার্থী পাওয়া গেল না। এদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছে। ২০ দলীয় জোটসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ কোন দল নির্বাচনে অংশ গ্রহন করল না। এ নির্বাচনের কোন নৈতিক বৈধতা নেই, যে সরকার জনগণ কর্তৃক মনোনীত নয়। 

এমন নির্বাচন নিয়ে আবার তারা (আ.লীগ) বলে ৫ বছরের পূর্বে কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। আজকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করছেন। তারা নির্মমভাবে ৭টি মানুষকে শুধু মেরেছে তা নয়, মেরে ২৪ টি করে ইট বেধে শীতলক্ষা নদীতে ডুবিয়ে দিয়েছে। এ কি নির্মমতা এটি পাকিস্তান আমলেও করে নাই। নির্মমতায় এ সরকার আগের সকল নির্মমতাকে ম্লান করে দিয়েছে। ৩ বছর পূর্বে ইলিয়াছ আলীসহ গত কয়েক মাসে ৬৪জন নেতাকর্মী হারিয়ে গেছে। তাদেরকে আমরা আর খুজে পাই না। গুম সংস্কৃতি বাংলাদেশে ছিল না, এটা কোথা থেকে আমদানি করা হল। জনজীবন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। আজকে এমন অবস্থার মধ্যে এমন একটি সরকার ব্যবস্থা প্রয়োজন, যে সরকার জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হবে। যে নির্বাচনে মানুষ অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। যে নির্বাচনে সকল দল অংশ গ্রহন করতে পারবে, যে খানে জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে। সে নির্বাচিত সরকার আপনাদের (জনগণের) কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। 

আজকে ফেলানী যখন ঝুলে থাকে, যখন প্রতিদিন বর্ডারে মানুষ মারা যায়, তিস্তা নদীর উপর বাধ দিয়ে সেখানে ২৪ চাকার গাড়ি চলে আমরা জানি না সে গাড়ির মধ্যে কি থাকে সরকার কোন ধরণের বাধা দেয় না এবং প্রতিবাদ করে না। আ.লীগ সরকার ঘোষণা দেয় আমরা ১০ হাজার মেঘাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করেছি, সেই বিদ্যুত কই, শীতের দিনেও চরম লোড শেডিং। সুন্দরবনের রামপালে ভারতের সাথে মিলে বিদ্যুত কেন্দ্র (পাওয়ার স্টেশন বেইজ) প্রতিষ্ঠা করবে। সুন্দরবনে তৈলবাহী ট্যাংকার ডুবার ৩ দিনেও উদ্ধারের কোন ব্যবস্থা নেয়নি। যখন গোটা সুন্দরবন বিপর্যয়ের মুখে তখন উদ্ধারের চেষ্টা করে। নৌ পরিবহন মন্ত্রি শাহজাহান খান বলেন এতে সুন্দরবনের তেমন কোন ক্ষতি হবে না। পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলছেন, তেল অপসারণ করা না হলে সুন্দর বনের অস্তিত্ব থাকবে না। 

পঞ্চম, অষ্টম, এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স/ডিগ্রি, মাস্টার্স’র প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। শিক্ষকদের কাছে বোর্ড থেকে চিঠি দেয়া হয় নম্বর বেশী দিয়ে পাশ করিয়ে দেয়ার। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিবে এবং যথাযথ নম্বর পাবে।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিপিএ ৫ প্রাপ্তরা ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে শতকরা ৯জন উত্তীর্ণ হয়েছে। মানুষকে দেখানো হচ্ছে বেশী বেশী পাশ করছে, বিদেশীদের দেখানো হচ্ছে শিক্ষার হার বেড়েছে। বাস্তবে শিক্ষার মান নিম্নমুখী, যার জন্য আ.লীগ সমর্থক ড. ইকবাল সাহেবরা শহীদ মিনার চত্ত্বরে অবস্থান ধর্মঘট করে।

 কলকাতার সকল টিভি চ্যানেল গ্রাম-গঞ্জে দেখানো হয় কিন্তু বাংলাদেশী কোন চ্যানেল সেখানে দেখানো হয় না। সাংস্কৃতিকভাবে আগ্রাসন করা হচ্ছে। যাতে আমরা আস্তে আস্তে দেউলীয়াতে পরিণত হই। কৃষকরা ধান উৎপাদন করে লক্ষ্যমাত্রা তো দূরের কথা উৎপাদিত খরচও পাচ্ছে না। পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়ান বর্ডার দিয়ে ধান আসছে এবং গত কয়েক মাসে ৫ লক্ষ টন চাল আমদানী করা হয়েছে। ৫০ হাজার টন চাল রপ্তানির নামে ৫ হাজার টন রপ্তানী করে লোক দেখানো অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। পোল্ট্রি খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। 

পার্শ্ববর্তী মায়ানমার এবং ইন্ডিয়ার চাপে দেশকে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। একজন আইনজীবী সে তার দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। একজন ছাত্র সে ভালভাবে পড়াশুনা করে ভাল মেধা নিয়ে ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সুযোগ পাচ্ছে না। 

এ প্রতিনিধি সম্মেলনের ব্যপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও বর্তমান কমিটির উপদেষ্টা মাহবুবুল হক নান্নু। 

তিনি বলেন, এ সম্মেলনে ব্যক্তি শাহজাহান ওমরের গুণকীর্তন করা হয়েছে। এটা জেলা বিএনপির প্রতিনিধি সম্মেলন নয়, এটা হয়েছে শাহজাহান ওমরের ব্যক্তিগত প্রতিনিধি সম্মেলন। কেন্দ্রীয় কমিটি এ সম্মেলনের ব্যপারে জানেন না। তাই বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ারকে আমন্ত্রণ করা হলেও তিনি তা বর্জন করেন।