মালয়েশিয়া সফর কার্যকর ও সফল: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সদ্য সমাপ্ত মালয়েশিয়া সফরকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ ও কার্যকর হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি মনে করেন, এ সফরের ফলে দু’দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী ও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তিনি বলেন, ‘সার্বিক বিবেচনায় এ সফরটি ছিলো অত্যন্ত সফল ও কার্যকর। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আগামি দিনগুলোতে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসার ঘটবে এবং একই সাথে জনশক্তি রফতানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে এ সফর সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এ সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিলো বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরে গতিশীল করা এবং দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা বাণিজের উন্নয়ন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
শেখ হাসিনা বলেন, সফরের প্রথম দিন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সামী ভেলু আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন খাত যেমন আবাসন, জ্বালানি এবং রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগের আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বিশেষ দূতকে বাংলাদেশের নিন্ম আয়ের মানুষের জন্য কামরাঙ্গীরচরে বহুতল আবাসন নির্মাণ প্রকল্পে বিনিয়োগে আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা গ্রহণ করেন।
একই দিন সন্ধ্যায় মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি মালয়েশিয়ার গাড়ি তৈরীর কোম্পানী প্রোটন-এর একটি কারখানা বাংলাদেশে স্থাপনের সম্ভাবনার বিষয়ে তাঁকে অবহিত করেন। এ ছাড়া সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী বাঙালীদের সাথে মতবিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩ ডিসেম্বর আমি মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ও বিনিয়োগকারীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হই। এ সভায় আমি বাংলাদেশের যোগাযোগ, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি, পর্যটন, আবাসন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি সরবরাহ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের জন্য পিপিপি’র আওতায় তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান জানাই। মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
একই দিন বিকেলে পুত্রজায়ায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর প্রতিনিধিদলের সাথে আমরা আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হই। অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে এ বৈঠকে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় হয়। এ আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং জনশক্তি রফতানির বিষয়গুলো বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়।
বৈঠকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার মধ্যকার ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সূচনা বক্তব্য দেন। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তির গোড়াপত্তনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৩ সালে মালয়েশিয়া সফরের মধ্যদিয়ে সূচিত হয়েছিলো বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য বৈষম্য হ্রাসের জন্য বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি পণ্য আমদানির অনুরোধ জানালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন। এ লক্ষ্যে আমি তাঁকে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে প্রস্তাবিত মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা (এফটিএ) কার্যকর করার অনুরোধ জানাই। তিনি এ বিষয়েও পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যকার যৌথ কমিশনের পরবর্তী বৈঠক যথাসম্ভব শিগগির আয়োজনের প্রস্তাব করল মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আগামী বছর মালয়েশিয়ায় বৈঠক অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া বিনিয়োগ ফোরাম (বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া ইনভেস্ট ফোরাম) গঠনেরও আহবান জানাই। আমি আশা করছি যৌথ কমিশনের পরবর্তী বৈঠকে এ বিষয়ে কার্যকর আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশী শ্রমিকদের অবদানের কথা উল্লেখ করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমানে সেখানে ২ লাখ ৯৯ হাজার বৈধ বাংলাদেশী সেবা, নির্মাণ ও অন্যান্য খাতে নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি জানান, মালয়েশিয়ার সারাওয়াক রাজ্যে ৬০ হাজার শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। যার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে ১২ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিককে ওই রাজ্যে নিয়োগের লক্ষ্যে একটি প্রটোকল স্বাক্ষরের বিষয়ে তাঁর সরকার সম্মতি জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আমি মালয়েশিয়ার সকল খাতে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগের অধিকতর সুযোগ সৃষ্টির আহবান জানাই।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৫ সালে আসিয়ানের চেয়ারম্যান হিসেবে মালয়েশিয়ার দায়িত্ব গ্রহণের প্রেক্ষিতে দু’দেশের আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র আরো প্রসারিত হবে বলে আমি মত প্রকাশ করি। আমি বাংলাদেশকে আসিয়ানের ডায়ালগ পার্টনার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে তাঁর সহযোগিতা চাই। তিনি এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। উল্লেখ্য, আমরা ২০১৩ সালে আসিয়ানের ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়া টেকনিক্যাল কো-অপারেশন প্রোগ্রাম (এমটিসিপি)-এর আওতায় বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী ছাত্রদের অধ্যয়নের আরো সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রদত্ত বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধি করার ব্যাপারে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আমাকে আশ্বাস দেন।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শেষে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে আংশিক ভিসা অব্যাহতি বিষয়ক একটি চুক্তি, পর্যটন ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে পৃথক দুটি সমঝোতা স্মারক এবং মালয়েশিয়ার সারাওয়াক রাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়।
এ সকল চুক্তির ফলে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে ১১-দফা বিশিষ্ট একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং তিনি তা গ্রহণ করেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।