'আইএসআইএল' সুন্নি গ্রুপ নয়: ইসলামী বিশেষজ্ঞ মহল
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ০৯ আগস্ট, ২০১৪
প্রিন্টঅঅ-অ+
পশ্চিমা প্রচারমাধ্যমগুলো সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইরাকে ব্যাপক মাত্রায় সক্রিয় হয়ে-ওঠা আল-কায়েদার নতুন সংস্করণ আইএসআইএল-কে 'সুন্নি' গেরিলা বা জঙ্গি দল বলে উল্লেখ করছে।
ইরাক ও সিরিয়াকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টায় জড়িত এই সন্ত্রাসী দল সম্পর্কে পশ্চিমা প্রচার যন্ত্রগুলোর কোনো কোনোটির সাম্প্রতিক খবরের শিরোনাম ছিল এরকম: 'মসুল দখল করলো সুন্নি ইসলামী জঙ্গিরা', 'সুন্নি গেরিলারা দখল করলো উত্তর ইরাকের শহর', 'ইরাকি সেনারা সুন্নি জঙ্গিদের অগ্রযাত্রা ঠেকানোর চেষ্টা করছে'!!!
এভাবে বহুজাতিক পশ্চিমা মিডিয়াগুলো ইরাকের সাম্প্রতিক যুদ্ধকে 'শিয়া-সুন্নি' সংঘাত হিসেবে তুলে ধরছে। তারা বলতে চাইছে যে মাত্রাতিরিক্ত উগ্রতার জন্য আল-কায়েদা থেকে বহিস্কৃতদের গ্রুপ আইএসআইএল-ই সংঘাতে সুন্নিদের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, আইএসআইএল কি কোনো সুন্নি সংগঠন?
বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞরাই বলছেন, না এই গ্রুপটি মোটেই সুন্নি গ্রুপ নয়। তাদের অনেকে এটাও বলছেন, আইএসআইএল নিজেকে ইসলামী গ্রুপ বলে দাবি করার কোনো অধিকারই রাখে না।
সম্প্রতি 'ট্রুথ জিহাদ রেডিও'কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইলিয়াস আবদুল আলিম বা (সাবেক) ডক্টর জন অ্যান্ড্রু মরো 'আইএসআইএল'-এর ইসলামি পরিচয়ের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে লিখেছেন: " 'আইএসআইএল'-এর জিহাদসহ কথিত বহু জিহাদই ইসলাম-ভিত্তিক নয়। বিশেষ করে আপনি যখন দেখবেন যে, কারা এই সব জিহাদিদের অর্থ দিচ্ছে, কারা তাদের সমর্থন দিচ্ছে ও তাদের পেছনে কারা রয়েছে তখন আর তাদের জিহাদি বলবেন না। পশ্চিমা ও উপনিবেশবাদী-সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো তাদের লক্ষ্যগুলো এগিয়ে নেয়ার জন্য কথিত জিহাদি ও ইসলামপন্থিদেরকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে বিভিন্ন সময়ে। অসচেতন এইসব পদাতিক বা স্থল সেনারা ভাবছেন তারা ইসলামের জন্যই যুদ্ধ করছেন (বা কতই না জান-কুরবান হচ্ছেন)! কিন্তু আপনারা যদি গভীরভাবে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন যে, এইসব সন্ত্রাসী আসলে ইসলামের শত্রুদের লক্ষ্যগুলোকেই এগিয়ে নিচ্ছে।"
নও-মুসলিম ডক্টর জন অ্যান্ড্রু মরো এটাও তুলে ধরেছেন যে, 'আইএসআইএল'-সদস্যদের আচার-আচরণ অতি স্পষ্টভাবেই অনৈসলামিক। মরো বলেছেন, 'আইএসআইএল'-এর সন্ত্রাসীরা নানা ধরনের যুদ্ধ-অপরাধ চালিয়ে সেগুলোর ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করতেও পছন্দ করে। অথচ ইসলাম এ ধরনের অপরাধকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। মরো বলেছেন: 'তারা তাদের নৈরাজ্য ও স্বৈরতান্ত্রিকতা নিয়ে গর্ব করে এবং এইসব আচরণকে ফিল্মে বা ভিডিওতে রেকর্ড করে। তারা এইসব চিত্র ইন্টারনেটেও আপলোড করে। তাদের রয়েছে নিজস্ব কিছু ওয়েবসাইট।'
তাকফিরি সন্ত্রাসীরা তাদের হাতে নিহত একজন সিরিয় সেনার কলিজা চিবিয়ে খাচ্ছে এমন দৃশ্যের ভিডিও প্রচার করেছে। এ ঘটনার কথা তুলে ধরে ডক্টর মরো বলেছেন, '(ইসলামের শত্রু) আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা ঠিক এই কাজটিই করেছিল। তোমরা সাহাবী ও নবী (সা.)'র অনুসরণ করছো না। বরং তোমরা অনুসরণ করছো মুশিরকদের বা বহু খোদায় বিশ্বাসীদের। এ ছাড়াও তারা একজন অসহায় মুসলিম নারীকে শ্বাসরূদ্ধ করে হত্যা করার দৃশ্য প্রচার করেছে। একজন নারীকে শ্বাসরূদ্ধ করে হত্যা করার সময় যারা 'আল্লাহু আকবার' বা আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ধ্বনি দিচ্ছিল তারা কারা?'
'আইএসআইএল'-এর সন্ত্রাসীরা তাদের অনৈসলামি তৎপরতা সম্পর্কে দম্ভ বা ঔদ্ধত্য প্রচার অব্যাহত রেখে সম্প্রতি ইন্টারনেটে কিছু ভিডিও প্রচার করেছে যাতে দেখা যাচ্ছে যে তারা এক হাজার ৭০০ জন বন্দি ইরাকি সেনাকে হত্যা করছে। 'আইএসআইএল'-এর প্রতি আনুগত্য করতে অস্বীকার করায় তারা আড়াই ডজন সুন্নি আলেমকে হত্যা করেছে। তাদের মধ্যে অন্তত কয়েক জন ছিলেন মুফতি ও মসজিদের ইমাম। আর তারা শিয়া মুসলমানদেরকে তো নির্বিচারে হত্যা করেই যাচ্ছে।
এইসব সন্ত্রাসী যদি সুন্নি মুসলমান হয়ে থাকে, তাহলে তারা কেন সুপরিকল্পিতভাবে সুন্নি ইসলামের নীতিগুলো লঙ্ঘন করছে? আইএসআইএল যে ইসলামের কথা বলছে তা মূলত ওয়াহাবি-সালাফিদের কথিত চরমপন্থি ইসলাম। এরা সুন্নিদের চারটি মাজহাবসহ ইসলামের ৫টি বড় মাজহাবকেই প্রত্যাখ্যান করে। তাহলে এরা কিভাবে নিজেদের সুন্নি বলে দাবি করতে পারে?
বাস্তবে গত ১,৪০০ বছর ধরে ইসলামের যে মূলধারাগুলো বিরাজ করছে সেসবের মূলনীতিগুলো পদদলিত করছে ওয়াহাবি তাকফিরি গোষ্ঠীসহ সাম্প্রতিক সময়ে গজিয়ে-ওঠা আইএসআইএল গোষ্ঠী। ইসলামের প্রতিষ্ঠিত মাজহাবগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ও [হযরত আলী (আ.)'র যুগের খারিজিদের মতই] এই মহান ধর্ম থেকে বেরিয়ে গিয়ে তারা এমন এক বিপজ্জনক অঙ্গনে প্রবেশ করেছে যে তারা মনে করছে এখন ইচ্ছামত বা যা খুশি তাই তারা নিজস্ব ফতোয়া বা আইন হিসেবে চাপিয়ে দিতে পারবে। তাই তারা এখন আইন বানিয়েছে যে, " খ্রিস্টান ও শিয়া মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করা বৈধ। শত্রুর লাশের ভেতরকার অঙ্গ খাওয়া জায়েজ। যৌনাচারের জন্য 'জিহাদি কন্যা বা কনেদের' বিয়ে করা যাবে এবং আধা ঘণ্টা পরই তাদের তালাকও দেয়া যাবে। খ্রিস্টান পাদ্রিদের ক্রুশে বিদ্ধ করে হত্যা করা যাবে। নারীকে শ্বাসরূদ্ধ করে হত্যা করা যাবে। বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গণহত্যা চালানো যাবে। যুদ্ধবন্দিদের পাইকারিভাবে মেরে ফেলাও বৈধ।'
কখনও কোনো সুন্নি তাদের ইতিহাসে এমন ফতোয়াকে সুন্নি ইসলামের নীতি হিসেবে স্বীকৃতি দেননি।
পাকিস্তানের বিশিষ্ট প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ও সুন্নি মুসলিম জাইদ হামিদ বলেছেন: আইএসআইএল এবং সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো সুন্নি নয়, বরং খারিজি মনোবৃত্তি-সম্পন্ন যারা সাম্রাজ্যবাদীদের ইসলাম-বিদ্বেষী কিছু পরিকল্পনা (ষড়যন্ত্র) বাস্তবায়ন করছে। (খারিজিরা হল তারা যারা শিয়া ও সুন্নি আলেমদের দৃষ্টিতে প্রচলিত ইসলামকে অস্বীকার করে তা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। আর এজন্যই তাদের বলা হয় খারিজি, বহুবচনে 'খাওয়ারেজ' তথা 'বের হয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা')
জাইদ হামিদ যুক্তি দেখান যে, আইএসআইএল-এর মতো চরমপন্থি গ্রুপগুলো পাকিস্তান, সিরিয়া ও ইরাককে অস্থিতিশীল করছে এবং এরা আসলেই ইসলামের সীমানা থেকে বেরিয়ে গেছে। তার মতে আসলে তারা ইহুদিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদীদের পক্ষ থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করছে।
তবে এটাও সত্য যে ইরাকের কিছু সরলমনা ও বিভ্রান্ত সুন্নি মুসলমান আইএসআইএল-কে সমর্থন করছে। এরা হচ্ছে মূলত সাদ্দামপন্থী ধর্ম-বিদ্বেষী বাথিস্ট যাদের কাছে কোনো ধর্মেরই মূল্য নেই। সাদ্দাম নিজেই ছিলেন একজন কট্টর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী যার আদর্শ ছিল স্ট্যালিন ও হিটলার। তার বাথ পার্টিও হল ধর্ম-বিদ্বেষী সেক্যুলার দল। সাদ্দাম ইসলামি জাগরণকে এত বেশি ঘৃণা করতেন যে ইরানে আয়াতুল্লাহ খোমেনী (র.)'র মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত শিশু-ইসলামী রাষ্ট্রটির ওপর (দীর্ঘ ৮ বছরের) যুদ্ধ চাপিয়ে দেন। এর উদ্দেশ্য ছিল ইসলাম যেন আবারও জীবিত হতে না পারে। তাই সাদ্দামের যেসব সমর্থক আইএসআইএল-এ যোগ দিয়েছে তাদেরকে সুন্নি বলাটা মারাত্মক ভুল। সাদ্দামের সেনারা আইএসআইএল-এর সদস্যদের মতই ইসলামের ঐতিহ্যবাহী দুই ধারা শিয়া ও সুন্নি উভয়েরই ঘোর বিরোধী। (সাদ্দাম নিজেও ইরাকের বহু শিয়া ও অনেক সুন্নি আলেমকে হত্যা করেছিলেন ইসলামি জাগরণ ঠেকানোর জন্য।)
সুন্নি মাজহাবের ভিত্তি হল পবিত্র কুরআন ও রাসুলের (সা.) সুন্নাহ বা হাদিস এবং মুসলমানদের ঐক্যমত্য বা ইজমা। নিহত শত্রুর কলিজা চিবিয়ে খেতে হবে –এটা রাসূল (সা.)'র সুন্নাহ নয়। মুসলিম জনমতও এমন কাজকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দেয় না।
বিশ্বনবী (সা.)'র হাদিসে ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি সহিষ্ণুতা, পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন ও নানা গোত্র এবং ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। বিশ্বনবীর (সা.) নেতৃত্বে প্রথম যে ইসলামী রাষ্ট্র গড়ে তোলা হয়েছিল তার ভিত্তি ছিল মদীনা সনদ। এই সনদে খ্রিস্টান ও ইহুদিদের সঙ্গে মুসলমানদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানসহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বণ্টন ও সমান মাত্রায় দায়িত্বও বণ্টনের কথা এসেছে।
মক্কা বিজয়ের পর বিশ্বনবী (সা.) তার জানের শত্রু সব কাফিরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। সেদিন অনেক সাহাবী রাসূলুল্লাহকে (সা.)কে পরামর্শ দিয়েছিলেন সব কাফেরকে নির্বিচারে হত্যা করতে। কিন্তু আত্মসমর্পনকারী শত্রুর কোনো ক্ষতি করার অনুমতি বিশ্বনবী দেন নি। অথচ আইএসআইএল নির্বিচারে গুলি করে এবং জবাই করে যেসব মানুষকে হত্যা করে তার ভিডিও প্রচার করছে তাদের সবারই হাত-পা বাঁধা থাকে। তাহলে এরা কোন্ নবীর অনুসারী যে, ইসলামি রাষ্ট্র ঘোষণা করার মতো ধৃষ্টতা দেখায়?
বিশ্বনবী (সা.)'র প্রকৃত সুন্নাহয় যুক্তি ও পরামর্শকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ ধর্ম বলপ্রয়োগকে কেবল (আত্মরক্ষার) শেষ পন্থা হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। মহানবী (সা.) ও তাঁর সাহাবিরা ১২ বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে ধর্ম প্রচার করেছেন। ইসলাম বিরোধীদের নানা নির্যাতন ও স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ সত্ত্বেও তারা সংঘাতে জড়াননি। কিন্তু আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে মুসলমানদের পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায় তখনই মহান আল্লাহ আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধে লিপ্ত হতে মুসলমানদের অনুমতি দিয়েছেন।
বিশ্বনবী (সা.)'র প্রকৃত সুন্নাহয় জ্ঞানকে এতো সম্মান দেয়া হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, 'একজন জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র।'
শিয়া মাজহাবের শ্রদ্ধেয় ইমাম বিশ্বনবী (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-কে সুন্নিদের চার মাজহাবই শ্রদ্ধা করে। এ ব্যাপারে সুন্নিদের চার মাজহাবের মধ্যেই ইজমা বা ঐক্যমত্য রয়েছে। (সুন্নি মাজহাবগুলোর প্রতিষ্ঠাতা দুই তিন জন ইমামই ছিলেন ইমাম জাফর সাদিক-আ.'র ছাত্র)
অন্যদিকে ওয়াহাবি-তাকফিরি সন্ত্রাসীরা ৫ মাজহাবের এই বিস্ময়কর জ্ঞানগত সাফল্যের বিপরীতে তাদের মতের বিরোধী সবাইকে হত্যা করা বৈধ বলে মনে করে এবং তাদের সবাইকে কাফির মনে করে। আর এই নীতি সুন্নি নীতিমালার সঙ্গে পুরোপুরি সম্পর্কহীন।
তাই প্রশ্ন হল, কেন পাশ্চাত্যের প্রধান মিডিয়া বা প্রচারমাধ্যমগুলো শিয়া ও সুন্নি-বিরোধী আইএসআইএল-কে সুন্নি বলে প্রচার করছে?
এর সম্ভাব্য উত্তর হল: প্রথমত, সত্য তুলে ধরার ব্যাপারে অলসতা বা অবহেলা। কারণ, আইএসআইএল শিয়া মুসলমানদের প্রতি বেশি বিদ্বেষ পোষণ করে। তাই পশ্চিমা মিডিয়াগুলো এ বিষয়টিকে খুব সহজেই তুলে ধরার জন্য শিয়া-সুন্নি সংঘাত বলে প্রচার করছে। এভাবে প্রকৃত সত্য বা বাস্তবতা তুলে ধরার ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা দেয়ার ঝামেলা এড়িয়ে চলছে এইসব প্রচার মাধ্যম। দ্বিতীয়ত, অথবা পরিকল্পিতভাবেই শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে বিভেদ বা বিভ্রান্তির ধূম্রজাল সৃষ্টি করাই তাদের উদ্দেশ্য। ইহুদিবাদী-ঘেঁষা মার্কিন নব্য-রক্ষণশীলরা ইরাকসহ তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যকে ভেঙে টুকরো টুকরো করার জন্যই এই দেশটিতে হামলা চালিয়েছিল। আরব-কুর্দি জাতিগত সংঘাত ও শিয়া-সুন্নি বিভেদ ছিল তাদের এই প্রচেষ্টার অন্যতম অজুহাত। অথচ ইরাকের শিয়া ও সুন্নি মুসলমানরা হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে এসেছে এবং শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে বিয়ের সম্পর্কসহ সব ধরনের সামাজিক সম্পর্কও প্রচলিত রয়েছে।
আর এখন আবারও পশ্চিমা শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপের সেই একই অজুহাত সৃষ্টির জন্যই পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো আরব এই দেশটিতে উগ্র সন্ত্রাসীদের তৎপরতাকে আবারও শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব বলে প্রচার করছে।
তাই সুন্নি মুসলমানদের উচিত আইএসআইএল-কে সুন্নি হিসেবে প্রচার করার মত অপমানজনক ভুল বা মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা এবং সুন্নি মাজহাবকে নৃশংসতা ও বর্বরতার অপবাদ থেকে মুক্তি দেয়া। যেসব মিডিয়া এ জাতীয় অপপ্রচার চালাচ্ছে সেসব মিডিয়ার বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও করতে পারেন সুন্নি মুসলিমরা।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, 'আইএসআইএল' যদি সুন্নি গ্রুপ হতো তাহলে তারা মসুলে তুর্কি কনস্যুলেট থেকে প্রায় ৮০ জন তুর্কি সুন্নি কর্মকর্তাকে অপহরণ করতো না। তালিবান ও আলকায়দা মার্কা গ্রুপগুলো যদি সুন্নিই হতো তাহলে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সুন্নি সরকার এবং তাদের মধ্যে কেন বহু বছর ধরে যুদ্ধ ও সংঘাত বেধেই আছে? এরা কেন দেশে দেশে সুন্নি আলেম ও জনগণকেও হত্যা করে?
এরা যদি সত্যিকারের ইসলামপন্থী হতো তাহলে এরা ইসলামের প্রধান শত্রু ইসরাইলের বিরুদ্ধেই জিহাদ করতো। সিরিয়ার সঙ্গে তো ইসরাইলের সীমান্তই রয়েছে। অথচ এইসব গ্রুপ কখনও ইসরাইলের দিকে একটি গুলিও নিক্ষেপ করেনি। এ ছাড়াও ইসরাইল কেন এদেরকে সহায়তা দিচ্ছে? কেন নেতানিয়াহু আইএসআইএল-এর ওপর হামলা না চালাতে মার্কিন সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছে?
নেতানিয়াহু জানেন যে, ইরাকে, লেবাননে ও সিরিয়ায় মুসলমানদের মধ্যে সংঘাত বা বিরোধ চলতে থাকলে তাতে ইসরাইলেরই সবচেয়ে বেশি লাভ হবে। ইসরাইল এই সুযোগে ফিলিস্তিনে পশ্চিম তীর ও গাজায় হামলা জোরদার করতে পারবে। আর বাস্তবেও দখলদার এই শক্তি তা-ই করছে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে।
ইসরাইল এখন মহা-আনন্দের মধ্যে রয়েছে এ কারণে, যে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে চরমপন্থী দলগুলোর উত্থানের ফলে মুসলিম জাতি ও সরকারগুলো এখন নিজেদের ঘর সামলাতেই ব্যস্ত; ইসরাইলি দখলদারিত্ব মোকাবেলার কথা তারা এ মুহূর্তে মনে আনারও সময় পাচ্ছে না।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।