- হোম
- >
- ইতিহাস-ঐতিহ্য
- >
- আজ যশোর মুক্ত দিবস
আজ যশোর মুক্ত দিবস
আজ ৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে যশোর জেলা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়েছিল। যশোরেই প্রথম পতপত করে উড়েছিল বিজয়ী বাংলাদেশের রক্ত সুর্য খচিত গাঢ় সবুজ পতাকা।
এদিন বিকেলের আগেই মুক্তিসেনাদের সহযোগিতায় ভারতীয় মিত্রবাহিনী পৌঁছে যায় যশোর ক্যান্টনমেন্টে। কিন্তু ক্যান্টনমেন্ট তখন খালি। পাকসেনারা আগেই ক্যান্টনমেন্টে ছেড়ে চলে গেছে।
মুক্তিসেনারা দেখতে পায় খাবার টেবিলে প্লেটে খাবার। পড়ে আছে ভাত-তরকারি। অর্থাৎ জীবন বাঁচাতে খাবার ফেলেই নিরাপদ সন্ধানে পাকসেনারা পালিয়ে যায়।
১৯৭১ সালের ৩ মার্চ যশোর কালেক্টরেটের সামনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে যশোরবাসী শপথ নেয় স্বাধীনতা সংগ্রামের। এরপর শহরের রাজপথে বের করে জঙ্গি মিছিল। সে মিছিলে গুলি চালালে শহীদ হন চারুবালা ধর। স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনিই যশোরের প্রথম শহীদ।
এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই প্রতিরোধের জন্য যশোর সংগঠিত হতে থাকে। নেতৃত্ব দেয় সংগ্রাম পরিষদ। সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতে থাকে ছাত্র, যুবক ও মহিলাদের।
২৬ মার্চ রাতে পাকিস্তানী জল্লাদ বাহিনী তদানীন্তন জাতীয় সংসদ সদস্য মশিউর রহমানকে তার বাসভবন থেকে ধরে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে খুন করে। ২৯ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যশোর ছেড়ে সেনানিবাসে চলে আসে।
৩১ মার্চ নড়াইল থেকে হাজার হাজার লোকের এক বিশাল মিছিল আসে। শহরবাসীর সাহায্যে সশস্ত্র মিছিলটি হামলা চালায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে। মুক্তি পায় সব রাজবন্দী। এর আগে ৩০ মার্চ যশোর সেনানিবাসের বাঙালি সৈনিকেরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে ক্যাপ্টেন হাফিজের নেতৃত্বে। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সঙ্গে প্রচণ্ড যুদ্ধে লেফটেন্যান্ট আনোয়ারসহ তখন অনেকেই শহীদ হন।
জুলাই মাস থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের গতিধারা পাল্টে যায়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা যশোর শহর ও অন্যান্য এলাকায় হানাদার বাহিনীর অবস্থানগুলোতে প্রচন্ড আক্রমণ চালাতে থাকে। যশোর মুক্তিযুদ্ধের ৮নং রণাঙ্গন ছিল এবং এর কমান্ডার ছিলেন তদানীন্তন মেজর মঞ্জুর। অন্যদিকে, পাক বাহিনীর মোতায়েন ছিল ১০৭নং ব্রিগেড। এর কমান্ডার ছিলেন বিগ্রেডিয়ার হায়াত খান। যশোর সেনানিবাস থেকে শত্রু বাহিনী ৬টি জেলা নিয়ন্ত্রণ করত।
২০ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনী যশোর সেনানিবাস দখলে অভিযান শুরু করে। শত্রু বাহিনীর পশ্চিমাঞ্চালের শক্তিশালি ঘাঁটি চৌগাছা ঘিরে ফেলে সম্মিলিত বাহিনী। মিত্র বাহিনীর গোলার আওতায় আসে যশোর সেনানিবাস। ২২ নভেম্বর রাতে পতন হয় চৌগাছার। হানাদার বাহিনী সলুয়া বাজারে তৈরি করে অগ্রবর্তী ঘাঁটি। এ সময় যশোর সেনানিবাসের তিন দিকেই মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী শক্ত ঘাঁটি গেড়ে বসে। এ অঞ্চলের পাক বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার হায়াত খান প্রাণ ভয়ে তার অফিস স্থানান্তর করেন খুলনায়। প্রতিরোধ যুদ্ধের শেষ অভিযান শুরু হয় ৫ ও ৬ ডিসেম্বর। যুদ্ধে টিকতে না পেরে পাক বাহিনী পালিয়ে যায় খুলনার দিকে।
৬ডিসেম্বর দুপুরের পর থেকেই মুক্তি বাহিনী যশোর শহরে প্রবেশ করে। যুদ্ধবিধ্বস্ত মুক্ত শহরে ওড়ে স্বাধীন দেশের পতাকা।
পাকিস্তানী হানাদার ও তাদের সহযোগী জামায়াতে ইসলামী রাজাকার আল-বদরদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন আইনজীবীদের মধ্যে মশিউর রহমান, সুশীল কুমার রায়, সৈয়দ আমির আলী ও আব্দুর রসিদ খান, বাঘারপাড়া থানা আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আব্দুল কাদের, আবু তালেব, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ সুলতান অধ্যাপক নবীন চন্দ্র, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নারায়ন সাহা, সমাজ সেবী সুধির ঘোষ, নাট্য অভিনেতা অমল সোম, চিকিৎসক ওবায়দুল হক, মাহফুজ আসাদ, তোজো, মানিক, শান্তি, নজরুলসহ অসংখ্য বাঙালী।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।