- হোম
- >
- আইন-মানবাধিকার
- >
- বাংলাদেশে আসছে এনআইএ
বাংলাদেশে আসছে এনআইএ
সম্প্রতি বর্ধমানে জঙ্গী হামলার তদন্তে বাংলাদেশে আসছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)।
'খাগড়াগড় তদন্তে এ বার বাংলাদেশ যেতে চায় এনআইএ' শিরোনামে এক খবরে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা।
সাহস টুয়েন্টিফোর ডটকম-এর পঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
খাগড়াগড়-বিস্ফোরণের তদন্তে এ বার বাংলাদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল জাতীয় তদন্তকারী দল (এনআইএ)। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র চেয়ে আবেদন করেছে তারা।
সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “ওই আবেদন বিদেশ মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক ঢাকার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।” প্রাথমিক ভাবে ঢাকা ছাড়া তদন্তে উঠে আসা রাজশাহী, সাতক্ষীরার মতো জায়গাগুলিতে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে এনআইএ। তবে চূড়ান্ত ছাড়পত্র পাওয়া নির্ভর করছে ঢাকার ইচ্ছার উপরেই। সব কিছু ঠিক থাকলে, আগামী ৯ অথবা ১০ নভেম্বর ঢাকায় যাবে চার-পাঁচ সদস্যের ওই তদন্তকারী দলটি।
খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্তে গোড়া থেকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের জঙ্গি যোগাযোগ কথা। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের জঙ্গি গোষ্ঠী জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-র সদস্যরাই পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলিতে বিস্ফোরক বানানোর কাজে সক্রিয় ছিল। যা পরে বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ নেতাদের হত্যার কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে ভারত। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা মনে করছেন, এই গোটা চক্রান্তের মূল শিকড় রয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে। তাই বাংলাদেশে যেতে চায় এনআইএ। সম্প্রতি ঢাকার সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে দু’জন হুজি জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। তাদের সঙ্গে খাগড়াগড়ের যোগাযোগ থাকতে পারে বলে সন্দেহ ভারতীয় গোয়েন্দাদের।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, খাগড়াগড় কাণ্ডের সঙ্গে যে বাংলাদেশের যোগ রয়েছে, তা মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে যায় বিস্ফোরণের পরেই। বিস্ফোরণে মৃত শাকিলের পরিচয় খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় সে আসলে বাংলাদেশের নাগরিক। ঢাকায় তার বাড়ি। ওই ঘটনায় ১২ জন জেএমবি জঙ্গিকে খুঁজছে এনআইএ। এদের মধ্যে চার জনই বাংলাদেশের বাসিন্দা। বিস্ফোরণের পর তারা বাংলাদেশেই ফিরে গিয়েছে বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্র জানাচ্ছে, খাগড়াগড় মডিউলের মূল চক্রী সাজিদ পলাতক। সাজিদ আদতে বাংলাদেশের বাসিন্দা। গত দেড় বছর ধরে মুর্শিদাবাদের লালগোলার কাছে মুমকিমনগরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জেহাদি প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিল সে। সীমান্তবর্তী এলাকার সবক’টি জঙ্গি ঘাঁটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখারও দায়িত্ব ছিল তার। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, ওই মডিউলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কওসর। বীরভূমের বোলপুর ও বর্ধমানের বাবুরগড়ে তার অস্থায়ী ডেরা ছিল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিস্ফোরক পৌঁছে দেওয়া ও সেগুলি বানানোর প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তার। গোয়েন্দারা জেনেছেন, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরেও প্রথমে বর্ধমান ও পরে বীরভূমে তিন দিন লুকিয়ে ছিল কওসর। পরে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হওয়ায় নদিয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যায় সে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, বেলডাঙা-সহ সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে মাদ্রাসার জন্য জমি কেনার দায়িত্বে ছিল হাতকাটা নাসিরুল্লা। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা-হাতপাড়ায় তার ডেরা থাকলেও আদতে সে বাংলাদেশের বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, এই মডিউলের চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক তল্হা শেখ। বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসে বীরভূমের কীর্ণাহার ও নদীয়ার দেবগ্রামে ডেরা বাঁধে সে। কওসরের পাশাপাশি সে-ও বাংলাদেশে বোমা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিল। ফলে বাংলাদেশে গেলে এই চার জনের সম্পর্কেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
দেশের অন্দরেও তদন্তের জাল ক্রমশ ছড়াচ্ছে এনআইএ। রবিবারেই এনআইএ-র তিন তদন্তকারী অফিসার কলকাতা থেকে অসমের বরপেটায় যান। সেখানে জামাতের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে শাহনুর আলম নামে এক জনকে খোঁজা হচ্ছে। অভিযোগ, শাহনুর বাংলাদেশ থেকে টাকা এনে জিহাদি কার্যকলাপের জন্য তা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছে। শাহনুর, তার স্ত্রী সজিনা ও দুই সন্তান এক সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ।
রবিবার এবং সোমবার দুই দফায় শাহনুরের ঘরে তল্লাশি চালান গোয়েন্দারা। এনআইএ সূত্রে খবর, বরপেটার সর্থেবাড়ির চটলা গ্রামে শাহনুরের বাড়ির বাইরের তালা রবিবার রাতে ভাঙা হলেও ঘরের দরজা খোলা যায়নি। রাতে সামনের দরজা সিল করে আসে এনআইএ। সোমবার শাহনুরের বাড়ির ভিতরের দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকা হয়। সেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গের কোনও এক তালিম-উল মাদ্রাসার চাঁদা তোলার রসিদ, বিদেশি টাকা, আরবি ভাষায় লেখা কিছু বই, লিফলেট এবং অন্যান্য কিছু নথি সংগ্রহ করা হয়। গত জুলাই মাসে, চটলা গ্রামে একটি জমায়েতকে ঘিরে সংঘর্ষের জেরে শাহনুরকে আটক করেছিল পুলিশ। সেই জমায়েত যে ব্যক্তির বাড়ির সামনে হয়েছিল, সেই আনোয়ার মল্লিককেও এ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শাহনুরের দুই ভাইয়ের ঘরেও তল্লাশি চালায় এনআইএ। এক ভাই জাকারিয়াকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তার ঘর থেকে বেশ কিছু নথি মিলেছে। শাহনুরের সন্ধান দিতে পারলে ৫ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে এনআইএ। শাহনুর নিখোঁজ হলেও খাগড়াগড় কাণ্ডের অভিযুক্ত আব্দুল হাকিমকে বুধবারই হাতে পেতে চলেছে এনআইএ। এসএসকেএম হাসপাতাল সূত্রে খবর, সোমবারেই হাকিমকে ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও আরও দু’দিন তাকে এসএসকেএমেই কাটাতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী, হাসপাতাল থেকে বার করার পরেই হাকিমকে আদালতে পেশ করতে হবে।
এ দিন সকাল ১০টায় এসএসকেএমের মেডিক্যাল বোর্ড হাকিমকে পরীক্ষা করে। ক্ষতস্থানে ড্রেসিংও হয়। তার পরেই ডাক্তাররা জানিয়ে দেন, হাকিমকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করার কোনও প্রয়োজন নেই। এ দিনই তাঁরা হাসপাতাল থেকে হাকিমকে ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই অনুযায়ী এনআইএ-কে লিখিত ভাবে সেই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এনআইএ জানিয়ে দেয়, তারা বুধবার অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নেবে।
সোমবার দুপুর ১টা নাগাদ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে যান এনআইএ-র দুই অফিসার। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, খাগড়াগড় বিস্ফোরণে মৃত শাকিল আহমেদ ও সুবহানের দেহ এত দিন ওই হাসপাতালের মর্গে ছিল। কিন্তু দেহ দু’টি পচতে বসায় বর্ধমান মেডিক্যালের তরফে এনআইএ-কে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এ দিন দেহ দু’টির অবস্থা দেখতেই হাসপাতালে যান ওই দুই অফিসার।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।