ফিল্ম নির্মাণে এখন আর ফিল্মের প্রয়োজন নেই
‘ডিজিটাল কখনই ফিল্মকে ছুঁতে পারবে না’ –এই জাতীয় কথা নিকট অতীত পর্যন্ত শোনা গেলেও এখন পুরোটাই হাস্যকর। ফিল্ম প্রযুক্তির সম্পূর্ণরূপে বিদায় নেওয়াটা এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র।
ইতোমধ্যেই চিন সকল প্রকার ফিল্ম ক্যামেরার প্রোডাকশান বন্ধ করে দিয়েছে। এর আগে ২০০৪ সাল থেকে ফিল্ম ক্যামেরা বন্ধ করেছে “ক্যামেরা অফ দ্যা ইয়ার” পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘কোডাক’। একই সময় দেওলিয়া হয়েছে জার্মানির ‘আগফা-গেভারট’ এবং ‘আগফা-ফটো’ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।
২০০৬ সাল থেকে ‘নাইকন’ তাদের ফিল্ম ক্যামেরা বন্ধ করে দিলেও স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছে দুটো মডেল- ‘এফ এম ১০’ এবং ‘এফ ৬’। ‘কনিকা- মিনোলটা তাদের কালার ফিল্ম উৎপাদন বন্ধ করেছে ২০০৭ সালে। ২০০৫ সালে কোডাক কর্পোরেশনের এক-তৃতীয়াংশ কর্মচারীকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের ঠাই হয়েছে বিভিন্ন ‘ডিজিটাল ইমেজ ইন্ডাস্ট্রি’-তে। অবশেষে কোডাক ‘ব্যাংক করাপ্টেড’ হয়েছে ২০১২ সালে।
অন্ধকারের পিঠে আলোর মতো- আবির্ভাব হওয়ার মাত্র তিন দশকের মধ্যেই প্রায় পুরো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি দখলে নিয়ে নিয়েছে ‘ডিজিটাল’। এমন কী আমাদের দেশেও এখন খুব সহজেই পাওয়া যাচ্ছে ‘ফোর কে রেজুলেশন’-এর ক্যামেরা। আমরা এখন ‘পোস্ট’-এর কাজ করছি ‘দ্যা ভিঞ্চি’ দিয়ে। আমাদের দেশেও এখন শতাধিক ডিজিটাল সিনেমা হল। যদিও ‘স্টার সিনেপ্লেক্স’ এবং ‘ব্লক বাস্টার’ ব্যতীত বাকি হলগুলোর কোনটাই যথার্থ ‘ডিজিটাল হল’ নয়। তারপরেও বলব আমরা এগুচ্ছি।
তারেক মাসুদের ‘অন্তর্যাত্রা’, রাকিবুল হাসানের ‘লিলিপুটরা বড় হবে’, নুরুল আলম আতিকের ‘ডুবসাতার’ দিয়ে যে ‘ডিজিটাল চলচ্চিত্র’ আন্দোলনের সূচনা তাকে চূড়ান্ত রুপ দিয়েছে মোরশেদুল ইসলাম এর ‘প্রিয়তমেসু’। বাংলাদেশে প্রথম সেন্সরপ্রাপ্ত ডিজিটাল সিনেমা হিসেবে ‘প্রিয়তমেসু’-র নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে গেছে।
এফডিসির বানিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রগুলোও এখন ডিজিটাল প্রযুক্তিতে তৈরি হচ্ছে। এমন কী সরকারের অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলোও এখন আর ডিজিটালে নির্মাণ করতে কোনও বাঁধা নেই।
ডিজিটালের এই অগ্রগতি সত্ত্বেও চলচ্চিত্রে এই প্রযুক্তির ব্যবহার সম্বন্ধে পরিস্কার ধারণা নেই অনেকেরই। তাদের কথা ভেবেই ‘ফিল্ম উইদাউট ফিল্ম’ নামে একটা প্রতিষ্ঠান শুরু করতে যাচ্ছে ‘ডিজিটাল ফিল্ম নির্মাণ’-এর একটি সংক্ষিপ্ত কর্মশালা। ৭ দিনের এই কর্মশালাটি ১৪ নভেম্বর শুরু হয়ে চলবে টানা ২০ নভেম্বর পর্যন্ত। ক্লাস হবে প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। আগ্রহীদের ৭ নভেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র পাওয়া যাবে ‘ফিল্ম উইদাউট ফিল্ম’-এর কার্যালয়- ১০৮ নিউ এলিফেন্ট রোড-এর দোতলায়। কোর্স ফি- সাধারণের জন্য ৭০০০ টাকা এবং ছাত্রদের জন্য ৫০০০ টাকা। কোর্সটিতে থিওরির পাশাপাশি প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস থাকবে। কোর্সে অংশগ্রহণকারীরা নির্মাণ করবে ‘সল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র’। নির্মিত চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী এবং সার্টিফিকেট বিতরণের মাধ্যমে কর্মশালার সমাপ্তি ঘটবে।
‘ফিল্ম উইদাউট ফিল্ম’- নামকরণ সম্পর্কে আয়োজকদের একজন জানান, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিল্ম নির্মাণে যেহেতু কোনও র -ফিল্মের প্রয়োজন হয় না, তাই আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম রেখেছি ‘ফিল্ম উইদাউট ফিল্ম’। এই প্রতিষ্ঠান থেকে পরবর্তীতে – চিত্রনাট্য, সিনেমাটোগ্রাফি, সম্পাদনা, টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রযোজনাসহ বিভিন্ন সংক্ষিপ্ত কর্মশালার আয়োজন করা হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।