ব্রিটেনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে সিলেটের ৫ প্রার্থী
ব্রিটেনের বিভিন্ন সেক্টরে দীর্ঘদিন থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন সিলেটীরা। সিলেটী বংশোদ্ভূত অনেকেই তাদের কাজের মাধ্যমে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে ব্যবসা বাণিজ্য ও সামাজিক কর্মকান্ডেও ব্রিটেনে সিলেটীদের অবদান উলে¬খযোগ্য। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সে এমপি পদে সিলেটী বংশোদ্ভূত ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে যাচ্ছেন। এসব প্রার্থী এর আগেও সেদেশের রাজনীতিতে তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। আগামী বছরের মে মাসে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
হাউস অব কমন্সের সিলেটী ৫ প্রার্থীর মধ্যে ৩ জনই লড়ছেন সেদেশের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির হয়ে। বাকিদের একজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ক্ষমতাসীন জোটের কনজারভেটিভ পার্টি থেকে ও অপরজন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে। এর আগেও সিলেটীরা হাউস অব কমন্সের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এবার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সিলেটী এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।এদের মধ্যে লেবার পার্টি থেকে পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিণ অ্যান্ড বো আসনে রোশনারা আলী, একই পার্টি থেকে ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড একটন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রূপা আশা হক ও ওয়েলইউন হ্যাটফিল্ড আসন থেকে লড়বেন ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুল মিয়া। ক্ষমতাসীন জোটের কনজারভেটিভ পার্টি থেকে বার্কিং আসনে লড়বেন মিনা রহমান। ক্ষমতাসীন জোটের আরেক শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে নর্থাম্পটন সাউথ আসনে লড়বেন প্রিন্স সাদিক চৌধুরী।
রোশনারা আলী : রোশনারা আলী ১৪ মার্চ ১৯৭৫ সালে সিলেট জেলার বিশ্বনাথে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে লন্ডনে অভিবাসিত হন তিনি। লন্ডনের ইস্ট এন্ডে বড় হওয়া রোশনারা স্কুল জীবন কেটেছে টাওয়ার হ্যামলেটের ম্যালবেরী গার্লস হাই স্কুলে। টাওয়ার হ্যামলেটে বেড়ে ওঠা রোশনারা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জনস কলেজে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন পুঁতি গত বিদ্যা ও বাস্তবতার সমন্বয় করে তিনি বেথানল গ্রিণ এবং বো এলাকার জনগনের সুখ দুঃখের অংশীদার হতে,দেশ ও জনগনের কল্যান সাধনের লক্ষ্যে জড়িয়ে পড়েন লেবার পার্টিতে। সেখানে নিজের যোগ্যতা আর কর্ম অভিজ্ঞতার ফল স্বরূপ লেবার পার্টির টিকিট নিয়ে বেথনাল গ্রিণ-বো এলাকা থেকে বিপুল ভোটে হাউস অব কমনসে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০১০ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় ব্রিটেনে মুসলিম এমপিদের মধ্যেও অন্যতম হিসেবে দৃষ্টি কাড়েন রোশনারা আলী। এম.পি হবার আগে ২০০২ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত রোশনারা কৃতিত্বের সাথে কাজ করেন টিম লিডার হিসেবে হোম অফিসে। ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ইয়ং ফাউন্ডেশনে ডাইরেক্টর হিসেবে কাজ করেন। এর আগে ১৯৯০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি ইনস্টিটিউট ফর দ্য পাবলিক পলিসি রিসার্চে রিসার্চ ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মিনা সাবেরা রহমান : মিনা সাবেরা রহমান ১৯৬৮ সালে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দোলার বাজার ইউনিয়নের রাউলী গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। মাত্র ২১দিন বয়সে পিতা-মাতার সাথে যুক্তরাজ্যে যান। লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ করা মিনা রহমান ১৯৮৫ সালে পূর্ব লন্ডনের জাগোনারী সেন্টারে আউট রিচ ওয়ার্কার হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। বর্তমানে পূর্ব লন্ডনের একটি হাউজিং কোম্পানীতে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। ১৯৯৩ সালে থেকে টোরী দলের একজন সক্রিয় সদস্য। বর্তমানে কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ রেড ব্রিজের প্রেসিডেন্ট, কনজারভেটিভ এসোসিয়েশনের ইলফোর্ড সাউথ এর ভাইস চেয়ার, ক্রেনব্রোক ওয়ার্ড কনজারভেটিভের চেয়ারম্যান ও বাংলা উইমেন্স নেটওয়ার্কের চেয়ারপার্সন।
রূপা আশা হক : রুপা আশা হকের মা-বাবা ১৯৬০ সালের দিকে সিলেট থেকে ব্রিটেনে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। উচ্চশিক্ষিত পরিবারের রুপা আশা হক পেশায় সোসিওলজির শিক্ষক। তিনি কিংস্টন ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার। নিয়মিত লেখেন গার্ডিয়ান, দ্য স্টেটসম্যান, ট্রাইবুনসহ নানা পত্রিকা ও জার্নালে। রুপা হক ২০০৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে কনজারভেটিভের সেইফ সিট বাকিংহাম শায়ারের চিজহাম-আমেরশাম সিটে শেরিল গিলানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। পরে ২০১০ সালে লন্ডন বারা অব ইলিংয়ের ডেপুটি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও তিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
আনোয়ার বাবুল মিয়া : আনোয়ার বাবুল মিয়া পৈত্রিক নিবাস সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মীরপুর গ্রামে। ১৯৯৮ সালে লিঙ্কনস ইন থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রী গ্রহন করা আনোয়ার বৃটিশ বাংলাদেশী প্র্যাক্টিসিং ব্যারিস্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি। একইসাথে পারিবারিক একাধিক ব্যবসাও দেখাশোনা করে থাকেন
প্রিন্স সাদিক চৌধুরী : প্রিন্স সাদিক চৌধুরীর জন্ম সিলেট নগরীর বাগবাড়ীতে। ১৯৭১ সালে তিনি বৃটেনে চলে যান। পরে নর্থহ্যামটন শায়ার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে বর্তমানে ব্যবসা করছেন। দীর্ঘ দিন থেকে লিবারেল ডেমোক্রেটের (লিভডেম) রাজনীতির সাথে জড়িত সাদিক ২০০৭ সালে লিভডেম থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি নর্থহ্যামটন বাংলাদেশী এসোসিয়েশনের সাথে দীর্ঘ দিন থেকে জড়িত।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।