১৯৪৫ সালের ৬ অগাস্ট । ভয়ঙ্কর সেই দিনটি আজ ইতিহাস হয়ে রয়েছে। একটা পারমাণবিক বোমা হিরোশিমাকে পুড়িয়ে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল। শিশু কিংবা বুড়ো লাখ লাখ মানুষ সেইদিন প্রাণ হারিয়েছিল। ওই বছর শেষে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজারে। সেই ঘটনা নিয়ে হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাতসুই  ‘হিবাকুশা’দের কথা শোনার আহ্বান জানিয়ে শুরু করেছেন ‘হিরোশিমা শান্তি ঘোষণা ২০১৪’।

যেসকল  জাপানি মানুষ হিরোশিমা ও নাগাসাকি পারমাণবিক বোমা হামলার শিকার জীবিত রয়েছে সেইসব মানুষদের ক্ষেত্রে  ‘হিবাকুশা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। জাপান টাইমস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী জাপান এবং জাপানের বাইরে বসবাসকারী হিবাকুশাদের সংখ্যা চলতি বছরের মার্চ নাগাদ ১ লাখ ৯২ হাজার ৭১৯ জন। হিবাকুশাদের গড় বয়স প্রায় ৭৯ দশমিক ৪৪ বছর।

আজ হিরোশিমা দিবস উপলক্ষে হিরোশিমার মেয়র এক স্মরণানুষ্ঠানে হিরোশিমা শান্তি ঘোষণা পাঠ করেন। ৬ অগাস্ট  সকালে পিস মেমোরিয়াল পার্কে সেই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে  থাকা কয়েকজন মানুষ সেখানে বক্তব্য রাখেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোশিমায় যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা হামলায় নিহত লোকজনের স্মরণে প্রতিবছর এই দিনে হিরোশিমা দিবস পালিত হয়।

এদিকে, আজকের অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে জাপানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ক্যারোলিন কেনেডিও উপস্থিত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া পরমাণু শক্তিধর অন্য দেশগুলোর মধ্যে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়ার প্রতিনিধিসহ মোট ৬৭টি দেশের প্রতিনিধিরা এসে যোগ দিয়েছিলেন হিরোশিমা দিবসের এ স্মরণানুষ্ঠানে।

জাপানের হিরোশিমা নগরে ১৯৪৫ সালের ৬ অগাস্ট যুক্তরাষ্ট্রের বোমারু বিমান এনোলা গে থেকে ‘লিটল বয়’ নামের পারমাণবিক বোমাটি ফেলা হয়েছিল। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ৬০০ মিটার উচ্চতা থেকে বোমাটি ফেলে মার্কিন বৈমানিকরা। এতে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়। আর আগস্টের ৯ তারিখে পাশের শহর নাগাসাকিতে ফেলা হয় ‘ফ্যাট ম্যান’ নামের আরেকটি পারমাণবিক বোমা। এর ছয়দিন পরই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে আত্মসমর্পণ করে জাপানি বাহিনী।

হিরোশিমার মেয়র দুনিয়া বাসীকে এই হিবাকুশাদের কথা শোনার আহ্বান জানিয়েছেন। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের শান্তিকামী মানুষ আজ হিরোশিমা দিবস পালন করে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানাবেন। কিন্তু এই পৃথিবী অচিরেই পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত হতে পারবে কি? বিখ্যাত মার্কিন তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার নোয়াম চমস্কিও হিরোশিমা দিবসকে ঘিরে লেখা এক নিবন্ধে এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন।

বলা চলে মানব জাতির ইতিহাসে সব চেয়ে খারাপ ও নেক্কারজনক দিন হিসাবে গণ্য হয়। আর জাপানিদের জন্য এর চেয়ে খারাপ ঘটনা আর ঘটেনি।