রাজশাহীতে মহানন্দার নদী আমবাগান ও সিল্ক নিয়ে হতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার মহানন্দা নদীর ধার হতে পারে আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র। উপজেলাটিতে রযেছে বিশাল ও পুরোনো আমের বেশ কিছু বাগান। সিল্ক উৎপাদনের জন্যও বিখ্যাত এ এলাকা।
দেশের উত্তরাঞ্চলের একদিকের শেষ প্রান্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সব দিক দিয়ে অবহেলিত প্রত্যন্ত এই উপজেলা ভোলাহাট। একেবারেই তিনদিক নদীবেষ্টিত ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলাটি মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। আর বিন্দু বিন্দু করে সিন্ধু গড়তে দরকার সরকারের সুদৃষ্টি আর দীর্ঘমেয়াদের সঠিক পরিকল্পনা। সঠিক সিদ্ধান্তটি সরকারীভাবে বাস্তবায়িত হলে ভোলাহাট উপজেলার সোয়া লাখ মানুষের মধ্যে হাজার বেকারদের হতে পারে কর্মসংস্থানের পন্থা ও আনন্দ-বিনোদনসহ পর্যটকদের পদচারণার সৌখিন ভূমি স্থল। মূল সেই স্থানটি উপজেলা শহরের প্রান্তের ’বজরা টেক’- আলীসাহাসপুর-মুন্সিগঞ্জ গ্রামের পাশদিয়ে বয়ে যাওয়া মহানন্দা নদীর পশ্চিম পাশের ৫’শ মিটার এলাকা।
এ এলাকা জুড়ে সুপরিকল্পিতভাবে যদি তৈরী হয় একটি ‘পার্ক’ বা সেই ধরণের আধুনিক পর্যটকদের বিনোদন স্থান তবে ভোলাহাট উপজেলার হাজার মানুষের এটি হবে কর্মসংস্থানের কেন্দ্রস্থল। সেই সাথে মোটা ধরণের আয় হতে পারে সরকারের।
এ ব্যাপারে সর্বপ্রথম যার কথাটি স্মরণ করতে হয় তিনি হলেন ভোলাহাট উপজেলায় অবস্থানরত সে সময়ের উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম আজমের কথা। ২০০৯ সালের বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ পালনের জন্য এলাকার পুরোনো আমলের প্রায় এক-দেড়শ গরুর গাড়ীতে করে একটি র্যালী উপজেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা পরিষদে এসে শেষ হয়। পরে উপজেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন এনজিও’র প্রধানগণ বজরাটেক গ্রাম দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর শাখা মহানন্দা নদীর ধারে সবার উপস্থিতির মাধ্যমে ঘটে বিশাল মিলনমেলা। যা এলাকার মানুষের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
সেই থেকে বিশেষ বিশেষ দিনগুলিতে বিশেষ করে দু’ঈদের দিন ও অন্যান্য দিনগুলিতে নদীর ধারে বসে একটু মুক্ত আকাশের বিশুদ্ধ হাওয়া পেতে খোলামেলা বেড়ানো, চাতক-চাতকীর প্রেম-ভালবাসা এমনকি স্বামী-স্ত্রীসহ ছেলেমেয়েদের নিয়ে আনন্দ-বিনোদনের জন্য উপজেলা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত আবালবৃদ্ধবণিতা এসে জমায়েত হয়ে থাকে এ স্থানে। যে দৃশ্যটি এ বছর পরিলক্ষিত হয়েছে তা হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন বিকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত সকল স্তরের মানুষের ঢল। যে ঢলের স্রোতে ভেসে এসেছে পায়ে হেঁটে চলা মানুষ, রিক্সা-অটোরিক্সা, ভুটভুটি, সাইকেল-মটরসাইকেল,মাইক্রোবাস এমনকি বাস পর্যন্ত। ভিড়ে যেন পা রাখার জায়গাটি পর্যন্ত নেই।
২৯ জুলাই সকালে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষ করেই শুরু হয় উপজেলার দুর-দুরান্ত থেকে আসা মানুষের ঢল নামে মহানন্দা নদীর ধারে একটু মুক্ত বাতাসের আশায় আর সেই যুগের নৌকা-লঞ্চে ভ্রমণের লোভনীয় দৃশ্যও চোখে পড়ে। উল্লেখ্য, আগে ক্ষমতায় থাকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যাকে এলাকায় ভ্যান চেয়ারম্যান নামে জানেন, তিনি তার ক্ষমতায় থাকাকালীন ঐ স্থানটিতে সকলের আরাম-আয়েসের জন্য ৫ টি টাইলস্ খচিত স্থায়ী চেয়ার করেছিলেন। যা এলাকার মানুষের কাছে স্মরনীয় এবং বরণীয় হয়ে রয়েছে এখনো। বজরাটেক গ্রামে অবস্থিত ৫০০ মিটার নদীর পাড় পুন:খনন করে বাঁধাই করে পরিকল্পিতভাবে আনন্দ-বিনোদনের জন্য একটি পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র তৈরী করা সময়ের দাবি এখন। আর সে ভাবনা রয়েছে বর্তমান সরকারের। কথাগুলি বললেন এলাকার বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ জন।
তারা আরো বলছেন পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্রটি তৈরী হলে সেখানে আসবে দেশ-বিদেশের পর্যটকবৃন্দ। সেই সাথে সাথে দেশের মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষা সফরসহ সাধারণের জন্যে উন্মুক্ত থাকতে পারে পিকনিক বা বনভোজনের জন্য স্থান। যা পর্যায়ক্রমে সরকারের একটি মোটা অংকের আয়ের উৎস হতে পারে বলে সচেতনমহল তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন।
মহানন্দা নদীর ধারে ঘুরতে আসা স্বামী-স্ত্রী ছোট্ট বাচ্চাটিকে নিয়ে আসা এনজিও উদ্দীপনের কোষাধ্যক্ষ রওশন আলীর কাছে মহানন্দা নদীর ধারে পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্রের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি সুপরিকল্পিত ভাবে তৈরী হলে নি:সন্দেহে উপজেলার হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং লাখ মানুষের আনন্দ-বিনোদনসহ বনভোজনের জন্য নামী দামী পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
উপজেলার কানারহাট এলাকার ওয়েন আইসক্রিম ফ্যাক্টরী সত্বাধিকারী উদীয়মান যুবক সাবিরুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, আমাদের উপজেলাটি সার্বিক দিক দিয়ে একেবারেই অবহেলিত। মহানন্দার নদীর পাড়ে এ পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্রটি বর্তমান সরকার বাস্তবায়ন করলে যেমন হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে, তেমনই দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আসা মানুষের আনন্দ-বিনোদনের জন্য একটা স্থায়ী জায়গা হবে নি:সন্দেহে এটা আশা করা যায় । আর ভোলাহাটের সিল্কের,সীমান্তের বড় আমবাগান গুলির আকর্ষণ তো রয়েছেই।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।