ক্ষুদ্র ঋণের জালে জীবন দিলেন বর্গা চাষি
ক্ষুদ্র ঋণের বেড়া জাল থেকে বের হতে না পেরে নিজের জীবন দিয়ে ঋণ পরিশোধ করলেন বর্গা চাষি গোলাম রসুল। এ ঘটনাটি ঘটে বুধবার রাতে মাগুরার মোহাম্মদপুর থানার পলাবাড়িয়া ইউনিয়েনের মলগাতি গ্রামে।
নিহতের স্ত্রী জমিলা বেগম জানান, রসুল মোল্লার সাথে তার প্রায় ৬০ বছরের ঘর সংসার । তিনি একজন বর্গা চাষি। এ কারনে সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে। দারিদ্রের কারণে দুই ছেলে মোহাম্মদ ও মিন্টুকে লেখাপড়া করাতে পারেননি। তাদের একজন দর্জি অপরজন নির্মাণ শ্রমিক। বিয়ের পর দু’জনই স্ত্রী সন্তান নিয়ে পৃথক হয়ে গেছে।
অন্যদিকে অনেক বয়স হয়ে যাওয়ায় বর্গা চাষি রসুল মোল্যা কৃষি কাজ করে তেমন অর্থ উপর্জন করতে পারেন না। তাদের নিজের কোন জমিজমা নেই। সব মিলিয়ে চরম দারিদ্রের কারণে অর্থিক প্রয়োজনে কিছু দিন আগে জমিলা বেগম তার নিজের নামে বেসরকারি সংস্থা রোভার নহাটা শাখা থেকে ১৬ হাজার (ঋণ নং-০৮০১৭০৩) ও গ্রামীণ ব্যাংকের পলাশবাড়িয়া শাখা থেকে ১৮ হাজার টাকা ঋণ (ঋণ নং-২৯৫১) গ্রহণ করেন। এই ঋনের বিপরীতে প্রতি সপ্তাহে কিস্তি বাবদ দেড় হাজার টাকা দিতে হয়। প্রথম দিকে ঋনের টাকা দিয়ে কিছু কিস্তি দিয়েছেন। পরবর্তিতে বিভিন্নভাবে ধার দেনা করে কিস্তি পরিশোধ করেছেন।
কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরে সব পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঋনগুলো খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এ কারনে মাঠ কর্মীরা বিশেষ করে রোভার মাঠ কর্মী মঞ্জুর রহমান প্রতিদিনই বাড়িতে কিস্তি আদায়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। সর্ব শেষ তিনি বেশ কয়েক দফা বাড়িতে আসে। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে সে ঋনের কিস্তির জন্য বকাঝকা করে প্রয়োজনে বাড়ি বিক্রি করে টাকা পরিশোধের জন্য বলে যায়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক দুশ্চিন্তা করেন গোলাম রসুল। পরবর্তিতে রাতে বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি গাছে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।
রোভার মাঠ কর্মী মঞ্জুর রহমান বলেন, তার ঋণ ছিল তবে চাপ দেওয়ার বিষয়টি ঠিক নয়। নিয়মানুযায়ী তার বকেয়া টাকা মওকুফ করা হবে। সংস্থা থেকে তার পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে। একই বক্তব্য দিয়েছেন রোভার নহাটা শাখার ব্যবস্থাপক জয়দেব বিশ্বাস।
অন্যদিকে মণ্ডল গাতি গ্রামে কর্মরত গ্রামীণ ব্যাংকের মাঠ কর্মী যমুনা বেগম জানান, ঋন গ্রহীতা জমিলা বেগম তাদের কাছ থেকে নেওয়া ঋনের কিস্তি নিয়মিতভাবে পরিশোধ করছিলেন। এ কারনে তাদের পক্ষ থেকে কোন চাপ ছিল না। এ ছাড়া তার স্বামী মারা যাওয়ায় বাকি ঋনের সমস্ত টাকা মওকুফ করা হবে। একই বক্তব্য দিয়েছেন মহম্মপুর গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মিলন হোসেন।
মোহাম্মদপুর থানার এ এস আই আনোয়ার হোসেন জানান, ঋণের জালে জড়িয়ে তিনি দিশেহারা হয়ে আত্মহত্যা গোলাম রসুল করেছেন । এ ব্যাপারে একটি ইউডি মামলা হয়েছে। তার স্ত্রী এ বিষয়ে কোন অভিযোগ দেননি।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।