তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনিরের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ১২ আগস্ট, ২০১৪
প্রিন্টঅঅ-অ+
উপমহাদেশের অন্যতম খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পাদক মিশুক মুনিরের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল বুধবার।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তারাসহ আরও তিন জন প্রাণ হারান।
নতুন চলচ্চিত্র ‘কাগজের ফুল’-এর শুটিংয়ের স্থান দেখতে তারেক মাসুদ মিশুক মুনিরসহ সহকর্মীদের নিয়ে মানিকগঞ্জে যান। ফেরার পথে মানিকগঞ্জেই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তারা।
তারেক মাসুদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচী। এ উপলক্ষে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ (এফএফএসবি) ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী যৌথভাবে তারেক মাসুদ স্মরণে আজ থেকে দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। একাডেমীর জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটা, বিকেল পাঁচটা ও সন্ধ্যা সাতটায় তারেক মাসুদের তিনটি চলচ্চিত্র, যথাক্রমে ‘মাটির ময়না’, ‘মুক্তির গান’ ও ‘অন্তর্যাত্রা’ প্রদর্শিত হবে।
কাল বুধবার বিকেল চারটায় প্রদর্শিত হবে রানওয়ে চলচ্চিত্রটি। সন্ধ্যা ছয়টায় তারেক মাসুদসহ দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালন, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় স্মরণ বক্তৃতা ও সন্ধ্যা সাতটায় প্রসূন রহমান পরিচালিত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘ফেরা’ প্রদর্শিত হবে। স্মরণ বক্তৃতা দেবেন চলচ্চিত্র গবেষক জাকির হোসেন রাজু ও ফাহমিদুল হক। বিষয় ‘তারেক মাসুদের প্রাসঙ্গিকতা : বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এবং চলচ্চিত্রচর্চা’।
তারেক মাসুদ ১৯৮৫ সালের শেষ দিকে বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানকে নিয়ে নির্মাণ করেন জীবনের প্রথম প্রামাণ্যচিত্র ‘আদম সুরত’। এরপর ১৯৯৫ সালে নির্মাণ করেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসানির্ভর দু’টি প্রামাণ্যচিত্র ‘মুক্তির গান’ ও ‘মুক্তির কথা’।
তিনি ২০০২ সালে নির্মাণ করেন প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘মাটির ময়না’। মুক্তিযুদ্ধ আশ্রিত নান্দনিক এই সিনেমা কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হওয়ার পাশাপাশি জিতে নেয় সমালোচক পুরস্কার। এছাড়া প্রথম বাংলাদেশী সিনেমা হিসেবে অস্কার প্রতিযোগিতায় বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ২০০৪ সালে ছবিটি ব্রিটেনের ডিরেক্টরস গিল্ড পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। এর পর তারেক মাসুদ ২০০৬ সালে নির্মাণ করেন ‘অন্তর্যাত্রা’। সর্বশেষ নির্মাণ করেন ‘রানওয়ে’ ছবিটি। প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নতুন ছবি ‘কাগজের ফুল’ নির্মাণের। এ ছাড়াও তারেক মাসুদের উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হচ্ছে- ‘সোনার বেড়ি’, ‘একুশে’ ও ‘নরসুন্দর’।
স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ ও তারেক মিলে ঢাকায় গড়ে তুলেছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠান অডিও ভিশন।
১৯৫৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানায় তারেক মাসুদের জন্ম। তারেক মাসুদের শৈশবে শিক্ষাজীবন শুরু হয় মাদ্রাসায়। ভাঙ্গা ঈদগাঁহ মাদ্রসায় প্রথম পড়াশোনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকেছেন। ১৯৮৯ সালে বিয়ে করেন ক্যাথরিন মাসুদকে। তিনি একজন মার্কিন নাগরিক । তাঁদের একমাত্র সন্তান মাসুদ নিষাদ।
অন্যদিকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পাদক মিশুক মুনির শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনির চৌধুরীর ছেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের পাঠ চুকিয়ে ওই বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। শিক্ষকতার পাশাপাশি ক্যামেরা হাতে কাজ করা ছিল তার আনন্দ। পুরো নাম আশফাক মুনীর চৌধুরী।
চিত্রগ্রাহক ও সম্প্রচার সাংবাদিকতার পথিকৃৎ মিশুক মুনীর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিবিসি’র হয়ে কাজ করেন। একুশে টেলিভিশন চালু হলে এ অঙ্গনের অন্যতম যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে তিনিই দায়িত্ব পান সংবাদ বিভাগ পরিচালনার। প্রখ্যাত সাংবাদিক সায়মন ড্রিংয়ের সঙ্গে হাতে গড়ে তোলেন এই প্রতিষ্ঠানটি।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।