পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের মধ্যবর্তী শ্যালা নদীর মৃগামারী এলাকায় মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় তলা ফেটে ‘এমভি ওটি সাউদার্ন স্টার সেভেন’ নামের একটি তেলবাহী অয়েল ট্যাংকার মঙ্গলবার ভোররাতে ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া ট্যাংকারে থাকা ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার তেল ছড়িয়ে পড়ছে। এতে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ গাছের শ্বাসমূলের তেলের আস্তরণ পড়ছে। যে স্থানে জাহাজটি ডুবি হয়েছে, সেই এলাকায় বিলুপ্ত প্রায় ইরাবতী ডলফিনসহ ৬ প্রজাতির ডলফিনের অভয়াশ্রম। 

পানিতে তেল ছড়িয়ে পড়ায় ডলফিন ও সুন্দরবনের সমৃদ্ধ মৎস্যভান্ডার-সহ অন্যান্য জলজ প্রাণী-গাছপালা ক্ষতির সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য চরম অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে বলে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও সুন্দরবন বনবিভাগের কর্মকর্তারা আশংকা প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার ভোররাত ৪ টার দিকে ঘন কুয়াশায় পেছন দিক থেকে ‘এমভি টোটাল’ নামে অপর একটি ট্যাংকার এসে ধাক্কা দিলে নোঙর করা ওই তেল ভর্তি ট্যাংকারটি ডুবে যায়। এই ঘটনার পর ট্যাংকারের মাষ্টার মোকলেসুর রহমান নিখোঁজ রয়েছে। পুলিশ ও বনবিভাগ দুর্ঘটনার জন্য দায়ি এমভি টোটাল নামের জাহাজটি আটকের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে শরণখোলা থানা পুলিশ জানিয়েছে। 

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আবুল কাশেম মাষ্টার জানান, মেসার্স হারুন এন্ড কোং এর মালিকানাধীন তেলবাহী এই জাহাজটি গত সোমবার খুলনার খালিসপুর ডিপো থেকে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৮ লিটার তেল ভর্তি করে গোপালগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়। পথিমধ্যে সুন্দরবনের শ্যালা নদীর মৃগমারী এলাকায় যাত্রাবিরতি করছিলো। 

মঙ্গলবার ভোররাত ৪ টার দিকে নোঙর করে থাকা তেল ভর্তি জাহাজটিকে ঘন কুয়াশার মধ্যে পেছন দিক থেকে আসা এমভি টোটাল জাহাজটি ধাক্কা দেয়। এতে তলা ফেটে তেলবাহী  জাহাজ ওটি সাউদার্ন স্টার সেভেন ঘটনাস্থলে ডুবে যায়। এতে জাহাজের মাষ্টার মোকলেসুর রহমান (৫০) নিখোঁজ হন। ওই ট্যাংকারে থাকা বাকী ৭ সদস্য সাঁতরে কূলে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। 

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ ও মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, তাদের কাছে পানিতে ভাসমান ও গাছের শ্বাসমূল থেকে তেল চুঁসে নেয়ার কোন ‘অয়েল সুইপার’ জলযান না থাকায় ডুবন্ত তেলবাহী অয়েল  ট্যাংকারের তেল অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। ওয়ার্ল্ড  হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনে এ কারনে দ্রুত তেল ছড়িয়ে পড়ছে। এ রিপোর্ট পাঠানো পর্যন্ত ডুবে যাওয়া তেলবাহী অয়েল  ট্যাংকারটি সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে  বাংলাদেশ-ভারত আর্ন্তজাতিক বিকল্প এই নৌরুটটি।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পরিবেশবিদ ড.সরদার শহিদুল ইসলাম জানান, তেলবাহী ট্যাংকার ফেটে যাওয়ায় সুন্দরবনের নদ-নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়ায় সুন্দবনের জীব-বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে। এছাড়া এই তেল জোয়ার ভাটার সাথে বনের অভ্যান্তরে তেলের প্রলেপ জমে গেলে বনের মৎস্য সম্পদ ও পশু-পাখিসহ পরিবেশের মারত্মক ক্ষতি হতে পারে ।  

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ বাগেরহাটের ডিএফও মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান,  জাহাজটি আটকের চেষ্টা চলছে। ডুবে যাওয়া জাহাজ সনাক্ত ও নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধারে সকাল ১০ টা থেকে স্থানীয় ডুবুরী দল, কোস্টগার্ড ও সুন্দরবন বনবিভাগ অভিযান শুরু করেছে। নৌবাহিনীও ডুবে যাওয়া জাহাজ সনাক্তের কাজ করছে।  নদীর পানিতে তেল ছড়িয়ে পড়ায় বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতি ডলফিনসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন, মৎস্য সম্পদসহ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যে চরম হুমকিতে পড়েছে। তবে কি পরিমান জায়গার বন ও পানিতে তেল ছড়িয়ে পড়েছে তা তাৎক্ষনিক ভাবে জানাতে পারেনি ডিএফও। এ ঘটনার জন্য দায়ি পরিবেশ দূষণকারী জাহাজটির বিরুদ্ধে মামল করা হবে বলে তিনি জানান।

শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী আব্দুস ছালেক জানান, ঘটনার পর পরই বনবিভাগের সঙ্গে তাফালবাড়ী ফাঁড়ি ইনচার্জ (আইসি) মো. আবুল বাশারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল অভিযান শুরু করেছে।