পূর্ব সুন্দরবনে শেলা নদীতে মঙ্গলবার ভোরে ফার্নেস ওয়েল বোঝাই তেলের ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনায় আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত ট্যাঙ্কারটির মাস্টার (চালক) মোখলেসুর রহমানের (৫০) সন্ধান মেলেনি। নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি সুন্দরবনের নদী-খালে ছড়িয়ে পড়া জ্বালানী তেল।

এদিকে সরেজমিন ঘটনার ভয়াবহতা পরিদর্শনে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী জ্যাকবসহ বন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল দুপুরে হেলিকপ্টারে সুন্দরবনে আসছেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ডা. শামছুজ্জোহাও ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসছেন বলে প্রশাসনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে। 

ডুবে যাওয়া ট্যাঙ্কারটি উদ্ধারে বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) সহযোগিতা চেয়েছে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ। পাশাপাশি ঘটনা তদন্তে তারা নিজস্ব একটি তদন্ত দল গঠণ করেছে। ডুবে যাওয়া ট্যাঙ্কারটির মালিকানা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দুটি নৌযানে করে ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনা করা হচ্ছে। মংলাস্থ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের একটি দল ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে।

এই ঘটনায় ডুবে যাওয়া ট্যাঙ্কারের মালিক মেসার্স হারুণ এ- কোং এর ব্যবস্থাপক মো: গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে আঘাতকারী কার্গো এমভি টোটাল এর বিরুদ্ধে মংলা থানায় একটি মামলা করেছেন। পাশাপাশি সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ এই ঘটনায় ট্যাঙ্কার সাউদার্ন স্টার ৭ ও কার্গো জাহাজ টোটালের বিরুদ্ধে এক শত কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতির অভিযোগ এনে মংলা থানায় পৃথক একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছে। মংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

বিআইডাব্লিউটিএ’র উদ্ধৃতি দিয়ে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আমীর হুসাইন চৌধুরী জানান, নারায়ণগঞ্জ ও বরিশাল থেকে বিআইডাব্লিউটিএ’র উদ্ধার জাহাজ ‘প্রত্যয়’ ও ‘নির্ভীক’ ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার রাতে রওনা হয়েছে। আজ বুধবার সন্ধ্যার নাগাদ জাহাজ দুটি ঘটনাস্থলে পৌছাতে পারে বলে তিনি জানান।

এদিকে জোয়াভাটার কারণে তেলের আস্তর সুন্দরবনের ভেতরে নদী-খালে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবনের গাছপালা ও জলজ সম্পদের মারাত্মক ক্ষতির আশংকা করছেন পরিবেশবীদরা। মঙ্গলবার ভোর থেকে বুধবার বেলা ১২ টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চারটি জোয়ার-ভাটার প্রবাহে তেলবাহী পানি সুন্দরবনের বড় একটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।

ডিএফও আমীর হুসাইন চৌধুরী বলেন, ‘জোয়ার ভাটার টানে তেলবাহী পানি বনের ভেতরের শাখা খালগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিটি জোয়ারেই তেল ছড়িয়ে পড়া এলাকা বাড়তে পারে। এটা এখনই সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না। আমরা বনের অনেক ভেতরে অবস্থানরত আমাদের কর্মীদের মাধ্যমে এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনা তদন্তে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো: বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করেছি। অপর দুই সদস্য হলেন চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ এবং ঢাংমারি স্টেশন কর্মকর্তা প্রহ্লাদ চন্দ্র রায়। তদন্ত কমিটিকে তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তারা সুন্দরবনের উপর  এই তেল নিঃস্বরণের প্রভাবগুলোও প্রাথমিকভাবে নিরুপণ করারও চেষ্টা করবেন।

মঙ্গলবার ভোর ৫ টার দিকে শেলা নদীর বাদামতলা নামক স্থানে অবস্থানরত ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামে ঐ তেলবাহী ট্যাঙ্কারটিকে এমভি টোটাল নামে একটি পণ্যবাহী কার্গো পেছন থেকে ধাক্কা দিলে ট্যাঙ্কারটি ডুবে যায়। এতে ঐ ট্যাঙ্কারে থাকা তিন লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস তেল নদীতে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় নিখোঁজ হন ট্যাঙ্কারের মাস্টার মোখলেসুর রহমানের (৫০)। ট্যাঙ্কারটি খুলনার পদ্মা তেল ডিপো থেকে ঐ জ্বালানী নিয়ে গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। ট্যাঙ্কারে থাকা অপর ছয় জন সুকানী ও শ্রমিক সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন।

তেল ছড়িয়ে পড়ায় হুমকিতে ৬ প্রজাতির ডলফিনসহ সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্য