ফুলবাড়ী সীমান্ত এখন মাদক চোরাচালান ওপেন সিক্রেট
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ঈদকে সামনে রেখে বেড়ে গেছে মাদক চোরাচালান। চোরাচালানিরা ‘নগরায়নের’ বিজিবি ও পুলিশকে খুশি করেই ‘ঈদ উৎসব পরিবেশে’ মাদকের কারবার চালাচ্ছে। ফুলবাড়ী থানার ওসি বজলুর রশীদ এটা মানতে নারাজ। তার ভাষায় মাদকের ব্যাপারে পুলিশ জিরো টলারেন্স ভুমিকা আছে।
এলাকাবাসীরা জানান, সীমান্ত ঘেঁসা বালারহাট,গোড়কমণ্ডল,খলিসাকুড়া ও নাখরাজ এলাকা মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে। এখানে হাত পাতলেই মাদকের ছড়াছড়ি।
বালারহাট জামে মসজিদের ঈমাম মাওলানা আজিজুল ইসলাম জানান, ফজর নামাজের আগ থেকে সুর্যোদয় পর্যন্ত বালারহাট এলাকা থেকে ব্যাগভর্তি করে প্রতিদিন ২০-২৫টি মটর সাইকেলে মাদক পাচার হচ্ছে। উপজেলার কয়েকজন জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,বন্যার স্রোতের মত ভারত থেকে মদ গাজা ফেন্সিডিল আসছে। প্রশাসন সবই জানে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকায় অসামাজিক কর্মকাণ্ড দিনদিন বেড়েই চলছে।
ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আলতাফ হোসেন বলেন, প্রতিদিন আসক্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে । মনে হয় ফুলবাড়ীতে মাদকের উৎসব শুরু হয়েছে । উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা জানান, উপজেলায় মাদকের ভয়াবহতা রোধে তার দপ্তর থেকে ‘মাদককে না বলুন’ মর্মে প্রচার পত্র বিলি করা হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ফুলবাড়ী, ভুরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী উপজেলা ৩টির ৭৯ কিলোমিটার সীমান্ত জুড়ে মাদকের ব্যবসা এখন ওপেন সিক্রেট। এই এলাকার ৫০টি রুটে মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক পাচার করলেও সীমান্তে বিজিবি ফাঁড়িগুলো কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না। বরং তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় মাদক চোরাচালানিরা প্রকাশ্যে ব্যবসা করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন বিপুল পরিমান মদ, ফেন্সিডিল, রিকোটেক্স, গাঁজা ও যৌন উত্তেজক টেবলেট সীমান্তে পাইকারী ও খুচরা বিক্রি হচ্ছে। পুলিশ ও বিজিবি মাঝে মধ্যে লোক দেখানো কিছু মাদকের চালান ধরছে । গত সপ্তাহে ফুলবাড়ী থানা পুলিশ সীমান্ত থেকে ৩৩ কেজি গাঁজা, ১২০ বোতল ফেন্সিডিল ও ভারতীয় রুপিসহ দুইজন চোরাকারবারীকে আটক করে পরে এদের একজনকে কোটে চালান করা হলেও অন্যজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
ফুলবাড়ীর মতিয়ার রহমান মাদকের বড় ব্যবসায়ী। চোরাচালান ব্যবসায়ে সে লক্ষলক্ষ টাকার মালিক হয়েছে। তার সাফ কথা ‘বেকার মানুষ কি করে খাই, সীমান্তে সবাইকে ‘ম্যানেজ’ করে টুকটাক ব্যবসা করে বেঁচে আছি’। স্থানীয় সুশীল সমাজের অভিযোগ মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশ ও বিজিবিকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে নাকের ডগার উপর দিয়ে মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ রুবেল মিয়াঁ জানান, দিনদিন যে হারে কিশোর ও যুবকদের মাঝে মাদক সেবার সংখ্যা বাড়ছে তা রীতিমত ভয়ংকর।
ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন জানান, ভারত থেকে মাদক আসা বন্ধ করার জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে ফুলবাড়ী থানা পুলিশ ও সীমান্তে বিজিবি ক্যাম্প গুলোতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে শুধু ফুলবাড়ী উপজেলার ৫০টি রুট দিয়ে অবাধে মাদকের ব্যবসা করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হল গোড়কমণ্ডল, চরগোরক মন্ডল, বস্তি গোড়কমণ্ডল, বালারহাট এলাকা , গজের কুটি, খলিশা কোটাল, বালাতাড়ী, কৃষ্ণানন্দ বকসী, ধুলার কুটি, চওড়াবাড়ী, পূর্ব ফুলমতি, শিমুলবাড়ীর জুম্মাপাড়ার, নাখারজান, গংগারহাট, ধর্মপুর, অনন্তপুর, উত্তর অনন্তপুর, কাশিয়াবাড়ী, বিদ্যাবাগীশ, ঠোস বিদ্যাবাগীশ, চাঁদের বাজার, ধারিয়াপাঠ,বেড়াকুটি বাজার, গোড়ক মন্ড আবাসন ,ফুল সাগর আবাসান , পশ্চিম ধনীরাম আবাসন ।
এ ছাড়া ফুলবাড়ী উপজেলার অভ্যন্তরে ১৫০ নং দাড়িয়ার ছড়া ছিটমহলের টনকার মোড়ে প্রকাশ্যে মাদকের হাট বসে। সেখানে প্রতিদিন শত শত মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী প্রকাশ্যে মোটর সাইকেল যোগে আসা যাওয়া করে।
কুড়িগ্রাম ৪৫-বিজিবি শিমুলবাড়ীর বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার আলাউদ্দিন জানান, মাদক প্রতিরোধে সীমান্তে বিজিবি তৎপর রয়েছেন।
ফুলবাড়ী থানার ওসি বজলুর রশীদ জানান, আমরা মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ভূমিকায় আছি। মাদকের সাথে কোনো আপোষ নেই। সীমান্তে মাদক প্রতিরোধে পুলিশ অতন্দ্র প্রহরী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।