এবোলা যখন মার্কিন অপকর্ম ঢাকার হাতিয়ার
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ০৯ আগস্ট, ২০১৪
প্রিন্টঅঅ-অ+
এবোলার আতংক ছড়িয়ে দিয়ে নিজ স্বার্থ উদ্ধার এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ঠেকাতে চায় আমেরিকা। আরব এবং ইসলাম বিশেষজ্ঞ ড. কেভিন ব্যারেট এক নিবন্ধে এ কথা বলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কট্টর সমালোচক ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ড. ব্যারেট লিখেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- হু এবোলা নিয়ে আন্তর্জাতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে পশ্চিম আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়া এবোলা ভাইরাস আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর গুরুত্বপূর্ণ শিরোনাম হয়ে উঠেছে। পশ্চিম আফ্রিকায় এবোলার এতো মারাত্মক প্রকোপ এর আগে দেখা দেয় নি বলে সংবাদ মাধ্যমগুলো হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।
এভাবে বিশ্ব জুড়ে একটা আতংক সৃষ্টি করতে পেরেছে এ রোগ সংক্রান্ত খবরগুলো। মার্কিনীরা এ আতংকে এতোটাই ভুগছেন যে অনেকে বিমানে করে ছুটি কাটাতে বিদেশে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল করেছেন। তাদের ভাবসাবে মনে হচ্ছে, বিমানে চাপলেই এবোলা তাদের চেপে ধরবে। এ জাতীয় আতংক সৃষ্টির বিষয়টি নতুন কিছু নয়। দ্রুত এবং ভয়াবহ মৃত্যু এগিয়ে আসার কথা বলে এর আগেও এমন আতংক ছড়ানো হয়েছে। বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কহীন এ রকম আতংক আমরা বহুবার দেখেছি।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে আমেরিকার ওপর সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে একই রকমের মগজ ধোলাই করা হয়েছে। এ ধরণের উগ্রপন্থি মুসলমানরা বিমান দিয়ে বা অ্যানথ্রাক্স ব্যবহার করে হামলা করতে পারে। এমনকি হামলা করতে পারে অজানা কোনো পন্থায়ও। ওই হামলাকে অজুহাত করে মুসলমান দেশগুলোর বিরুদ্ধে ক্রুসেডে নামে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব।
পরবর্তীতে প্রমাণ হয়, অ্যানথ্রাক্স দিয়ে হামলার যে জল্পনা ছড়ানো হয়েছে তার পুরোটাই ভুয়া। এতে আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেক শান্তিকামী মানুষই হতবাক হয়ে পড়ে। একইভাবে যখন নতুন কোনো রোগের আতংকের কথা বলা হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তোলেন অনেকে। তথ্য অভিজ্ঞ মহল যাচাই করে দেখতে চান নতুন যে হুমকির কথা বলা হচ্ছে তা কি যথার্থ না ভুয়া?
এবোলা নিয়ে দ্যা ট্রুথ জ্বেহাদ নামের একটি রেডিওকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মারাত্মক রোগের প্রকোপ ও জৈব যুদ্ধ বিষয়ক শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ ড. গার্থ নিকোলসন। উপসর্গের কথাগুলো বড় করে তুলে ধরে এ রোগের আশংকাকে মারাত্মক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, এবোলা রোগের উপসর্গ দ্রুত প্রকাশ পায় এবং এ কারণেই রোগ প্রতিহত করা তুলনামূলকভাবে সহজ। এজন্য সংশ্লিষ্ট রোগীকে তাৎক্ষণিকভাবে আলাদা করে রাখতে হবে। তাহলেই এ রোগ প্রতিহত করা যাবে। এবোলায় আক্রান্ত হয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা যাওয়ার আশংকা কম বা এ রোগের সেভাবে মানুষ নির্মূল করার ক্ষমতা নেই বলে মনে করেন ড. ব্যারেট।
এখন প্রশ্ন হলো, এবোলার আতংক ছড়িয়ে কি ফয়দা তোলা হবে? গবেষক অ্যান সুলিভান এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন । তিনি বলেছেন, এবোলার আতংকের ধুয়া তুলে ছয় নম্বর মহামারি সংকেত ঘোষণা করা যাবে। এতে বাধ্যতামূলকভাবে টিকা দিতে হবে। আর টিকা দিলেই কেবল জৈব অস্ত্রে রূপান্তরিত এবোলা ভাইরাসকে প্রতিহত করা যাবে। এই টিকা আসবে আমেরিকা থেকে।
এ ছাড়া, এবোলা ভাইরাসের হুমকির কথা বলে মার্কিন সংবিধানের শেষ কিছু বিধিনিষেধ থেকে মুক্তি পাবে মার্কিন সরকার। জর্জ ডব্লিউ বুশের দেয়া ১৩,২৯৫ নম্বরের নির্বাহী আদেশ সংশোধন করেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এতে কথিত সংক্রামক রোগের বিস্তার ঠেকানোর জন্য যে কাউকে আটকে রাখার বা শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়ার অবাধ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ওবামার এ নির্বাহী আদেশের ক্ষমতা আরো ব্যাপক করা হয়েছে। এর ফলে মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়েছে- এ ধারণার ভিত্তিতে অনির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে আটকে রাখা যাবে।
এবার প্রশ্ন উঠতে পারে, সামরিক শাসন এবং গণহারে আটকের জন্য অজুহাত তৈরির জন্য একটি রোগের হুমকি তৈরি করার দরকার মার্কিন সরকারের কেন দেখা দিল? এর উত্তরে বলা যায়, বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলারের দর পড়ছে এবং মার্কিন অর্থনীতির অবক্ষয় ঘটছে। সব মিলিয়ে গণ অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির আশংকা করছে ওয়াশিংটন এবং তা প্রতিহত করতে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েছে মার্কিন সরকার।
এবোলার ধুয়া তুলে মার্কিন জনগণকে আতংকিত করতে পারে মার্কিন সরকার। মার্কিন সমাজে সামরিক বিধিনিষেধ চাপানো হতে পারে। হাজার হাজার মানুষকে আটকে রাখতে পারে বন্দি বা নির্যাতন শিবিরে। সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবও ঠেকাতে পারে বা অন্তত ঠেকানোর পরিকল্পনা করতে পারে।
কিন্তু প্রকৃতিগতভাবে এবোলা হয়ত আমেরিকায় মহামারির রূপ নেবে না। এ রোগের সংক্রমণ খুব সহজে ঘটে না। মানব দেহের বাইরে উষ্ণ এবং আর্দ্র পরিবেশ ছাড়া এ রোগের জীবাণু বাঁচতে পারে না। কাজেই আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম যদি আমেরিকায় এবোলা মহামারির আশংকার খবর দেয় তবে তার দুটো অর্থ হতে পারে বলে মনে করেন ডা. কেভিন ব্যারেট। প্রথমত হয়ত এ সব সংবাদ মাধ্যম মিথ্যা কথা বলছে। আর না হয় জৈব অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য এবোলা ভাইরাসের জেনেটিক গঠনের রদবদল করা হয়েছে। এ ছাড়া, এবোলা রোগের আতংক ছড়িয়ে গাজায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের গণহত্যা থেকে বিশ্ববাসীর নজর ফেরানোর চেষ্টা চলছে বলেও অনেকে মনে করছেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।