হরতালে অর্থনীতি হারাচ্ছে ১ হাজার কোটি
কয়েক দফার হরতালের কারণে কিছুটা মন্থর গতিতে এগুচ্ছে অর্থনীতি। হরতালে তৈরি পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিপমেন্ট বন্ধ। অনেক কারখানায় বন্ধ রাখা হয়েছে উৎপাদন। অলস সময় কাটাচ্ছে দেশের বন্দরগুলো। চাহিদার সঙ্গে টিকতে না পেরে এরই মধ্যে অস্থির হয়ে উঠেছে নিত্যপণ্যের বাজার। এবারের টানা হরতালে দিশেহারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলছে, প্রতিদিনের হরতালে অর্থনীতি হারাচ্ছে ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এ অবস্থা চলতে থাকলে অর্থনীতির শক্ত মেরুদণ্ড দুর্বল হতে সময় লাগবে না।
অন্যদিকে বিশ্লেষকদের মতে, এমন অবস্থা চলতে থাকলে আবারও উল্টো পথে চলতে শুরু করবে অর্থনৈতিক অগ্রগতির চাকা।
এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড শক্ত না হলে দেশ এগুবে না। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে কর্মসূচি দেওয়া উচিৎ। আর অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড শক্ত করতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন।
এফবিসিসিআই‘র সহ সভাপতি মো. হেলালউদ্দিন বলেন, একদিনের হরতালে ৮শ থেকে ১ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়, সার্ভিস সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হলে অর্থনীতি দারুণভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে। বিষয়টি মনে রাখা উচিৎ।
বিকেএমইএ‘র সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি মো. হাতেম বলেন, হরতালে কারখানা চালু রাখার কথা বলা হলেও বাস্তবে সেটি হয় না, আমরা অর্ডার ঠিক মতো ডেলিভারি না দিতে পারলে অর্ডার শিফট হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আমাদের ক্ষতি হয়।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী জানান, যদিও হরতালে পোশাক শিল্পের সঙ্গে লিংকেজ শিল্পগুলোর কাজ বন্ধ থাকে। সাপ্লাই বন্ধ থাকে। এছাড়াও এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পণ্যবাহী ট্রাক যেতে পারে না। ফলে সময়মতো পণ্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানো যায় না। ক্রেতাদের কাছে সময়মতো পণ্য পৌঁছাতে না পারলে তারা অর্ডার বাতিল করে দেন। এর দায়ভার পড়ে কারখানা মালিকের ওপর। সর্বোপরি ক্ষতি হয় অর্থনীতি।
বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম জানান, হরতালে যে কী পরিমাণ ক্ষতি হয় তা কেবল গার্মেন্ট মালিকরা নয়, অন্য শিল্প মালিকরাও জানেন। গত বছরের হরতালে যে ক্ষতি হয়েছে তা এখনও পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
সর্বশেষ অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সেবা খাত ও ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি। আর হরতাল অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত হয় এই খাতগুলোই। সরকারি ছুটির বিরতি ছাড়া টানা এই হরতাল কর্মসূচিতে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষও।
হরতালে বড় শিল্প কারখানাগুলোর উৎপাদন অব্যাহত থাকলেও পরিবহন ও রফতানি প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় লোকসান গুণতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানালেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও।
এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে জিডিপি‘ র প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এমন অবস্থায় অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর রাজনৈতিক প্রতিবাদ কর্মসূচি আইন করে বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।