খমের রুজের শীর্ষ দুই নেতার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কম্বোডিয়ার দুই শীর্ষ খমের রুজ নেতাকে আজীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে সেদেশের জাতিসংঘ সমর্থিত ট্রাইব্যুনাল। খমের রুজ শাসনামলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের দণ্ডিত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম।
‘এক নম্বর ভাই' বা ‘ব্রাদার ওয়ান' নামে পরিচিত কম্বোডিয়ার মাওবাদী সাবেক শাসক পল পটের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এ দুই খমের রুজ (বানানভেদে খেমের বা খেমার রুজ) নেতা। তাঁদের একজন নুয়ন চিয়া, যিনি ছিলেন পল পটের ডেপুটি। কম্বোডিয়ার মানুষ তাঁকে চিনত ‘দু'নম্বর ভাই' বা ‘ব্রাদার টু' নামে, যাঁর বয়স এখন ৮৮ বছর। অন্যজন দেশটির তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান খিউ সাম্পান, যাঁর বয়স বর্তমানে ৮৩ বছর।
খমের রুজের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ
‘ব্রাদার ওয়ান', অর্থাৎ পল পটের নেতৃত্বে ১৯৭৫ সালের ১৭ই এপ্রিল সেনাবাহিনীকে হটিয়ে খমের রুজ গেরিলারা তৎকালীন কম্পুচিয়ার রাজধানী নমপেন দখল করে নেয়। নমপেন দখল করে পল পট সরকার মূলত কৃষি সংস্কারের নামে ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞ চালায়। উল্লেখ্য, পল পট ১৯৯৮ সালে কম্বোডিয়ার জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় মারা যান।
কম্বোডিয়ার মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে খমের রুজের বিরুদ্ধে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত খমের রুজের শাসনামলে কম্বোডিয়ায় অন্তত ১৭ লাখ মানুষকে নির্যাতন করা হয় অথবা প্রাণদণ্ড দেওয়া হয় এবং বাকিরা অনাহারে মারা যান। এই সংখ্যা দেশটির মোট জনসংখ্যার এক চর্তুথাংশ।
জটিল বিচার প্রক্রিয়া
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসীদের বিরুদ্ধে যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল, অনেকে খমের রুজদের বিরুদ্ধে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে তার চেয়ে জটিল বলে অভিহিত করেছেন। এ বিচার দেখার জন্য খমার রুজ শাসকদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে।
খমার রুজের শাসনামলে শহরগুলো খালি করে ফেলা হয়েছিল। চার বছরের ভয়াবহ শাসনের সময় সম্ভাব্য শত্রু অনুমানে বুদ্ধিজীবী, সংখ্যালঘু, সাবেক কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করা হয়। নুয়ন চিয়া সরকারে থাকাকালীন খমের রুজের আদর্শিক বিষয়গুলো পরিচালনা করতেন। আর খিউ সাম্পানকে সামনে রেখেই এসব কিছু বাস্তবায়ন করা হতো। প্রায় দুই বছর ধরে বিচার চলার পর তাঁদের অভিযুক্ত করে এই রায় দিল ট্রাইব্যুনাল। তবে দণ্ডিত দুই নেতাই তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বার বার অস্বীকার করে গেছেন। প্রধান বিচারপতি নিল নোন এই রায় ঘোষণা করে জানান, আসামিরা মানবতাবিরোধী অপরাধ, হত্যা, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও অন্যান্য বর্বর কর্মকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত হয়েছেন।
শীর্ষ এই দুই খমের রুজ নেতার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। তবে বিচারক জানিয়েছেন, রায়ের বিষয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই দুই নেতা আটক থাকবেন।
দীর্ঘ বিচার, উচ্চ আবেগ
রায় ঘোষণার সময় যেন নমপেনের সমস্ত মানুষ জড়ো হয়েছিলেন আদালতের সামনে। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ সকলেই উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের অনেকেই রায় ঘোষণার পর উচ্চস্বরে কেঁদে ওঠেন বলে জানিয়েছেন অ্যাবি সাঈফ। তিনি নমপেন থেকে জানিয়েছেন যে, রায় ঘোষণার পর আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সাঈফ জানান, স্থানীয় এক রাজনীতিবিদ তাঁকে জানিয়েছেন যে এই রায়ে তিনি সন্তুষ্ট নন। কেননা খমের রুজের এই নেতারা এত অত্যাচার ও নৃশংসতা চালিয়েছে, যার জন্য যাবজ্জীবন কারাবাস নিতান্তই কম শাস্তি।
২০১৩ সালের মার্চে সাবেক খমের রুজ সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েং সারি মারা যান। তাঁর স্ত্রী সাবেক সমাজমন্ত্রী ইয়েং থিরিথকে বয়সজনিত কারণে ট্রাইব্যুনাল বিচারের অযোগ্য ঘোষণা করে। এর আগে কুখ্যাত খমের রুজ নেতা কাইং গুয়েক ইয়াভের আপিল আবেদন প্রত্যাখ্যান করে তাঁকে আজীবন কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। কমরেড দুক নামে পরিচিত সত্তর দশকের এই মূর্তিমান আতঙ্কের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসহ বহু অভিযোগ ছিল। খমের রুজ শাসনামলে তুওল স্লেং কারাগারের দায়িত্বে ছিলেন দুক। আর শুধু সেখানেই হত্যা করা হয়েছিল ১৪ হাজার মানুষকে। বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দুক সব অপরাধ স্বীকার করলেও তার দায় পুরোপুরি নিতে চাননি। তাঁর দাবি ছিল, তিনি যা করেছেন সব ওপরের নির্দেশেই। অবশ্য আদালতের সঙ্গে সঙ্গে কম্বোডিয়ার জনগণ তা বিশ্বাস করেনি।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।