শিক্ষা ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা অর্জিত : শিক্ষামন্ত্রী
বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রের একটি লার্নিং অ্যাসেসমেন্টে মাধ্যমিক স্তরে জেন্ডার সমতা ইতিমধ্যে অর্জিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট’ (সেকায়েপ)ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ‘লার্নিং অ্যাসেসমেন্ট-২০১৩’-এর ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে আজ এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এই অনুষ্ঠানে বলেছেন, শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য জাতীয় পর্যায়ে লার্নিং অ্যাসেসমেন্ট বাস্তবায়নের মাধ্যমে একে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের বিষয়টি সরকার সক্রিয় বিবেচনায় রেখেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে অ্যাসেসমেন্টের কার্যক্রম বর্তমান সরকারই প্রথম শুরু করেছেÑ যা শিক্ষার মান উন্নয়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই অ্যাসেসমেন্ট প্রক্রিয়া ইতিামধ্যে চালু করা হয়েছে এবং তা অব্যাহত রাখা হবে।
নুরুল ইসলাম নাহিদ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ন্যাশনাল একাডেমি ফর এডুকেশনাল ম্যানেজমেন্ট (এনএইএম) মিলনায়তনে ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেনট প্রজেক্ট (সেকায়েপ)ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ‘লার্নিং অ্যাসেসমেন্ট-২০১৩’-এর ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশান উইং এই কর্মশালার আয়োজন করে। গতবছরের ২৭ ডিসেম্বর সেকায়েপ-এর ৩০৯ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ৭ হাজার ১৪৩ জন ও ৮ম শ্রেণীর ৭ হাজার ১৬৯ জন শিক্ষার্থীর ওপর বাংলা, ইংরেজী ও গণিত বিষয়ে মূল অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট গ্রহণ করা হয়। এই অ্যাসেসমেন্টের ফলাফল আজ কর্মশালার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিভাবে প্রকাশ করা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান, নায়েমের মহাপরিচালক ইফফাত আরা নার্গিস, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সদস্য শ্যামল কান্তি ঘোষ, বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক কার্যালয়ের সিনিয়র অপারেশন কর্মকর্তা ড. মুখলেছুর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশান পরিচালক অধ্যাপক মো. দিদারুল আলম, সেকায়েপ-এর প্রকল্প পরিচালক শহীদ বখতিয়ার আলম প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
মন্ত্রী শিক্ষার উন্নয়নে শিক্ষা পরিবারের সকলের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, তিনি নিজেসহ কেউই জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নন। তাই শিক্ষা পরিবারের সংশ্লিষ্ট সকলকে দক্ষতা অব্যাহভাবে বৃদ্ধি করতে হবে। এ ছাড়া সকলকে যার যার দায়িত্ব সময় মতো পালন করতে হবে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নতুন নতুন সৃজনশীল কাজ বের করে এর উন্নয়নে ভুমিকা পালন করার আহবান জানান শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, মানসম্মত শিক্ষার জন্য মানসম্মত শিক্ষক প্রয়োজন। এ জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তিনি গতানুগতিক শিক্ষা থেকে বেরিয়ে এসে বিশ্বমানের শিক্ষা, জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানান।
মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম মেধার দিক দিয়ে দরিদ্র নয় উল্লেখ করে বলেন, তারা এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও আমরা আমাদের কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। সেটা অর্জনের জন্য ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যেতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বিগত মহাজোট সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন ৯ শতাংশ শিশু স্কুলে আসতো না। সরকারের নানা কর্মসূচি গ্রহণের কারণে এখন তা ৯৯ শতাংশে উপনীত হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার রোধ করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলেও মনে করেন তিনি।
গতবছরের ২৭ ডিসেম্বর সেকায়েপ-এর ৩০৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ৭ হাজার ১৪৩ জন ও ৮ম শ্রেণীর ৭ হাজার ১৬৯ জন শিক্ষার্থীর ওপর বাংলা, ইংরেজী ও গণিত বিষয়ে মূল অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট গ্রহণ করা হয়। এর আগে ২০১২ সালে বাংলাদেশের মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে প্রথম লার্নিং অ্যাসেসমেন্ট কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। পরবর্তীতে গতবছর আরো একটি অ্যাসেসমেন্ট সার্ভে বাস্তবায়িত হয় বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
এই সেকায়েপভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লার্নিং অ্যাসেসমেন্ট-২০১৩ এর ফলাফলে দেখা গেছে, শিক্ষায় মাধ্যমিক স্তরের জেন্ডার সমতা ইতিমধ্যে অর্জিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই সমতা বজায় রাখার জন্য উপবৃত্তি, সেনিটেশন ও ছাত্রীদের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি কর্মসূচি অব্যাহত রাখা প্রয়োজন বলে অ্যাসেসমেন্টে সুপারিশ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই অনিয়িমিত শিক্ষার্থীদের তুলনায় ভাল করেছে। ২০১২ ও ২০১৩ সালে কাংখিত দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে সিলেট অঞ্চল সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে রয়েছে। এই অঞ্চলের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য সচেতনতা কর্মসূচিসহ বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে সুপারিশ করা হয়েছে।
লার্নিং অ্যাসেসমেন্ট-২০১৩ এর ফলাফল বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে, সাধারণ শিক্ষা ও মাদরাসা শিক্ষার মধ্যে বেশ পার্থক্য দেখা গেছে। মাদরাসা শিক্ষার মান সাধারণ শিক্ষার তুলনায় দুর্বল। তাই মাদরাসা শিক্ষার বিষয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলেও সরকারের সংশ্লিস্ট দপ্তরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাংখিত দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে পার্থক্য দেখা গেছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষে বিদ্যমান দুর্বলতা চিহ্নিত করে উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে এতে। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও শিক্ষাদান পদ্ধতির ওপর শিক্ষকদের দক্ষতার সাথে শিক্ষার্থীদের কাংখিত অর্জন খুব নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত বলে অ্যাসেসমেন্টে প্রমাণিত হয়েছে। তাই শিক্ষক প্রশিক্ষণের সময় এই বিষয়ের ওপর বিশেষ জোর দেয়া প্রয়োজন বলে এতে সুপারিশ করে হয়েছে।
এই অ্যাসেসমেন্টের ফলাফলের ভিত্তিতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা উত্তর লেখার ক্ষেত্রে ভাল ফলাফল করতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের লিখন দক্ষতাও শিক্ষার্থীর কাংখিত দক্ষতার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরবর্তী লানিং অ্যাসেসমেন্টে লিখন দক্ষতাও যোগ করা যায় কিনা সেই প্রস্তবা করা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশান পরিচালক অধ্যাপক মো. দিদারুল আলম বাসস’কে জানান, ২০১৫ সাল থেকে জাতীয় পর্যায়ে লার্নিং অ্যাসেসমেনট বাস্তবায়নের মাধ্যমে একে মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করে একটি পদ্ধতিগত ও নিয়মিত লার্নিং অ্যাসেসমেন্ট চালিয়ে যেতে হবে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।