মামু বাড়ির আবদার নিয়ে আবারো হাজির অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
সম্প্রতি মামু বাড়ির আবদার নিয়ে আবারো হাজির হয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এই প্রতিষ্ঠানটি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কসাই কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যু দণ্ডাদেশের পর এক বিবৃতিতে মৃত্যুদণ্ড মুলতবির জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহবান জানিয়েছে। বিবৃতিতে সংস্থার বাংলাদেশ গবেষক কিছু মিথ্যা ও মনগড়া তথ্য উপস্থাপন করেছেন। আপীল বিভাগে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল সম্পর্কিত আদেশটি নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোই যার উদ্দেশ্য। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর বাংলাদেশ গবেষক আব্বাস ফয়েজ তার বিবৃতিতে বলেন, ‘.......কামারুজ্জামানের আপীলের রায় সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা কারার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। এটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের সাক্ষাতকারে বলেছেন, বিচার বিভাগীয় আর কোন ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, আপীলের সর্বশেষ স্থান হিসেবে সুপ্রিম কোর্টে বিচারের বিষয়ে পর্যালোচনা (রিভিউ) করার অধিকার বিবাদীকে দিয়েছে সংবিধান। কিন্তু এটর্নি জেনারেল আর কোন রিভিউ করার সুযোগ নেই বলে যে মন্তব্য করেছেন তা এই অধিকারকে খর্ব করে।’ – তার এই বক্তব্য সম্পূর্ণ অজ্ঞতা প্রসূত। এখানে সংবিধান উদ্ধৃত করা হলেও সুনির্দিষ্ট অনুচ্ছেদের উল্লেখ নেই; বক্তব্যটি বিভ্রান্তির একটি অপকৌশল মাত্র। তাছাড়া সংবিধান রাষ্ট্র পরিচালনার এমন এক প্রণালী, যা ইচ্ছামতো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা যায় না। কিন্তু বিবৃতিদাতা বিষয়টি ভুলে গেছেন! সকল অনুচ্ছেদ নিয়ে সংবিধান কাজেই সমগ্রটি অনুধাবন করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে হয় তা নাহলে যে কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হবে খণ্ডিত। আর এই কাজটিই করেছেন অ্যামনেস্টি আব্বাস।
তিনি সম্ভবত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধান-এর ‘আপীল বিভাগ কর্তৃক রায় বা আদেশ পুনর্বিবেচনা’ শীর্ষক অনুচ্ছেদ ১০৫’ উদ্ধৃত করতে চেয়েছেন। যেখানে বলা আছে, ‘সংসদের যে কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে এবং আপীল বিভাগ কর্তৃক প্রণীত যে কোন বিধি-সাপেক্ষে আপীল বিভাগের কোন ঘোষিত রায় বা প্রদত্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা উক্ত বিভাগের থাকিবে।’ কিন্তু আব্বাস সাহেবের না জানা-বোঝার দিকটি হলো যে অপরাধের বিচার নিয়ে তিনি কথা বলছেন, তা এর আওতায় পড়ে না। এ জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধান-এ পৃথক অনুচ্ছেদ লিপিবদ্ধ আছে। এক্ষেত্রে প্রযোজ্য অনুচ্ছেদ হলো, ৪৭ (৩) ও ৪৭ ক। এখানে বলা হয়েছে ‘এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোন সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য বা অন্য কোন ব্যক্তি, ব্যক্তি সমষ্টি বা সংগঠন কিংবা যুদ্ধবন্দীকে আটক, ফৌজদারীতে সোপর্দ কিংবা দণ্ডদান করিবার বিধান-সংবলিত কোন আইন বা আইনের বিধান এই সংবিধানের কোন বিধানের সহিত অসমঞ্জস বা তাহার পরিপন্থী, এই কারণে বাতিল বা বেআইনি বলিয়া গণ্য হইবে না কিংবা কখনও বাতিল বা বেআইনি হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে না [অনুচ্ছেদ ৪৭ (৩)]। আবার ‘সংবিধানের কতিপয় বিধানের অপ্রযোজ্যতা’ সম্পর্কে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৭ক-এ উল্লেখ আছে, ‘(১) যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের(৩) দফায় বর্ণিত কোন আইন প্রযোজ্য হয়, সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ, ৩৫ অনুচ্ছেদের (১) ও (৩) দফা এবং ৪৪ অনুচ্ছেদের অধীন নিশ্চয়কৃত অধিকারসমূহ প্রযোজ্য হইবে না।’ এবং ‘(২) এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বর্ণিত কোন আইন প্রযোজ্য হয়, এই সংবিধানের অধীন কোন প্রতিকারের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করিবার কোন অধিকার সেই ব্যক্তির থাকিবে না।’
সংবিধানে বর্ণিত উপরোক্ত অনুচ্ছেদ থেকেই এটি স্পষ্ট যে, মানবতা বিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন কোন ব্যক্তি, ব্যক্তি সমষ্টি বা সংগঠনের ক্ষেত্রে সংবিধানের সুনির্দিষ্ট অনুচ্ছেদ ব্যতীত সকল অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর বক্তব্য মিথ্যা, মনগড়া ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। অবশ্য এই কাজটি তারা মানবতা বিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সূচনা লগ্ন থেকে অব্যাহত বিভ্রান্তি সৃষ্টির ধারাবাহিক অপচেষ্টারই অংশ।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং বাংলাদেশী গবেষক সাম্প্রতিক বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে হুমকি প্রদর্শন করেছেন। প্রকাশিত প্রতিবেদনে তাদের বিবৃতির উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নির্যাতনের শিকার লাখ লাখ মানুষ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সুবিচার দিতে গিয়ে ফাঁসি দেয়া হলে তা শুধুই সহিংসতা অব্যাহত রাখবে।’ একটি প্রতিষ্ঠান ও তার কর্মকর্তারা কী করে অব্যাহত সহিংসতার ভবিষ্যদ্বাণী করেন? এটি একটি অপরাধ হিসেবেই পরিগণিত। এক্ষেত্রে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং বাংলাদেশী গবেষকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীকে একটি বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টাও লক্ষণীয়। কাজেই যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক সাম্প্রতিক রায়ের পর্যবেক্ষণে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে যে নির্দেশনা এসেছে সে অনুযায়ী সংগঠনের বিরুদ্ধেও দ্রত আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
পত্রিকায় প্রকাশিত ‘অবিলম্বে অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড মুলতবি করতে হবে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বর্ণিত অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর বিবৃতিটি পরিপূর্ণভাবেই একটি স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নগ্ন হস্তক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই নয়। এরা জামায়াত কর্তৃক পারিশ্রমিকের বিনিময়ে নিয়োগকৃত এজেন্ট।
লেখক: সমাজকর্মী
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।