ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে ঐক্যের ডাক
ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ পুনর্নির্বাচিত হয়ে সকল দলকে ঐক্যের সাথে কাজ করার আহ্বানের ডাক দেন। বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশে গতকাল রবিবার প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দিলমা রুসেফ জয়ী হন।
সোমবার বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশটিতে গতকাল রবিবার অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৫১ দশমিক ৬৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির রুসেফ। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মধ্য ডানপন্থী সোশ্যালিস্ট পার্টির এসিও নেভিস পেয়েছেন ৪৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ ভোট।
নির্বাচনের পর দিলমা রুসেফ বলেন, বর্তমান অবস্থান থেকেও তিনি আরও ভালো প্রেসিডেন্ট হতে চান। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাইলে দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ব হওয়ার আহ্বান জানান। ব্রাজিলের রাজনৈতিক সংস্কার অবশ্যই জরুরি।
ব্রাজিলে পরিবর্তন আনতে সংলাপের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই বামপন্থী প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি ভোটারদের প্রত্যাশা সম্পর্কে জানেন।
রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় উৎফুল্ল জনতার উদ্দেশে রুসেফ বলেন, সংলাপের জন্য এই প্রেসিডেন্ট খোলামেলা। এটাই আমার দ্বিতীয় মেয়াদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
২০১০ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন রুসেফ। দেশটির দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে তিনি বেশ জনপ্রিয়। তবে দুর্নীতি, বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনে বিপুল ব্যয়, নিম্ন মানের জনসেবা প্রভৃতি কারণে সম্প্রতি প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি।
গত ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পেলেও সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মতো ভোট পাননি রুসেফ বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যায়। এরই পেক্ষিতে তাঁকে মধ্য ডানপন্থী প্রার্থী এসিও নেভিসের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় মুখোমুখি হতে হয়। প্রথম দফায় রুসেফ ৪২ শতাংশ এবং তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নেভিস পান ৩৪ শতাংশ ভোট। অন্য প্রার্থী পরিবেশবাদী মারিনা সিলভা পান ২১ শতাংশ ভোট। দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে কোনো প্রার্থীকে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেতে হয়।
দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের প্রচারণা গত শুক্রবার রাতে শেষ হয়। এদিন দুই প্রার্থীর মধ্যে তুমুল বাক্যবাণ ছোড়াছুড়ি হয়। দুজনের চূড়ান্ত পর্বের বিতর্কে ওয়ার্কার্স পার্টির ১২ বছরের শাসনামলে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগের প্রসঙ্গ তুলে রুসেফকে কাবু করেন নেভিস।
বিতর্কের শুরুতেই তিনে বলেন,রুসেফ পেট্রোব্রাসের কয়েক শ কোটি ডলারের একটি প্রকল্পে অর্থ কেলেঙ্কারির বিষয়ে সবকিছুই জানতেন। তিনি সেই দুর্নীতিকে সমর্থন করেছেন।
রুসেফ বলেন, এ কথাগুলি সম্পূর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন, এর কোন প্রমান কেউ দিতে পারবে না।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট রুসেফ হচ্ছেন সাবেক মার্ক্সবাদী গেরিলা। প্রায়ই হুগো চাভেজের প্রশস্তি গান তাঁকে ‘লাতিন আমেরিকার মহান নেতা’ আখ্যায়িত করে।
রুসেফের দল ওয়ার্কার্স পার্টি ১২ বছর ধরে ক্ষমতায়। এই সময়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে অনেক জনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে চার কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। তবে রুসেফ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর চার বছরে ব্রাজিলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। সম্ভবত ব্রাজিল ইতিমধ্যে মন্দায় পড়ে গেছে। বাসভাড়া বৃদ্ধি ও সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদে গত বছর লাখ লাখ লোক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে।
লাতিন আমেরিকায় কোনো প্রেসিডেন্ট পুনর্নির্বাচিত হওয়ার চেষ্টা করে হেরে গেছেন, এমন নজির নেই বললেই চলে। এমনকি চরম সংকটের মধ্যেও তাঁরা উতরে গেছেন। পুনর্নির্বাচিত হয়ে রুসেফও এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করলেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।