বাগেরহাটে সহকর্মীকে ধর্ষণ, আসামি পলাতক
বাগেরহাটে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে সহকর্মীকে ধর্ষণ মামলায় পুলিশী গ্রেপ্তার এড়িয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট কিশোর কুমার মিস্ত্রি।
জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণের শিকার সহকর্মীর দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত কিশোর কুমারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালত ঐ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। তবে ন্যাক্কারজনক এ ঘটনায় জড়িত অপরাধীর বিরুদ্ধে অজ্ঞাত কারণে কর্তৃপক্ষ কোন বিভাগীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
আদালতে দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা গেছে, সহকর্মী হিসাবে পরিচয়ের সূত্র ধরে একে অপরের মধ্যে ঘনিষ্ঠতার সৃষ্টি হয়। এরই সূত্র ধরে ঘটনার ১ম দিন কিশোর কুমার সহকর্মীকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার সরকারি কোয়ার্টারে ডেকে নিয়ে কৌশলে ঘরে আটকে ঐ নারীকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনার পর সহকর্মী নারী কান্নাকাটি করে প্রতিবাদ জানায় ও বিষয়টি কর্তৃপক্ষের গোচরে এনে বিচার দাবি করবে বলে জানায়। এ সময় ধর্ষণকারী কিশোর সহকর্মীর হাত ধরে মিনতি করে বিষয়টি জানাজানি না করার অনুরোধ জানায় এবং ধর্মীয় বিধান মতে অবিলম্বে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাকে বিয়ের আশ্বাস দেয়। সহকর্মী কিশোর কুমারের কথায় আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করে শান্ত হয় সহকর্মী নারী।
এ পর্যায়ে তাদের ঘনিষ্ঠতা আরো বেড়ে যায়। প্রেমাসক্ত হয়ে তারা পরস্পর স্বামী-স্ত্রীর মত আচরণ ও চলা ফেরা শুরু করে। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার জন্য অপেক্ষায় থেকে, ইতিমধ্যে কিশোর মিস্ত্রি সহকর্মীর সাথে দৈহিক মেলামেশাও অব্যাহত রাখে। প্রেমাসক্ত হবার বিষয়টি আঁচ করে কিশোর মিস্ত্রির স্বজনেরা তার বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজতে শুরু করে।
এক পর্যায় কিশোরের বিয়ের উদ্যোগের বিষয় জানতে পেরে, সহকর্মী প্রেমিকা বিষ পানে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। চলতি বছরের ২৫ মে রাতে মরণাপন্ন অবস্থায় তাকে কচুয়া হাসপাতালে ভর্ত্তি করা হয়। সপ্তাহিক কাল চিকিৎসার পর সে প্রাণে বেঁচে যায়। এ ভাবে ঘটনাটি ফাঁস হয়ে পড়লে, এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, এ পর্যায়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ, মুক্তিযোদ্ধা, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা সালিশী বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি সমঝোতার উদ্যোগ নেন। গত ৯ জুন অনুষ্ঠিত সালিশী বৈঠকে সর্ব সম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুজনার আনুষ্ঠানিক বিয়ের তারিখ নির্ধারিত হয় ১১ জুন তারিখে। এ বৈঠকে পাত্রের বাবা কুঞ্জ লাল মিস্ত্রিও উপস্থিত থেকে স্বাক্ষর করেন। কিন্ত কিশোর কুমারের কতিপয় স্বজনেরা এ সিদ্ধান্তে এক মত না হয়ে, ধার্য্য তারিখে কিশোরকে উপস্থিত না থাকার পরামর্শ দিয়ে, তাকে এলাকা ছেড়ে যেতে ইন্ধন যোগায়। সেই থেকে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট কিশোর কুমার মিস্ত্রি অফিসেও আসেন না। তিনি সাময়িক ছুটির অনুমোদন নিয়েছেন বলে তার অফিসের একটি সূত্র জানায়।
অন্যদিকে, এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের সালিশী বৈঠকের সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন না হবার কারণে অধিকার বঞ্চিত হয়ে ধর্ষণের শিকার সহকর্মী স্থানীয় থানা পুলিশের স্মরণাপন্ন হন। পুলিশ মামলা গ্রহণে সম্মত না হলে, তিনি বাগেরহাট জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইবুনালে ২৩ জুন ধর্ষণের অভিযোগে এক মামলা দায়ের করেন।
বিজ্ঞ আদালত ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বিষয়টি তদন্তের জন্য আদেশ দেন। তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়, আদালত ধর্ষণকারী কিশোর কুমার মিস্ত্রির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। তবে অজ্ঞাত কারণে পুলিশ এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কোন উদ্যোগ নেয় নি আজও।
অপরদিকে, কিশোর কুমারের লোকেরা মামলা প্রত্যাহার করে নিতে ধর্ষণের শিকার নারীকে নানাবিধ চাপ ও হুমকি অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয় জানতে চাইলে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তারার চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত ডা: তাপস কুমার দাস বলেন, এ ঘটনার বিষয় এলাকাবাসি একাধিক সমঝোতা বৈঠক করেছেন বলে শুনেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার ভিত্তিতে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
সিভিল সার্জন ডাঃ বাকির হোসেন জানান, ঈদের ছুটি হবার পূর্ব মূহূর্তে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন, যা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা সরোয়ার বলেন, বিষয়টির সম্মানজনক সমঝোতার জন্য তিনি নিজেও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু একটি পক্ষের অসহযোগিতার কারণে বিষয়টি আদালতে গড়িয়েছে বলে শুনেছেন তিনি। এ ছাড়া এলাকার বিভিন্ন মানুষ এ ঘটনার কথা শুনেছেন বলে জানান। একাধিক জন প্রতিনিধি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন এবং অপরাধীর শাস্তির দাবি জানান তারা।
অভিযুক্ত কিশোর কুমার মিস্ত্রির মতামত জানার জন্য তার সেল ফোনে বার বার সংযোগের চেষ্টা করেও, কথা বলা যায় নি। তবে তার বাবা কুঞ্জ লাল মিস্ত্রি সেল ফোনে জানান, তার ছেলে অসুস্থ। তাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।