বাগেরহাটে আ.লীগ নেতাকে বাঁচাতে 'বলির পাঠা' দেহরক্ষী
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে বন্দুকের গুলিতে মোটর সাইকেল চালক মাসুম সরদার (২৫) নিহতের ঘটনায় ওই আ.লীগ নেতাকে বাঁচাতে তার দেহরক্ষীকে 'বলির পাঠা' করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় দারুন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
মটর সাইকেল চালক মাসুম নিহত হবার পর এ ঘটনা ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নেতা বাদশার লোকজন তার উপর হামলা হয়েছে বলে অপপ্রচার চালায়। ঘটনার পর বাদশার মুঠোফোনে জানতে চাইলে তার ছেলে সুমন দাবি করেন, তার বাবাকে সন্ত্রাসীরা গুলি করেছে। সেই গুলি চালকের গায়ে লাগে। এতে চালক নিহত হয়।
তার বাবার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি জানান, বাবা অজ্ঞান রয়েছেন। তার সাথে কথা বলা যাবে না।
খোজ নিয়ে জানা যায়, এঘটনার পর আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক ও তার বন্দুক জব্দ করা হলেও কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে নাটক-সিনেমার মতই ঘটনার প্রেক্ষাপট বদলে যায়। নিহতের ছবি আর আইনের ধারা যা-ই বলুক, ‘বলির পাঠা’ এখন দেহরক্ষী। এমন স্পর্শকাতর ঘটনায় সাজানো মামলার খবর এলাকাবাসীর মাঝে দারুণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। মোটা অংকের অর্থের প্রভাবে উপন্যাসের কাহিনীর মত পাল্টে গেছে রূপ-চিত্র,- এই অভিযোগ প্রতক্ষদর্শীসহ এলাকার হাজারো মানুষের।
পুলিশ জানায়, মাসুম সরদার নিহতের ঘটনায় শুক্রবার রাত পৌনে ৮টায় জিউধরা ইউনিয়ন আ’লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ৮ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম হাওলাদার ওরফে বাদশা মেম্বর বাদি হয়ে তার দেহ রক্ষীর বিরুদ্ধে মোরেলগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
সূত্র জানায়, নিহত মাসুম সরদার ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম হাওলাদার ওরফে বাদশা’র একান্ত সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তিনি একই ইউনিয়নের পালেরখণ্ড গ্রামের আব্দুর রশিদ সরদারের ছেলে।
মোরেলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম খান বলেন, বৃহস্পতিবার জিউধরা এলাকায় গুলিতে নিহতের ঘটনায় জব্দ করা বন্দুকের মালিক বাদশা মেম্বর বাদি হয়ে তার দেহরক্ষী পালেরখণ্ড গ্রামের মো. জব্বার মোল্লার ছেলে মিজান মোল্লার (৩৫) বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে। যার মামলা নং ১৪। এ ঘটনায় মিজান মোল্লাকে পুলিশ আটক করেছে । অপরদিকে আটক মিজান মোল্লার বৃদ্ধা পিতাসহ পরিবারের সকল সদস্য এখন এলাকায় প্রভাবশালীদের সতর্ক পাহারায় রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানাগেছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকালে মাসুদ সরদার বাদশাকে নিয়ে মটর সাইকেল চালিয়ে পার্শ্ববর্তি মংলা উপজেলা এলাকা থেকে জিউধরা ইউনিয়নের লক্ষ্মীখালী গ্রামে ফিরছিলেন। এ সময়ে বাদশা মেম্বরের সহযাত্রী ছিল আরও দুই মটর সাইকেল। যার চালকসহ সদস্যরাও ছিল তার ঘনিষ্ট সহযোগী। জিউধরা-মংলা সড়কের পালেরখণ্ড গ্রামে এলে অসাবধানতা বশত: বাদশা মেম্বরের নিজের হাতে থাকা বন্দুকের গুলিতে মাসুম নিহত হয় বলে জানা যায়।
ঘটনার পর বাগেরহাটের পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্যা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খান, সহকারী পুলিশ সুপার এনামুল হক মিঠু, মোরেলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আসলাম খানসহ মোরেলগঞ্জ থানা ও জিউধরা ক্যাম্পের পুলিশ ঘটনা স্থলে যান। এ সময়ে সংশ্লিষ্ঠ ইউপি মেম্বর জাহাঙ্গীর আলম বাদশা’র পূর্ববর্ত্তী আচরণ ও কার্যকলাপে গুলির বিষয়টি সন্দেহ জনক হওয়ায়, পুলিশ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাদশার সাথে থাকা লাইসেন্সী দোনলা বন্দুকটি জব্দ এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আ.লীগ নেতা বাদশাকে প্রথমে মংলা থানায় ও পরে বাগেরহাট ডিবি অফিসে নিয়ে আসা হয়।
বাগেরহাট পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্যা জানান, বাদশার না কি অন্য কারো বন্দুকের গুলিতে মাসুম নিহত হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বাদশাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বাদশা নাকি জানায়, “ ওই সময় মটর সাইকেলে তারা তিন জন ছিল। সে মটর সাইকেল থামিয়ে বন্দুকটি তার দেহরক্ষী মিজানের হাতে দিয়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যায়। এ সময় আকস্মিক ভাবে গুলি বের হয়ে যায়। সেই গুলিতে ঘটনা স্থলেই মাসুম নিহত হয়।”
স্থানীয়রা জানায়, বাদশার উপর সন্ত্রাসী হামলার “প্রথম নাটক” ব্যর্থ হলে “দ্বিতীয় নাটকের” মঞ্চায়ন শুরু করে। এবার তার নিজ দেহরক্ষীই হয়েছে ‘ বলির পাঠা ’। বাদশাকে বাঁচানোর জন্য এবার দেহরক্ষীর নামে মামলার দিয়ে মূল ঘটনা চাঁপা দেবার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এ বিষয় বাগেরহাট জেলা জজ আদালতের আইনজীবী মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১২ ধারা মোতাবেক লাইসেন্সধারী ব্যক্তির অস্ত্র দ্বারা কাহারাও মৃত্যু ঘটলে তবে অস্ত্র যাহার তাহারই দায়-দায়িত্ব বহন করতে হয়।
এ ব্যাপারে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার নিজামূল হক মোল্যা বলেন, জাহাঙ্গীর আলম বাদশাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছিল। তিনি নিজে বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ঠ থানায় মামলা করেছেন । মামলার তদন্তে সব সত্য বেরিয়ে আসবে বলে তিনি জানান। এদিকে আটককৃত মিজানকে শনিবার দুপুরে বাগেরহাট কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।