- হোম
- >
- কৃষিজ ও প্রাণিজ
- >
- ঝিনাইদহ বউ বাজার এখন বিষমুক্ত সবজির বাজার
ঝিনাইদহ বউ বাজার এখন বিষমুক্ত সবজির বাজার
খাব না আর বিষযুক্ত শাক-সবজি, ফলমূল কিন্তু কি করা যায়? কি করলে এলাকার মানুষের হাতে পৌঁছাবে বিষমুক্ত এসব খাবার। মাথায় চিন্তা এলো নীলিমা নামের এক কৃষাণীর। হঠাৎ করেই মনে হলো, নিজেরা যদি করি নিজেদের জায়গা বা বাড়ির উঠানে সবজি চাষ। নিজেরাই যদি হই ক্রেতা-বিক্রেতা তবে ব্যাপারটা কেমন হবে। এরপর এলাকার আরো বেশ কয়েক মহিলাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা, বুদ্ধি, সলাপরামর্শ।
সিদ্ধান্ত হলো এখন থেকে নিজেদের উৎপাদিত বিষমুক্ত পণ্যের বাজার বসবে প্রতি বৃহস্পতিবার তিনটার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সেখানে এলাকার বউ আর কৃষাণীরা বিক্রেতা। তাদের ক্রেতা শুধু নারীরাই নয় এলাকার সবাই। আর পণ্যের দামও অন্যান্য বাজারের চেয়ে কম। বাজারের নাম দেয়া হলো ‘বিষমুক্ত সবজির বউ বাজার’। তবে বাজারে যে যেই শাক-সবজি আনুক তা সেগুলো হতে হবে বিষমুক্ত। সেই নিয়ম মেনেই বৃহস্পতিবার বিকেল হলেই ঝুড়িতে, প্যাকেটে করে নিজেদের উৎপাদিত সবজি নিয়ে এসে দোকান দিয়ে বসছেন তারা। ঘটনাটি তিন মাস আগের। আর এই তিন মাসেই বউ বাজার পরিণত হয়েছে এলাকাবাসীর কাছে একটি বিশ্বস্ত নাম। দিন দিন এর পরিধি এবং চাহিদা বেড়েই চলেছে।
যেখানে ফরমালিন, কীটনাশকযুক্ত শাক-সবজি-ফলমূল বন্ধ এবং নিরাপদ খাদ্যের দাবিতে মানববন্ধন, আলোচনাসভা, সেমিনার করছে আর তখন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের নিয়ামতপুর ইউনিয়নে নারী আর কৃষাণীদের উদ্যোগে জৈব পদ্ধতিতে (অর্গানিক কীটনাশকমুক্ত) উৎপাদিত হচ্ছে শাক-সবজি, ফলমূল। আবার সেগুলো তারাই বিক্রি করছেন। নিজেদের বাড়ির আঙিনায় তারা শাক-সবজি চাষ করছেন। এছাড়া প্রাকৃতিক কৃষি নামের একটি সংগঠন তাদের চাষ করা এসব শাক-সবজি ঢাকার বিভিন্ন বাজারে পাঠানোর উদ্যোগও নিয়েছে।
সরেজিমেন গিয়ে দেখা যায়, প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেলে পূর্ব বলরামপুর গ্রামে খোলা আকাশের নিচে বাজারটি বসে। বাজারে কারো দোকানে থাকে লাউ, কারো দোকানে কলা, বরবটি, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া আবার কেউ রাখেন আলু, লালশাক, পুইশাক, পটোল, পালং শাক কিন্তু নিয়মানুযায়ী। যে যাই আনুক তা হতে হবে বিষমুক্ত। সেই নিয়ম মেনেই বৃহস্পতিবার বিকেল হলেই ঝুড়িতে, প্যাকেটে করে সবজিগুলো নিয়ে দোকান দিয়ে বসেন তারা।
নিয়ামতপুর ইউনিয়নের বলরামপুর, পূর্ব বলরামপুর, ভোলপাড়ার প্রায় অর্ধশতাধিক গৃহিণী বা কৃষাণী বাড়ির আঙিনায় উৎপাদন করছেন এসব ফসল। দাম ভালো পাওয়ায় তারা বেশি করে উৎপাদনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
কৃষাণী নিলিমা জানান, কালীগঞ্জের একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে কীভাবে জৈব পদ্ধতিতে (কীটনাশকমুক্ত) ফসল উৎপাদন করা যায়। তাদের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথম অবস্থায় তারা বাড়ির আঙিনায় পরিত্যক্ত জমিতে এসব ফসল উৎপাদন করছেন। তিনি আরো জানান, তারা মূলত তাদের সবজি উৎপাদনের জন্য কম্পোস্ট সার আর বালাইনাশক ব্যবহার করেন পোকা দমনে। তিনি আরো দাবি করেন, তাদের উৎপাদিত ফসল শতভাগ বিষমুক্ত।
সবজি ক্রেতা প্রাকৃতিক কৃষির উদ্যোক্তা তপু রায়হান জানান, দেশে উৎপাদিত শতকরা ৯৯ ভাগ শাক-সবজিই বিষযুক্ত। এলাকার নারীদের উদ্বুদ্ধ করেছি তারা বিষমুক্ত শাকসবজি বাড়ির আঙিনায় উৎপাদন করে তাদের কাছে বিক্রি করলে বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দাম দেয়া হবে। যার পরিপ্রেক্ষিতে তারা উৎপাদনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাদের কাছ থেকে বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে কিনছি। আর বিষমুক্ত শাক-সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ঢাকায়।
নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজেদুল হক লিটন জানান, আমরা খুবই খুশি ইউনিয়নের গৃহিণীরা বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের কাজ করছেন। এই বাজারটি বড় আকারে হওয়ার ব্যাপারে আমি তাদের সার্বিক সহযোগিতা করব।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তিনি এসব গৃহিণী কৃষাণীদের সাধুবাদ জানিয়েছেন। কারণ তারা বাড়ির কাজ সেরে দেশের মানুষের জন্য বিষমুক্ত শাক-সবজি উৎপাদন করছে।
তিনি বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেব যেন তারা গোটা উপজেলায় অন্য গৃহিণীদের এভাবে বাড়ির আঙিনা ফেলে না রেখে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের পরামর্শ দেন। তাহলে নিজের পরিবারের সবজির চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয় করতে পারবেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।