মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়া জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। এই নীতিমালা অনুযায়ী, সশস্ত্র বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ করা যাবে না। সশস্ত্র বাহিনী এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত কোনো ব্যক্তির ওপর কটাক্ষ করা বা অবমাননাকর দৃশ্য বা বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। অপরাধীদের দণ্ড দিতে পারেন এমন সরকারি কর্মকর্তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার মতো দৃশ্য বা বক্তব্যও প্রচার করা যাবে না। জনস্বার্থ বিঘ্নিত হতে পারে এমন কোনো বিদ্রোহ, নৈরাজ্য, হিংসাত্মক ও বিদ্বেষমূলক ঘটনা প্রচার করা যাবে না সম্প্রচারের মাধ্যমে। এছাড়া টক-শোতে অসত্য এবং বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করা যাবে না।

 

নীতিমালায় সামাজিক দায়বদ্ধতা, ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে সংবাদ ও অনুষ্ঠান প্রচার করার কথা বলা হয়েছে। সম্প্রচারে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আদর্শ ও সামাজিক মূল্যবোধ নীতিমালায় সমুন্নত রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন সামরিক, বেসামরিক বা সরকারি তথ্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

 

কিন্তু এরই মধ্যে নানা মহল থেকে এই সম্প্রচার নীতিমালা বিরোধের মুখে পড়েছে। পড়েছে সমালোচনার মুখে। শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, ‘‘সরকার মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের অধিকার হরণ করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছে বলেই সম্প্রচার নীতিমালা করেছে।''

 

তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ ১৯৭৫ সালে বাকশাল কায়েম করে সব পত্রিকা বন্ধ করে চারটি পত্রিকা তাদের হাতে রেখেছিল। এখনও তারা তাই করছে। এ অবৈধ সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করে দিচ্ছে।''

 

তাই তিনি সরকারের করা সম্প্রচার নীতিমালা বাতিল করে একটি স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ সম্প্রচার কমিশন গঠনের দাবি জানান। বলেন, সেই কমিশনই সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে একটি গ্রহণযোগ্য নীতিমালা তৈরি করবে।

 

এদিকে ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেছেন, ‘‘দুনীতি আর গুম-খুন এ সরকারের উন্নয়ন। এ সব অপকর্মের চিত্র যাতে গণমাধ্যমে না আসে, সেজন্যই সম্প্রচার নীতিমালার নামে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের ষড়যন্ত্র হচ্ছে।''

 

তিনি বলেন, ‘‘সাংবাদিক সমাজ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। তাঁদের মধ্যে ঐক্য থাকলে সম্প্রচার নীতিমালা করা সম্ভব হতো না। সাংবাদিকরা হলো গণতন্ত্রের প্রাণ।'' সে কারণেই তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই নীতিমালা প্রতিহত করার আহ্বান জানান।

 

অন্যদিকে বিএনপিপন্থি সাংবাদিক ইউনিয়ন এরই মধ্যে এই নীতিমালার বিরোধিতা করে আন্দোলন শুরু করেছে। তারা ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ এবং মিছিল করে নীতমালা বাতিলের দাবি জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, এ নীতিমালা বাতিল না হলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের কথাও বলেছে।

 

আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগপন্থি সাংবাদিক ইউনিয়ন সম্প্রচার নীতমালা করায় সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে কিছু বিভ্রান্তি দূর করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘স্বাধীন দেশের উপযোগী স্বাধীন সম্প্রচার নীতিমালা চাই আমরা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এ নীতিমালা নিয়ে এরই মধ্যে কিছু বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে এবং বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এই যেমন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি কটাক্ষমূলক কোনো বক্তব্য ও ছবি দেখানো যাবে না, বিচার করার ক্ষমতা আছে এমন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রচার করা যাবে না, বিজ্ঞাপন প্রচারের ব্যাপারে শর্তারোপ ইত্যাদি।''