- হোম
- >
- কৃষিজ ও প্রাণিজ
- >
- বীরগঞ্জে বানিজ্যিকভাবে কমলার চাষ
বীরগঞ্জে বানিজ্যিকভাবে কমলার চাষ
দিনাজপুরে বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষ শুরু হয়েছে। শখের বসে কমলা চাষ করে আশাতীত সাফল্য পাওয়ায় এখন অনেকে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদে এগিয়ে আসছেন। দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলায় কমলার চাষ কৃষকদের মাঝে আশার সঞ্চারণ জাগিয়েছে। এখানকার আবহাওয়া ও মাটি কমলা চাষে অনুকুল থাকায় অনেকেই কমলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সবুরে মেওয়া ফলে অথবা অপেক্ষার ফল মিঠা হয়, কথাটি মিলে গেছে বীরগঞ্জের মরিচা গ্রামের কৃষক মোঃ রজিবুল আজম চৌধুরীর কমলা গাছের সাথে।
১৯৮১ সালে শখ করে বাড়ির উঠানে একটি কমলা গাছ লাগিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর পর গাছটিতে ফল ধরে। এই ১২ বৎসর তিনি চেষ্টা চালিয়েছেন, মাঝে মধ্যে হতাশ হয়েছেন, বিরক্ত হয়েছেন কিন্তু হাল ছাড়েননি বা ধৈর্যচ্যুতি । তাই আজ তিনি খুসিতে আত্মহারা, মনের সুখে মিষ্টি কমলা খাচ্ছেন। তিনি একটি গাছ থেকে চারা করে আরো একটি গাছ লাগিয়েছেন। ৪ বছর ধরে চারা গাছটিতে কমলা ধরছে।
এ বছর গাছটিতে প্রায় এক হাজার কমলা ধরেছে। এখন তিনি ৯টি গাছের চারা লাগিয়ে বাগান করেছেন। বানিজ্যিকভাবে কমলার বাগান করছেন। তার কমলা চাষ এখন এলাকার অনেকের কাছে অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে। কিছুটা কাকতালীয়ভাবে এ চাষ শুরু করেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। বর্ষা কালে আম, লেচুর সাথে মুকুল আসে কিন্তু পরিপূর্ণ কমলা পেকে হলুদ হতে ৬ মাস সময় লাগে।
অপরদিকে পরীক্ষামূলকভাবে কমলা গাছ লাগিয়ে সফলতা লাভের পর বীরগঞ্জের কৃষক সফিকুল ইসলাম কলমচারা করে বানিজ্যিকভাবে কমলার চাষ শুরু করেছেন। কৃষক সফিকুল ইসলাম বীরগঞ্জের সুজালপুর ইউপির বড় শীতলাই মাস্টারপাড়া গ্রামের মৃত সাহাবুদ্দিনের ছেলে।
এ ব্যাপারে কমলা চাষী সফিকুল ইসলাম জানান, ২০০৪ সালে চট্রগ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখানে কমলার গাছের চারা দেখে পছন্দ হলে তাকে একটি ছোট চারা দেন। এরপর এই চারাটি নিয়ে এসে বাড়ির পার্শ্বে রোপন করেন। কিন্তু গাছটি হবে কিনা এ ভেবে ততটা গুরুত্ব দেয়নি। কোন যত্ম ছাড়াই গাছটি বড় হয়ে ফল ধরে এবং প্রচুর ফল ধরে। তিনি খুব খুশি। ফল পাকার পর খেয়ে মিষ্টি হওয়ায় এলাকার সবাই খেয়ে যত্ম নিতে বলে।
ওই বার গাছে ৩০ টা ফল ধরেছিল। এরপর গাছে ১০০টি। এরপর আরও কয়েকটি গাছের চারা করে। এবার একটি গাছে ১২৫ থেকে ১৩০ টি ফল ধরেছে। এবার বিক্রি করেছে। কোন খরচ নেই। তারপরও ৫০ টাকা করে প্রতি হালি কমলা বিক্রি করেছেন। কমলা মিষ্টি এবং চাহিদা থাকায় এটা যে এখানে লাভজনক হবে বুঝতে পেরে এর চারা তৈরী করে ব্যাপকভাবে চাষাবাদের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তার এই সফলতায় এখন এলাকার অনেকে চারা নেওয়ার জন্য তার সাথে যোগাযোগ করছেন।
২০১১ সালে উপজেলা কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধায়নে সাতোর ইউনিয়নের চৌপুকুরিয়া গ্রাম তলীতে মনোরঞ্জন রায় (৩৭) বাজ্যিকভাবে কমলা চাষ শুরু করেন। তিনি পরীক্ষামুলকভাবে ৩০ শতক জমিতে ৩২টি উন্নত জাতের কমলা গাছের চারা রোপন করেন। নিবিড় পরিচর্যার ফলে গাছগুলি বেশ পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। কমলা চাষে সফলতা লাভ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
এ এলাকায় কমলা চাষ হচ্ছে এমনটি জানতে পেরে পৌর শহরের মোঃ নমিরুল ইসলাম চৌধুরী সেনা ২টি কমলার গাছ রোপন করেছেন।
তিনি জানান, পরীক্ষামূলকভাবে গাছ দু’টি রোপন করেছি। যদি ফল মিষ্টি হয় তাহলে আরো বেমী জমিতে বাগান করার পরিকল্পনা আছে।
এরই মধ্যে কমলা চাষের সফলতার খবর পেয়ে সাংবাদিক, উপজেলা কৃষি অফিসারসহ অনেকে এলাকা পরিদর্শন করেছেন। প্রতিনিয়তই কেউ না কেউ এই বাগান দেখতে এখানে আসছেন এবং অনেকে কমলার চারা ক্রয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করছেন। তারা মনে করেন কমলার গুণগত মান তুলনামূলক ভাল। কৃষি বিভাগ এগিয়ে এলে এ অঞ্চলে ব্যাপক কমলা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। যাতে করে অর্থনৈতিকভাবে এ অঞ্চলের চাষিরা উপকৃত হবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. আবুল কালাম আজাদ জানান, হিমালয়ের পাদদেশে দিনাজপুরের অবস্থান হওয়ায় ভৌগলিক কারণে এ এলাকার কমলা চাষের উজ্জ্বল সম্ভবনা রয়েছে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে বানিজ্যিকভাবে কমলা চাষে কৃষককেরা সফলতা পেতে পারেন। এ বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা আগামিতে উদ্যোগী চাষিদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য কমলা চাষে সফলতা অর্জনকারী কৃষকদের নিয়ে উপজেলা পর্যায়ে সভা-সেমিনার করার পরিকল্পনা করেছি।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।