পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক ও হামহাম জলপ্রপাত দেশী বিদেশী পর্যটকদের নিকট আকর্ষনীয় হতে পারে। সাপ্তাহিক ছুটি, ঈদের ছুটি ও ঐচ্ছিক ছুটি মিলিয়ে প্রায় ৯ দিনের ছুটি হচ্ছে এবারের ঈদে।

 ঈদের আনুষ্ঠানিকতা সেরে প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে  আসতে পারেন দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রকৃতির বিস্ময়কর কোনও স্থান। কর্মব্যস্ত জীবনের মধ্যে এই একচিলতে সময় সজীব সবুজের মধ্যে জুড়িয়ে নিতে পারেন চোখ দুটি। শ্রাবণের এই ঘনঘটায় ঘর থেকে দুই পা বাড়িয়ে স্মৃতির পাতায় যোগ করুণ নির্মল কিছু মুহূর্ত।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নৈসর্গের অপরূপ এ প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো দেখতে ছুটে আসেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজার হাজার লোকজন। বিশেষ করে ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটকদের ভিড় সামলাতে পর্যটন সহায়ক পুলিশ ও টুরিস্ট গাইডের সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়।

কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, হাম হাম জলপ্রপাত, মণিপুরী ললিতকলা একাডেমী, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভ, গারো টিলা, খাসিয়া পুঞ্জি প্রভৃতি দর্শনীয় স্থান দেখতে পবিত্র ঈদ উপলক্ষে পর্যটকদের ঢল নামবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এ উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

ইতোমধ্যে হীড রেস্ট হাউস, লাউয়াছড়া রেস্ট হাউসসহ বনবিভাগের রেস্ট হাউসগুলোতে পর্যটকদের অগ্রীম বুকিং প্রায় শেষ হচ্ছে। চা বাগান অধ্যুষিত এ উপজেলায় মণিপুরী, খাসিয়াসহ বিচিত্র জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

প্রকৃতির অপরূপ এক লীলাভূমি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার (রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টের কুরমা বনবিট) গহিন অরণ্যঘেরা দুর্গম পাহাড়ি এলাকার হামহাম জলপ্রপাত। বুনো পাহাড়ের গা বেয়ে দেড়শ ফুট উপর থেকে গড়িয়ে পড়া কাচের মতো স্বচ্ছ পানির স্রোতধারা কলকল শব্দ অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়দের হাতছানি দিয়ে ডাকে। শ্রাবণে যখন পুরো জঙ্গল ফিরে পায় এর চিরসবুজ, হামহাম তখন ফিরে পায় এর আদিরূপ। অপরূপ নির্মল ওই সৌন্দর্যে নিমেষে জুড়িয়ে যাবে পথের কান্তি।

জানা যায়, ১৯৯৬ সালের জুলাই মাসে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় ১২৫০ হেক্টর জমিতে লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়। ক্রমান্বয়ে নিবিড় বনরাজি ও নির্জনতা ধীরে ধীরে প্রকৃতির রুপক অপরূপ সাজে সজ্জিত করতে থাকে। এতে পার্কের পরিচিতি প্রসারের সাথে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। পর্যটকদের সবচেয়ে বেশী আকৃষ্ট করেছে বিলুপ্ত বন্য প্রাণী উল্লুকের ডাক। এ ছাড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানর, চশমাপরা হনুমান, মায়া হরিণ সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। এর পাশাপাশি বিরল প্রজাতির বৃহৎ আকারের আফ্রিকান টিক ওক, সারি সারি ডুমুর, লটকন, সেগুন, আমলকি, জলপাই সহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ।

এ ছাড়া পাহাড়ি ময়না, ধনেশ, মথুরা, বন মোরগ, সবুজ ঘুঘু, সহ ২৪৭ প্রজাতির পাখি রয়েছে। আরো রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির পাহাড়ি পোকামাকড়। পাহাড়ের উঁচু নিচু টিলায় ২টি খাসিয়া আদিবাসী পল্লী। পবিত্র ঈদের ছুটিতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও নয়নাভিরাম মাধবপুর লেকের এসব দৃশ্য দেখতে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়ে মুখরিত হয়েছিল এসব এলাকা।

আপনি কিভাবে যাবেন

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার হামহাম, লাউয়াছড়া বা মাধবপুর লেক যাওয়া যায় মৌলভীবাজার বা শ্রীমঙ্গল থেকে। মৌলভীবাজার থেকে যেতে হবে কমলগঞ্জ। সেখান থেকে বাস/সিএনজি করে গন্তব্যে। হামহাম যেতে হলে কমলগঞ্জ থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা আদিবাসী বস্তি তৈলংবাড়ী বা কলা বনপাড়ায়। এরপর হাঁটা রাস্তা। প্রায় ৮ কিলোমিটারের মতো পাহাড়িপথ শেষে দেখা মিলবে হামহামের। তবে যেখান থেকেই যাওয়া হোক, কলা বনপাড়ার দিকে অবশ্যই সকালে রওনা হতে হবে।

থাকা-খাওয়া  ব্যবস্থা

হামহাম জলপ্রপাত এলাকায় থাকার মতো ব্যবস্থা নেই। তবে মানিয়ে নিতে পারলে তৈলংবাড়ী কিংবা কলা বনপাড়া উপজাতি বস্তিতে আস্তানা গাড়া যায় অথবা উপজাতিদের ঘরেও থাকা যায়। এ ছাড়া কমলগঞ্জে হীড রেস্ট হাউস, বনবিভাগের রেস্ট হাউস, গ্রামের বাড়ি রেস্ট হাউস সহ বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে।