- হোম
- >
- কৃষিজ ও প্রাণিজ
- >
- ফসলি জমিত তামাকের বীজতলা সংকটে পরবে মৌসুমি ফসল
ফসলি জমিত তামাকের বীজতলা সংকটে পরবে মৌসুমি ফসল
শুরু হয়েছে ক্ষতিকর তামাক চাষের প্রথম ধাপ, চারা তৈরি করতে বীচ তলা প্রস্তুতের কাজ। খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার প্রত্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা তামাকের চারা উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করছে ফসলি জমি। এর ফলে চরম সংকটে পরতে যাচ্ছে শীতকালীন মৌসুমি ফসলের। একটা সময় দীঘিনালা উপজেলার মেরুং, বেতছড়ি, কবাখালি, বাবুছড়া, বরাদম, হাচিন সন পুর, তারাবুনিয়া ও মাইনি নদীর তীর ঘেঁষা এলাকাগুলোতে প্রচুর সবজি চাষ করতো কৃষকরা।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন কারনে কৃষকরা সবজি চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। পর পর কয়েক বছর ঝুঁকছেন মারাত্মক ক্ষতিকর তামাক চাষে। প্রতিবছরের মতো এবারও দীঘিনালার বেশিরভাগ এলাকায় তামাক চাষের উদ্দেশ্যে কৃষকরা তামাক চারা উৎপাদনের জন্য বীচ তলা প্রস্তুত করছে। মূলত এই সময়টাতে শীতকালীন ফসল ফলানোর কথা কৃষকদের। কৃষকরা ফসলি কৃষি জমি থেকে শুরু করে ঘরের আঙিনা পর্যন্ত ব্যবহার করছে তামাক চারা উৎপাদনের জন্য। এর নেপথ্যে কারন হিসেবে ধরা হচ্ছে, কৃষককে সরাসরি বাড়তি সুযোগ-সুবিধা প্রদান। প্রান্তিক কৃষকরাও বলছেন একই কথা।
তামাক কোম্পানিগুলো থেকে অতিমাত্রায় সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় তামাক চাষ করছেন কৃষকরা। তামাকের চারা রোপন থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাত পর্যন্ত সার, কীটনাশক, নানাবিধ উপকরণের জোগান দেয় তামাক কোম্পানিগুলো। এমনকি তারাই সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে তামাক কিনে নেয়। তাই ধান, সবজি কিংবা মৌসুমি ফসল উৎপাদন করে লোকসান ও বিক্রির অনিশ্চয়তা থেকে তামাক চাষের দিকেই ঝুঁকছেন কৃষক।
মেরুং এলাকার তামাক চাষী মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা সবজি চাষ করে লোকসান ছাড়া লাভের মুখ দেখিনি। তাছাড়া সবজি উৎপাদন করে আমরা বিক্রির নিশ্চয়তা পাইনা।’ একই শুর মিলিয়ে কবাখালী এলাকার আরেক তামাক চাষী মো. জামাল বলেন, ‘সবজি কিংবা মৌসুমি ফসল উৎপাদন করে লোকসান ও বিক্রির অনিশ্চয়তা থেকে তামাক চাষের দিকেই ঝুঁকছি। এতে খরচ কম লাভ বেশি।’ তামাকের ভালো ফলন পেতে বারবার সার ও কীটনাশক ব্যবহার প্রয়োজন হয়। বীজতলায় যেন ঘুঘরে পোকা না আসে, সেজন্য ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিষ। চারা গজিয়ে গেলে প্রয়োজন হয় এগ্রোডাম, কৃষান, রনভিট, সুমিথিওনসহ রেডোমিল পাউডার। ছত্রাক ধ্বংস করতে রয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিষ। এছাড়া তামাক ক্ষেতে ব্যবহার করা হয় অপরিকল্পিত সার। ভালো ফলেনের জন্য কখনও কখনও মাটিতে লবন ব্যবহার করা হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। বাড়তি রাসায়নিক সার কিংবা কীটনাশক ব্যবহার দুই’ই জমি এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বছরের পর বছর তামাক চাষের কারনে দীঘিনালার উর্বরা আবাদি জমি তামাকের বিষক্রিয়ায় হয়ে যাচ্ছে অনাবাদি।
এক জমিতে তামাক আর পাশের জমিতে ধান, সবজি কিংবা অন্য ফসল আবাদ করলে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব পরে ওই ফসলি জমির ওপর। এভাবেই অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছে খাদ্য নিরাপত্তা। সবজি, দানাশস্য, জীববৈচিত্র্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে বিরূপ প্রভাব।
তামাক চাষের ব্যপকতা নিয়ে দীঘিনালা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুপন চাকমা বলেন, ‘তামাক চাষের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে কৃষকদের বুঝানো হলেও তা কোন কাজে আসছেনা। তার কারণ তামাক কোম্পানী থেকে চাষের জন্য চাহিদার প্রায় সবটুকুই পাচ্ছেন কৃষকরা। তাছাড়া কৃষকরা তামাক কোম্পানী থেকে বিক্রি নিশ্চয়তা পান।’ ফসলি কৃষি জমিতে তামাক চাষের বীচ তলা বন্ধ এবং এর আগ্রাসন থেকে ফসলি জমি ও জীববৈচিত্র্য বাঁচাতে প্রয়োজন সর্বস্থরের সচেতনতা, এমটাই মনে করেন সচেতন মহল।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।