৪ বছরেও শুরু হয়নি রেল প্রকল্পের কাজ
২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে মিয়ানমার সীমান্ত গুনদুম পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও আজও শুরু হয়নি প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ। প্রথম দফায় ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি অনুমোদন দিলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা বাধা হয়ে আছে আজও।
২০১০ সালে প্রথম দফায় ফিজিবিলিট স্টাডি শেষে ৪ বছরেও সে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারায় সম্প্রতি দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ নির্মাণে পুনরায় সম্ভাব্যতা যাচাই করে কর্তৃপক্ষ। এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-র অর্থায়নে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। জানা গেছে, ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদনকালে দোহাজারি-কক্সাবাজার-গুনদুম মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। তবে নানা জটিলতায় বাস্তবায়ন বিলম্বে ২০১৩ সালে নতুন করে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। এর ভিত্তিতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৪ বছর পর প্রকল্পের নির্মাণব্যয় বাড়ছে তিনগুণ।
রেলপথটি নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। অথচ চলমান টঙ্গী-ভৈরববাজার ডাবল লাইন প্রকল্পে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হচ্ছে ৩১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আর লাকসাম-চিনকি আস্তানা ডাবল লাইন প্রকল্পে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ২১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানান, দোহাজারি-কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথটি মিটারগেজ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক নির্দেশে প্রকল্পটির নতুন ডিপিপিতে ডুয়েলগেজ করা হচ্ছে। ফলে ব্যয় বাড়ছে আবার। এক্ষেত্রে প্রকল্প ব্যয় ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. তাফাজ্জল হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, রেলপথটি নির্মাণের জন্য নির্ধারিত অ্যালাইমেন্টে বেশকিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলো সরানো খুবই জটিল। তাই রেলপথটি নির্মাণে অ্যালাইমেন্ট পরিবর্তন করা হচ্ছে। এছাড়া জমি অধিগ্রহণে ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এজন্য প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে। তবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় আরো বাড়বে। ব্যয় পুনর্র্নিধারণ হতে আরো মাস দুয়েক সময় লাগবে।
ব্যয় বাড়লেও প্রকল্পটির অর্থায়নের উৎস নির্ধারিত হয়নি জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, বিদেশি সহায়তায় রেলপথটি নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হলেও এখনো চূড়ান্ত কোনো প্রস্তাব পাওয়া যায়নি। ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদনের সময় এডিবি প্রকল্পটিতে অর্থায়নের প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এডিবি অর্থায়ন করবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। তাফাজ্জল হোসেন বলেন, মিয়ানমার হয়ে চীনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে রেলপথটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বিধায় চীনও এ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে পারে। তবে কিছুই এখনো চূড়ান্ত নয়।
রেলওয়ের তথ্যমতে, দোহাজারি-কক্সবাজার-গুনদুম প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর। পরে দুই দফা সময় বাড়িয়ে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এখনো প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি শূন্য।
বর্তমানে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের আওতাধীন চট্টগ্রামের দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন আছে। কক্সবাজারে পর্যটক ভ্রমণ ও মানুষ আসা-যাওয়ায় সড়কপথ ও বিমান যোগাযোগ থাকলেও রেলপথ নেই। এছাড়া ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথ চালু করতে মিয়ানমারের সীমান্ত গুনদুম পর্যন্ত ট্রেন সংযোগ প্রয়োজন হবে। তাই ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
প্রকল্পটির আওতায় দোহাজারী থেকে রামু ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার এবং রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কথা ছিল। এছাড়া সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাহ, রামু, কক্সবাজার, উখিয়া ও গুনদুম রেলস্টেশন নির্মাণ এবং কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যালিং সিস্টেম, ৪টি প্রধান ও ৪৩টি ছোট রেল সেতু এবং ১৪৪টি লেভেলক্রসিংসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন নির্মাণকাজ করার কথা ছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের জন্য চট্টগ্রাম জেলায় ৩৬০ দশমিক ৩৬ একর এবং কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ৫১ দশমিক ১৫ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকদ্বয়কে জানানো হয় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে। পুরো প্রকল্পের ১ হাজার ৪১১ দশমিক ৫১ একর ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ৩১২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। তবে ২০১০-১১ অর্থবছরে বরাদ্দ পাওয়া ১০ কোটি টাকার মধ্যে ৯ কোটি ৭৫ লাখ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবরে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য দেওয়া হয়। কিন্তু জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় ২০১১ সালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে অধিগ্রহণের জন্য প্রকল্প পরিচালকের কাছে চাওয়া হয় ৩৯১ কোটি টাকা। এরপর ২০১২ সালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে অধিগ্রহণের জন্য চাওয়া হয় ৩১৪ কোটি টাকা। এ অবস্থায় ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় আড়াই থেকে তিন বছর আগেই বেড়ে দাঁড়ায় ৭০৫ কোটি টাকা।
এদিকে রেলপথটি নির্মাণে কক্সবাজারের ডুলাহাজারায় অবস্থিত খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালের জায়গা থাকায় তাদের আপত্তিসহ জমি অধিগ্রহণে স্থানীয় জনগণের প্রতিবাদের মুখে ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সভায় জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। সেই স্থগিতাদেশ এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। সেই সভায় হাসপাতালের আওতামুক্ত বা পাশ দিয়ে দিক পরিবর্তন করে নতুন রেললাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, জমি অধিগ্রহণে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে। এর মধ্যে জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। বাকি অর্থ নির্মাণ কাজে ব্যয় করা হবে। আর ২০১৯ সালে এটি নির্মাণ সম্পন্ন হতে পারে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।