মুহাম্মদ কামারুজ্জামান: একাত্তরের কর্মকাণ্ডেই যার পরিচিতি
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান জন্মগ্রহণ করেন এখনকার শেরপুর জেলায় যা তখন ময়মনসিংহ জেলার জামালপুরের অন্তর্গত একটি থানা ছিল। ১৯৫২ সালের ৪ঠা জুলাই তিনি বাজিতখালি গ্রামে এক কৃষকের পরিবারে জন্ম নেন।
কিন্তু যে গ্রামে তার জন্ম সেই গ্রামটির মানুষের মধ্যে মুহাম্মদ কামারুজ্জামান সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলনা।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকার কারণেই গ্রামের মানুষের কাছে তিনি পরিচিত হয়েছেন।
ওই গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হালিমের মতে যুদ্ধের সময়ে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের কর্মকাণ্ডের কারণেই গ্রামের মানুষসহ সবার কাছে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেন।
আবদুল হালিম বলেন, "তাকে ওইভাবে মানুষ আসলে চিনতোনা। একদম সাধারণ মানুষ হিসেবে চিনতো। বয়সও কম ছিলো, স্কুলে পড়ছে''।
''স্কুল থেকে পাশ করে কলেজে পড়ছে। কলেজে থাকা অবস্থাতেতো বাইরে বাইরে থাকতেন। যুদ্ধকালীন অবস্থায় তাকে মানুষ চিনছে। বদর বাহিনীর কমাণ্ডার ছিলেন। ওইসময়ই সর্বস্তরের মানুষ তাকে চিনছে"।
শেরপুরেই কামারুজ্জামানের বেড়ে উঠা।
গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি মেট্রিক পাশ করেন।
ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন ময়মনসিংহ নাসিরাবাদ কলেজ থেকে । কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রসংঘের সাথে জড়িত হন ।
একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুহাম্মদ কামারুজ্জামান জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রসংঘের ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি ছিলেন। এবং ওই সময় ওই অঞ্চলের আলবদর বাহিনীর মূল সংগঠক হিসেবে কাজ করেন ।
ওই অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন রনাঙ্গন থেকেই তিনি শুনেছেন মুহাম্মদ কামারুজ্জামান কর্মকাণ্ডের কথা।
তিনি বলেন, "আমরা রণাঙ্গন থেকেই শুনেছি উনি মাঝেমধ্যে ময়মনসিংহ থেকে শেরপুরে আসতেন, এসে নির্দেশাবলী দিয়ে যাইতো। কিভাবে কোথায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে, কোন জায়গায় নির্যাতন করবে"।
মুক্তিযুদ্ধে এ ধরনের ভূমিকার কথা বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। তবে রাজনীতিতে তিনি ছাত্রজীবন থেকে সক্রিয় ছিলেন।
ইসলামী ছাত্র সংঘ নাম পরিবর্তন করে ছাত্রশিবির হয় ১৯৭৭ সালে। কামারুজ্জামান তখন তার সাধারণ সম্পাদক ও পরে ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিলেন তিনি।
এরপর জামায়াতের প্রথম সারির একজন নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পদে দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনীতির পাশাপাশি সাংবাদিকতার সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। সোনার বাংলা পত্রিকার সম্পাদক এবং দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।
সংগ্রাম পত্রিকায় তাঁর সহকর্মী হিসেবে কাজ করতে সালাহউদ্দিন মোঃ বাবর। তিনি বর্তমানে দৈনিক নয়াদিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন।
বাবর বলেন জামাতের রাজনীতিতে মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের অবস্থান সম্পর্কে- "পলিটিকালি শার্প ছিলেন ব্যক্তিগতভাবে''
''উনিতো সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন, তার ভূমিকা যতটা থাকা দরকার ততটাই ছিলো। এর বেশি ছিলনা। কারণ জামাততো আমীর নির্ভর পার্টি'', বাবর বলেন।
২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত বছরের জুন মাসে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল।
একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী ৭ টি অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।