- হোম
- >
- আইন-মানবাধিকার
- >
- পলাতক খোকন রাজাকারের ফাঁসির রায়
পলাতক খোকন রাজাকারের ফাঁসির রায়
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ফরিদপুরের নগরকান্দায় হত্যা, ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধের দায়ে ওই এলাকার রাজাকার কমাণ্ডার জাহিদ হোসেন খোকন ওরফে খোকন রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত।
যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর বৃহস্পতিবার এই পলাতক যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা ঘোষণা করেন।
এ ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রায়ে বলা হয়, জাহিদ হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ১১টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি প্রমাণিত হয়েছে।
এই রায়ের বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা যাবে। তবে সেই সুযোগ নিতে হলে খোকন রাজাকারকে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
খোকন রাজাকারের বিরুদ্ধে ১১ অভিযোগ:
খোকন রাজাকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর ৩(১), ৩(২)(এ), ৩(২)(সি), ৩(২)(জি), ৩(২)(আই), ২০ (২) ধারা অনুসারে ১১টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এগুলোতে ১৬ জন নারী ও শিশুসহ ৫০ জনকে হত্যা, তিনজনকে পুড়িয়ে হত্যা, ২ জনকে ধর্ষণ, ৯ জনকে ধর্মান্তরিত করা, ২টি মন্দিরসহ ১০টি গ্রামের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, সাতজন গ্রামবাসীকে সপরিবারে দেশান্তরে বাধ্য করা ও ২৫ জনকে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
খোকন রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তর সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী রাজাকার হিসেবে জাহিদ হোসেন খোকন লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, আটক, নির্যাতন, ধর্মান্তরকরণ, ধর্ষণ, হত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার নগরকান্দায় এসব অপরাধ সংঘটিত করেন।
আনসার ট্রেনিংপ্রাপ্ত খোকন রাজাকার একাত্তরে ফরিদপুরের তৎকালীন নগরকান্দা থানা রাজাকার বাহিনীর প্রধান ছিলেন। ফরিদপুরের আরেক মানবতাবিরোধী অপরাধী ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকারের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন তিনি।
অভিযোগ অনুযায়ী, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে জাহিদ হোসেন খোকন বৃহত্তর ফরিদপুর এলাকায় জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন।
অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৯ মে নগরকান্দার চাঁদহাটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও এদেশীয় রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বড় ধরনের যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে বড় ভাই রাজাকার কমান্ডার জাফর রাজাকার মারা যাওয়ার পর তার ভাই খোকন নগরকান্দা রাজাকার বাহিনীর প্রধান হন।
লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ, আটক, নির্যাতন ও অমানবিক ব্যবহারের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়ের প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল সকাল অনুমান ৬টার দিকে দখলদার পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী সশস্ত্র জাহিদ হোসেন খোকন রাজাকার ও তার আপন বড় ভাই নগরকান্দার শান্তি কমিটির সদস্য জাফর রাজাকারের নেতৃত্বে রাজাকাররা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নগরকান্দা থানার বনগ্রাম গ্রামে প্রবেশ করেন। ভয়ে গ্রামের লোকজন এদিক সেদিক পালাতে থাকেন। খোকন, জাফর ও অন্যান্যরা তাদের কথামতো স্বাধীনতার বিপক্ষে কাজ না করায় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই মোল্লা, নাজিম উদ্দিন মোল্লাসহ ৬ জনের ৬টি বসতঘরে লুটপাট চালিয়ে ঘরগুলো জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেন। তারা ওমেদ মোল্লা (মৃত), রতন মোল্লা (মৃত), মো. ইউনুস মোল্লা, ছিয়ারুন নেছাসহ ১৯ জন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নিরীহ গ্রামবাসীকে জোরপূর্বক আটক করেন। পরে ছাত্তার মোল্লা ও আজিজ শেখ (মৃত)- এ দুইজনকে মারধর করে ছেড়ে দেন। বাকি ১৭ জন বন্দিকে ওই দিন নগরকান্দা থানায় নিয়ে যান। দু’দিন তাদেরকে নির্যাতন করা হয়। পরে খোকন রাজাকার ১০ হাজার টাকা নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেন।
হত্যা, লুন্ঠন ও ধর্মান্তরিতকরণের দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে ৬ মে পর্যন্ত যেকোনো দিন খোকন রাজাকার ও তার বড় ভাই জাফর রাজাকারের নেতৃত্বে রাজাকাররা অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত হয়ে নগরকান্দা থানার জঙ্গুরদী বাগুটিয়া গ্রামের কানাই লাল মণ্ডলসহ দুইজনের ঘর পুড়িয়ে দিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেন। এরপর সকলকে হুমকি দেন যে, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে, না হলে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। না হলে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। এ ধরনের ভয়-ভীতি দেখিয়ে কানাই লাল মণ্ডলের পরিবারের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা এবং গ্রামের ধণাঢ্য ব্যক্তি জীবন দাশের পরিবারের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নগদ আদায় করেন।
হিন্দুদের ধরে হত্যাসহ নানাবিধ ভয়-ভীতি দেখিয়ে জোড়পূর্বক বাধ্য করে ধর্মান্তরিতকরণের তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৬ মে থেকে ২৮ মে যেকোনো দিন সকালের দিকে খোকন রাজাকার ও তার বড় ভাই জাফর রাজাকারের নেতৃত্বে আয়নালসহ অন্যান্য রাজাকাররা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে একজন অজ্ঞাত মৌলভীসহ জীবন দাশের বাড়িতে আসেন। তারা জীবন দাশসহ তার চার ভাইকে জোরপূর্বক মুসলমান বানান এবং তাদেরকে মুসলিম নাম দেন। এরপর চার ভাইয়ের স্ত্রীদের হাতের শাখা ভাঙ্গিয়ে সিঁথির মুছে মৌলভী দ্বারা কলেমা পড়িয়ে ধর্মান্তরিত করেন। এরপর জীবন দাশসহ তার ভাইয়েরা প্রাণ ভয়ে ভারতে চলে যান ও পরবর্তীতে তারা আবার হিন্দু ধর্মে ফিরে আসেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সন্তোষ দাশ (খবির চৌধুরী) ও তার স্ত্রী কমলা রানী দাস (আমেনা বেগম) আগের অবস্থায় ফিরে গিয়ে হিন্দু আচার অনুষ্ঠান পালন অব্যাহত রাখেন।
লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, মন্দিরসহ বসতবাড়ি ধ্বংস করা ও জোর করে ধর্ষণের চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৭ মে সকাল নয়টার দিকে খোকন রাজাকার ও তার বড় ভাই জাফর রাজাকারের নেতৃত্বে রাজাকাররা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নগরকান্দা থানার চাঁদহাট গ্রামের হিন্দু এলাকা বনিক পাড়ায প্রবেশ করেন। রাজাকারদের গ্রামে প্রবেশ করতে দেখে গ্রামের মানুষ এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। খোকন গ্রামের জগন্নাথ দত্তের বাড়িতে প্রবেশ করে পরায়নরত জগন্নাথ দত্তের পিতা ভুবন মোহন দত্ত ও ভুবন মোহন দত্তের ভাইদেরসহ ১৬/১৭ জনকে ধরেন। এ সময় ভয়-ভীতি দেখিয়ে জগন্নাথ দত্তের কাকী সুচিত্রা দত্তের (মৃত) কাছ থেকে ৪২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ৩২৮ ভরি রুপার অলঙ্কার, রেডিও ও ঘড়ি ছিনিয়ে নেয়। এরপর রাজাকাররা জগন্নাথ দত্তের বসতঘর ও মন্দিরে লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। চাঁদহাট গ্রামের বনিকপাড়ায় ঠাকুর দাশের স্ত্রী রাধা রানীকে ধর্ষণ করেন খোকন রাজাকার। একইভাবে মৃত হলধর দের অবিবাহিত কন্যা খুকুমনিকেও খোকন ধর্ষণ করেন। পরবর্তীতে ধর্ষিতারা তাদের পরিবার পরিজনসহ ভারতে চলে যান।
লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, হত্যা, গণহত্যা, নিপীড়ন, জখম ও আটকের পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৩০ মে সকাল ৮টার দিকে খোকন রাজাকার তার রাজাকার বাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে নগরকান্দা থানার কোদালিয়া (বর্তমানে কোদালিয়া শহীদনগর) গ্রামে প্রবেশ করেন। এ সময় পাকিস্তানি সেনারা গ্রামের অনেক বাড়িঘরে লুটপাট চালায়। ভেলুর ভিটা জঙ্গল থেকে ৫০/৬০ জনকে এক জায়গায় আত্মগোপনরত থাকা অবস্থায় খোকন ও পাকিস্তানী সেনারা তাদের ধরে আনে। আটককৃতদের তিন ভাগে ভাগ করে লাইনে দাঁড়া করান। এক পর্যায়ে খোকন রাজাকার ও তার সঙ্গীরা গুলি ও ব্রাশফায়ার করেন। এতে ১৬ জন নারী ও শিশু শহীদ হন। তাদের মধ্যে ছিলেন- আকরামুন নেছা (৪৫), রোকসানা আক্তার (১৮), রাবেয়া বেগম (৫০), হেলেনা আক্তার (১৫) ও হামেদা বেগম (২৫)। খোকন রাজাকার কোদালিয়া গ্রামের আফজাল হোসেনকে নিজে গুলি করে হত্যা করেন। রফিকুল ইসলাম কচি (দেড় বছর), শিউলী বেগমসহ (দেড় বছর) ৬ জন গুরুতর রক্তাক্ত জখমপ্রাপ্ত হয়েও বেঁচে যান।
হত্যা, গণহত্যা, গুরুতর জখম, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৩০ মে দুপুর দেড়টার দিকে খোকন রাজাকারের নেতৃত্বে আতাহার ও আয়নালসহ রাজাকাররা ঈশ্বরদী গ্রামে প্রবেশ করেন। এ সময় তাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনারা ছিল। তারা অনেক বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। গ্রামের লোকজন প্রাণভয়ে ছোটাছুটি করতে থাকলে খোকন রাজাকার এবং পাকিস্তানি সেনারা পলায়নরত সালাম মাতুব্বর, শ্রীমতি খাতুন, লাল মিয়া ও আব্দুল মাজেদ- এ চারজনকে উত্তর মাঠ নামক স্থানে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এ সময় তারা শিশু ফুলমতিকে গুলি করে আহত করে।
হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের সপ্তম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৩১ মে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে খোকন রাজাকারের নেতৃত্বে সশস্ত্র রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে কোদালিয়া গ্রামের পাশে দিঘলিয়া-ঘোড়ামারা বিলে আসে। তারা ২৯ মে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় নিহত পাকিস্তানি সেনাদের লাশের সন্ধান করে। তখন গ্রামের নিরীহ-নিরস্ত্র লোকজন ভয়ে ছোটাছুটি করে এদিক সেদিক পালিয়ে যান। এ সময় রাজাকাররা অসুস্থ পিজিরের বসতঘরসহ পাশ্ববর্তী তার ভাই আফাজ ও সাদেকের বসতঘর পুড়িয়ে দেয়। ফলে ওই ঘর তিনটিতে পিজির, আফাজ ও ছাদেক আগুনে পুড়ে মারা যান। খোকন রাজাকার আছির উদ্দিন মাতুব্বর ও সফিজউদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করেন।
হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অষ্টম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৩১ মে দুপুর দেড়টার দিকে খোকন রাজাকারের নেতৃত্বে আয়নালসহ রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে পক্ষের লোকজন, আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক ও হিন্দুদের নির্মূল করার জন্য পশ্চিম দিক দিয়ে গোয়ালদী গ্রামে প্রবেশ করে। ভয়ে নিরীহ লোকজন পালানোর জন্য ছোটাছুটি করে। এ সময় পলায়নরত বৃদ্ধ রাজেন্দ্রনাথ রায় ও হান্নান মুন্সীর মায়ের কোলে থাকা তার বোন দুই বছরের শিশু বুলু খাতুনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
হত্যা , গনহত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের নবম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৩১ মে বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে খোকন রাজাকারের নেতৃত্বে আতাহার ও আয়নালসহ রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদেরকে নিয়ে উত্তর দিক দিয়ে নগরকান্দা থানার পুড়াপাড়া গ্রামে প্রবেশ করেন। তারা রতন শেখ, বারেক মোল্লা, ছোট খাতুন, সফিজউদ্দিন শেখসহ ৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে। তাদের মধ্যে রতন শেখ ও ছোট খাতুনকে খোকন রাজাকার নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করেন। তারা গ্রামের অনেক বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়। শহীদদের মরদেহ আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামের লোকজন মিলে মাটিচাপা দেন।
হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের দশম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১ জুন সকাল ৬টার দিকে খোকন রাজাকারের নেতৃত্বে রাজাকাররা বাগাট চুড়িয়ারচর গ্রামে প্রবেশ করে। তারা ফজলুল হকসহ অনেকের বাড়ি-ঘরে লুটপাট শেষে আগুন ধরিয়ে দেয়। পলায়নরত অবস্থায় মালেক মাতুব্বর ও তার ভাই মোশারফ মাতুব্বরসহ চারজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমজাদ মুন্সিকে রাজাকাররা ধরে এনে গুলি করে হত্যা করে। ওই সময় মিনি বেগম ও তার আম্মা পালিয়ে থাকা অবস্থায় খোকনকে চিনতে পারেন। পরে গ্রামের পশ্চিমপাড়ার দক্ষিণ মাঠের মধ্যে পলায়নরত অবস্থায় রতন মাতুব্বর, আইয়ুব ও মঞ্জু রানীসহ আরও ১০/১৫ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
আটক ও হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে গুরুতর জখম এবং দেশত্যাগে বাধ্য করার ১১তম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১ জুলাই থেকে ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে যেকোনো একদিন খোকন রাজাকার তার দলবল নিয়ে জঙ্গুরদি বাগুটিয়া গ্রামে যান। সাড়ে ১২টার দিকে তারা গ্রামের কানাই লাল মণ্ডলের বাড়িতে প্রবেশ করে। সশস্ত্র রাজাকারদের দেখে কানাই লাল মণ্ডল পরিবারের অন্যদের নিয়ে তাদের বাড়ির উত্তর পাশের পাটক্ষেতে পালান। রাজাকাররা তাদের খুঁজে ধরে ফেলে। সেখান থেকে কানাইকে আটক করে তার বাড়ির দক্ষিণ পাশে রাস্তার উপর নিয়ে আসে। ‘কানাই লাল মণ্ডল মুক্তিযোদ্ধার ট্রেনিং নিয়েছে, তাকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না’- এ কথা বলে খোকন রাজাকার নিজে হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে হত্যা করার জন্য কানাইয়ের বুকে গুলি করেন। কানাই কাঁত হয়ে রাস্তার ওপর মাটিতে পড়ে যাওয়ায় গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তার ডান হাতের কনুইয়ের ওপর দিয়ে লেগে মাংস ভেদ করে নিচ দিয়ে বের হয়ে যায়। ফলে কানাই গুরুতর রক্তাক্ত ও জখম হন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।