- হোম
- >
- ইতিহাস-ঐতিহ্য
- >
- কুমিল্লার মনোহর আইচ - ১৯৫২-এর মিষ্টার ইউনিভার্স !!
কুমিল্লার মনোহর আইচ - ১৯৫২-এর মিষ্টার ইউনিভার্স !!
ইতিহাসে ফিরে যাবার আগে একটু দেখে নেই আমাদের জীবনকালেই কোন পাঁচজন বাঙালী বাংলাকে বিশ্ব-দরবারে গৌরবে আসীন করেছেন। তাঁদের একজন কুমিল্লা, দুইজন চট্টগ্রামের ও আরেকজন আধা-চট্টগ্রামের। চট্টগাম-বাসীরা অবশ্যই গর্ব করতে পারেন !!! কথায় বলে, "জহুরী মুক্তো চেনে, গাধা চেনে মুলা" ! নাকের ডগায় আলীগ-বিএনপি-জামাতের মুলো'র বাইরে আমরা কোনো মুক্তো দেখতে পাইনা, আমরা কি গাধা হয়ে যাচ্ছি? আমাদের পাঁচ পাঁচজন বঙ্গরত্নের তিনজনকেই কেন আমরা জানিনা- চিনিনা?? মহা নায়কদের সম্মান না দিলে নুতন মহানায়ক জন্মায় না একথা আমরা কবে বুঝব?
কুমিল্লার গহীন গ্রাম ধুমচি-তে তাঁর জন্ম ১৯১৩ সালে, এখনো বেঁচে আছেন পশ্চিমবঙ্গে দিব্যি সুস্থ সমর্থ। তিন তিনবার এশিয়ান প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ পদক পেয়েছেন, মিষ্টার ইউনিভার্স হয়েছেন ১৯৫২ সালে।
মনোহর আইচ
মনোহর আইচ (জন্ম ১৭ই মার্চ,১৯১২) একজন ভারতীয় বডিবিল্ডার। তিনি ১৯১৩ সালের ১৭ই মার্চ অবিভক্ত বঙ্গের কুমিল্লা জেলার ধামতি নামক এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২সালে আয়োজিত মিস্টার ইউনিভার্স-গ্রুপ ৩ বিভাগে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। বডি বিল্ডিং এর ক্ষেত্রে এশিয়ান গেমসে তিনবার স্বর্ণ পদক তাঁর দখলে। মাত্র ৪ফুট ১১ইঞ্চি (প্রায় ১.৫০মিটার) উচ্চতা হওয়ার কারণে তাঁকে 'পকেট হারকিউলিস' নামে অভিহিত করা হত। তাঁর বুকের ছাতি ৫৪ইঞ্চি (১৪০সে.মি.) ও কোমর হল ২৩ইঞ্চি (৫৮ সে.মি.)। বর্তমানে তিনি কলকাতার বাগুইহাটিতে বাসরত।
প্রথম জীবন
ছোটবেলা থেকেই তাঁর শারীরিক শক্তি সম্বন্ধীয় খেলাধূলা যেমন কুস্তি, ভারোত্তোলনের প্রতি ছিল অপার আগ্রহ। কিন্তু ১২ বৎসর বয়সে কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। কিন্তু শীঘ্রই তিনি ব্যায়ামের মাধ্যমে তাঁর স্বাস্থ্যের পুনরুদ্ধারে সমর্থ হন। শরীরকে সুগঠিত করার লক্ষ্যে পুশ-আপ্স, স্কোয়াটস, পুল-আপ্স, লেগ রেইসেস এবং ঐতিহ্যগত সিট-আপ্স শুরু করেন। ঢাকার জুবিলি স্কুলে তিনি বিদ্যা শিক্ষা করতেন। বিদ্যালয়ে পাঠরত অবস্থায় তিনি শারীরিক কসরতের জন্য রূপলাল ব্যায়াম সমিতিতে ভর্তি হন। এরপর ঢাকায় থাকাকালীন 'ফিজিক অ্যান্ড ম্যাজিক' নামক প্রদর্শনীতে পি.সি.সরকারের সাথে ক্রীড়াকৌশলাদি প্রদর্শন শুরু করেন। দাঁত দিয়ে ইস্পাত বাঁকানো, গলার সাহায্যে বল্লম আনমিত করা অথবা তরোয়ালের উপর উদর অধিস্থাপিত করার মত কৌশলও প্রদর্শন করতেন।
কর্মজীবন
মনোহর আইচ ১৯৪২ সালে রয়্যাল এয়ার ফোর্সে যোগদান করেছিলেন। রয়্যাল এয়ার ফোর্সের রিয়াব মার্টিনের দ্বারা ওয়েট ট্রেনিং এর ব্যাপারে তিনি জ্ঞানলাভ করেন। এরপর কঠোর অনুশীলনের দ্বারা নিজের শরীরকে আরও সুঠাম ও সুগঠিত করে তোলেন। তাঁর ঈর্ষনীয় সুঠাম চেহারার জন্য তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ আধিকারিকদের প্রশংসাভাজন ছিলেন। এতদগুণের অধিকারী মনোহর বাবু একজন দেশপ্রেমিকও ছিলেন। একদা এক ব্রিটিশ আধিকারিক ঔপনিবেশিক অত্যাচারের স্বপক্ষে কথা বলায় তিনি তাকে চড় মারেন এবং এই কাজের জন্য তাঁকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। তিনি জেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শারীরিক অনুশীলন করতেন দেখে কারাগার কর্তৃপক্ষ ওনার জন্য বিশেষ খাদ্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করেছিলেন।
১৯৫০সালে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে তিনি মিস্টার হারকিউলিস খেতাব জেতেন। ১৯৫১ সালে আয়োজিত মিস্টার ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন কিন্তু ১৯৫২ সালে এই একই প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে মিস্টার ইউনিভার্স খেতাব জেতেন। ১৯৫৫ ও ১৯৬০ এর মিস্টার ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। ১৯৬০ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন বডি বিল্ডিং এর উপর বিভিন্ন প্রদর্শনী করতে থাকেন। তাঁর শেষ প্রদর্শনী ছিল ২০০৩ এর ৯০ বৎসর বয়সে।
কৃতিত্বপূর্ণ কর্ম
তাঁর প্রদর্শিত কলা কৌশলগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ৩০০কি.মি. স্কোয়াট করা। মাংসপেশির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রদর্শন, এবং ১৫০০ পাতার একটি বই ছিঁড়ে ফেলা। তিনি তাঁর শারীরিক কসরত দেখাবার উপলখ্যে সারা পৃথিবী ভ্রমণ করেছেন এবং তাঁর শক্তি এবং মাংস পেশির নিয়ন্ত্রণের কারণে বিশ্বে প্রসংশিত ছিলেন এবং আজও আছেন। বর্তমানে এই বৃদ্ধ বয়সেও তিনি একটানা ৯০ মিনিট ব্যায়াম অনুশীলন করতে পারেন এবং তিনি এই কাজগুলি সম্পাদন করেন তাঁর কলকাতাস্থিত নিজের জিমখানা, ‘দ্য ফিজিক’এ। তাঁর এই জিমখানা থেকেই বের হয়েছেন ভারতীয় বডি বিল্ডিং এর রত্ন সত্যেন দাস, সত্য পাল, সন্দীপন সিনহা এবং হিতেশ চ্যাটার্জীর মত মানুষেরা। মনোহর বাবুর খাদ্য তালিকায় রয়েছে ভাত (এবং অন্যান্য স্বেত সার জাতীয় খাদ্য), ডাল, বিভিন্ন সব্জি, ফল যেমন আম, কলা, কাঁঠাল ও পেয়ারা। আমিষ জাতীয় খাদ্যের মধ্যে তাঁর পছন্দের তালিকায় রয়েছে মিষ্টি জলের টাটকা মাছ।
ব্যক্তিগত জীবন
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই পুত্রের জনক। এক পুত্র তাঁর নিজের আখড়া চালান এবং অন্য পুত্র ‘হোলিস্টিক হেলথ’ নামে একই স্থানে একটি ফিটনেস সেন্টার চালান।
লেখক: ডিরেক্টর, শারিয়া আইন ও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মুসলিম কানাডিয়ান কংগ্রেস
সূত্র: উইকিপিডিয়া
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।