- হোম
- >
- কৃষিজ ও প্রাণিজ
- >
- পোকার আক্রমন ঠেকাতে না পেরে বেগুন চাষীরা দিশেহারা
পোকার আক্রমন ঠেকাতে না পেরে বেগুন চাষীরা দিশেহারা
চলতি মৌসুমে ১ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছিলাম, এ ক্ষেত থেকে পরপর দুদিন দুহাটে ২ মন বেগুন তোলার পর, পরবর্তী হাটের জন্য বেগুন ক্ষেতে গিয়ে দেখি নিজেদের তরকারী খাওয়ারও বেগুন নেই। যা পেয়েছি তাতে শুধুই পোকা। ক্ষেতজুড়ে বেগুন গাছের পোকার আক্রমন ঠেকাতে গিয়ে ওষুধ দিতে দিতে হয়েছি ফেরাল। এ পোকা দমনের জন্য দিনে দু’বার ওষুধ দিয়েও কাজ হয়নি। কত খাবি খা এ শেষমেশ দিশেহারা হয়ে ক্ষেতে আর কোন ওষুধ দিই না। নিজ জমিতে এ চাষ করতে যেয়ে খরচের মাত্রা ২৬ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এ টাকা উঠা তো দুরের কথা, খরচের অর্ধেক উঠবে কিনা তা আমার সন্দেহ।
এই গ্রামের চাষীদের চাষ দেখভালের কার্যে নিয়োজিত কৃষি স্যারের খোঁজ নেওয়া আমাদেরই দরকার। কারণ পাঁয়ে ধুলোকাঁদা লেগে যাওয়ার ভয়ে আমাদের স্যার পাঁকায় পাঁকায় আসেন আর পাঁকায় পাঁকায় যান।
এ কথাগুলো এক-নাগাড়ে মনের দু:খে বললেন, দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়াধীন কুমারী দোহা গ্রামের ছলেমান আলীর ছেলে ক্ষতিগ্রস্থ বেগুনচাষী আব্দুল কুদুস।
এ সময় তিনি আরো বলেন, বেগুনের পোকা দমনের জন্য দোকানীরা নিপ্রোটিন নামক এক বোতল ওষুধ ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা দাম নেয়। উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টের কীটনাশক দোকানীদের পরামর্শে ওষুধ ক্রয় করে থাকি এবং উনারা যেভাবে বলেন সেভাবেই ক্ষেতে ব্যবহার করি। তারপরও হয়নি কোনই কাজ। তাই বাধ্য হয়ে ক্ষেতে ওষুধ দেয়াই বন্ধ করে দিয়েছি।
উপজেলা কৃষি অফিসের সরণাপন্ন হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে ব্যঙ্গত্তর করে বলেন, আমরা গরীব চাষী। আমাদের অফিসে গিয়ে উনাদের অবগত করা মানে এক বেলার কাজ বন্ধ। উনারা কি এসব জানেন না, হাট-বাজার থেকে উনারা কি বেগুন কিনে খান না! এই ঘটনা যদি ভারতে হতো তাহলে কি হতো জানেন? এই তো গেলো বছরের কথা, ওই দেশের আমার এক আত্মীয়র ধানে গাছে পোকা লেগেলো, ওই পোকা মাততি ওই দেশের সরকার ধান কাটা মেশিন দিয়ে ওই পোকালাগা ধানী জমির আশপাশের ১০/১২ বিঘের ফলন্ত ধানগাছ কেটে ফেলেছিলো। ক্ষতিপুরণসহ লভ্যাংশ ওই জমির মালিকের প্রত্যেককে নগদ টাকা ধইরে দিইলো। আর আমাদের এত বড় একটা বিষয় কিন্তু কারো কোনই মাথাব্যাথা নেই।
উপজেলার জয়রামপুর মল্লিক পাড়ার রবিউল হোসেনের ছেলে মুনতাজ, একই পাড়ার সামসুল ও শহিদুল এবং বারুই পাড়ার ওহিদ বক্স নামের বেগুনচাষীগণ শনিবার দুপুরে বলেন, এলাকার কীটনাশক দোকানীদের পরামর্শে নিপ্রোটিন, সেভেন, ভলিওম ও বিদায় নামক বালাইনাশক আক্রান্ত জমিতে দিয়েও কাজ হয়নি। খালিখালি এক গাদা টাকার শ্রাদ্ধ। আবার কোন কোন কীটনাশক ওষুধ কোম্পানীর লোকেরা তাদের কোম্পানীর তৈরী ওষুধ হাতে নিয়ে খুব-ভালো,খুব-ভালো, করতে-করতে একদম গ্রামে যেয়ে টাকা নিয়ে ওষুধ দিয়ে এসেছে। তাতেও কোন কাজ হয়নি।
বর্গা জমি নেয়া বাদে এক বিঘার বেগুন চাষে ২৪/২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। কপাল ভালো হলে এ খরচের টাকা বাদ দিয়ে এর সমপরিমান টাকা লাভ হয়। কিন্তু এবার গুড়ে বালি। গত ২ দিন থেকে আবহাওয়া একটু ঠান্ডা হওয়ায় পোকার উপদ্রব কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তার আগে মাঠে গিয়ে যদি দেখতেন তাহলেই বুঝতেন, এই পোকা প্রতিটি বেগুন গাছের মাথার কচি ডগা কিভাবে নষ্ট করেছে। ক্ষেত থেকে ১ ঝুড়ি বেগুন তুলে তাতে দেখা গেছে ৪ ভাগের ৩ ভাগে পোকা আর ১ ভাগ কিছুটা ভালো হলেও ক্যাট বেগুনে ভরা। এগুলো বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে গিয়ে ব্যপারীদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি পানির দরে।
কলোনী পাড়ার জান মোহাম্মদের ছেলে জামু বলেন, আমি ৩ বিঘা জমিতে বেগুন লাগিয়ে খরচ হয়েছে ৬২ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত বেগুন বিক্রি করেছে মাত্র ১৬ হাজার টাকায়। জমি বেগুন থেকে এখনো মাস দেড়েক উঠানো যাবে। আবহাওয়া যদি এমনই থাকে তাহলে আমি আশাবাদি খরচের টাকা উঠে আসতে পারে।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌর এলাকায় চলতি মরসুমে বেগুনের আবাদ হয়েছে ৪৭০ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২৫ হেক্টর, একই লক্ষমাত্রা গতবারেও গন্য ছিলো। হিসেবে দেখা গেছে, সবথেকে বেশী বেগুনের আবাদ হয় এই হাউলী ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নে গতবারের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১০০ হেক্টর। চলতি মরসুমের এ অবধি হাউলী ইউনিয়নের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫ হেক্টর। কৃষকদের সুবিধার্থে এ ইউনিয়কে ৩টি ব্লকে বিভক্ত করা হয়েছে। তা যথাক্রমে হাউলী, জয়রামপুর ও লোকনাথপুর। জয়রামপুর ব্লকের লক্ষমাত্রা সব থেকে বেশী। তবে গতবারের থেকে ১০ হেক্টর কমে এসে এবার দাড়িয়েছে ৫০ হেক্টর। গ্রামজুড়ে বেগুন চাষে ক্ষতিগ্রস্থ কুমারী দোহা গ্রামটি জয়রামপুর ব্লকের অধিন এবং তা দেখভালের দ্বায়িত্বে নিযুক্ত আছেন, দামুড়হুদা উপজেলার কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো: সাইফুল ইসলাম।
বেগুন গাছের কচি ডগা আর কচি বেগুন আক্রমন কারী পোকার নাম কি এবং এর থেকে কিভাবে পরিত্রান পাওয়া যায়? এ বিষয়টি নিয়ে দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার সুফি মো: রফিকুজ্জামান বলেন, সাধারণত এলাকার চাষীরা একে বেগুন পোকা বলে। মুলত মথের ক্রীড়া বেগুন গাছের কচি ডগা খেয়ে ফেলে এবং কচি বেগুনগুলোতে ছোট ছোট ছিদ্র করে ভেতরে ঢোকে। বিভিন্ন আবহাওয়ার কারণে এদের বিস্তার বৃদ্ধি পায়। কীটনাশক ওষুধ দ্বারা এদের পুরো বংশ ধ্বংস করা সম্ভব নয়। কারণ বেগুন পোকার মথের ক্রীড়া বেগুনের মধ্যে থাকে, অবশ্য বাইরে থাকা পোকাগুলোর মরণ হতে পারে।
তবে এ পোকা নিধনে সব থেকে বেশী কার্যকর হবে এক বিঘা জমির বেগুন ক্ষেতে ১০/১২টি ফেরোম্যান সেক্স ট্রাফ ব্যবহার করলে। এটি একটি পোকা মারা ফাঁদ, যা পোকার বংশকে ধংস করতে অত্যান্ত কার্যকর। এর ব্যবহার বিধি: ১টি কাঁচের বোয়োমের তলে সাবান পানি রেখে, বোয়োমের মধ্যে রাখতে হয় মাত্র ২৫ টাকা দামের (এক ধরণের সুগন্ধ) ওষুধ। এরপর আকান্ত বেগুন ক্ষেতে বোয়োমটি ঝুলিয়ে রাখলে বয়োমের দুপাশে থাকা ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে আসা ওষুধের ঘ্রানে ছুটে যায় মথেরা বা বেগুন পোকারা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মথগুলো এ সাবান পানিতে পড়ে মারা যায়। মথের বংস ধংশ হলে ক্রীড়ারা (বেগুনের ক্ষতিকর পোকা) বিন্তার লাভ করতে পারে না।
এখানে উল্লেখ যোগ্য: বেগুনে কীটনাশক ব্যবহার করলে এর প্রতিক্রিয়া ৭ দিন পর্যন্ত থাকে অথচ আমরা বেগুন ক্ষেতে আজ ওষুধ দিয়ে সেই ক্ষেত কালই বেগুন তুলি। এ বেগুন খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।