পিরোজপুরে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে দিনমজুরের মৃত্যু
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কালাম খাঁ নামে ভর্তিকৃত দিনমজুর রোগীর চিকিৎসাসেবা না পেয়ে মৃত্যু ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই রোগীকে কোন চিকিৎসা সেবা না দিয়ে হাসপতালের নিজ চেম্বারে প্রাইভেট রোগির চিকিৎসা পত্র নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন বলে মৃত রোগীর স্বজনদের অভিযোগ। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। মৃত দিনমজুর কালাম চার সন্তানের জনক।
হাসপাতাল ও মৃত রোগীর স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী বরগুনার বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা গ্রামের মোতাহার খাঁর ছেলে মো. কালাম খাঁ (৪৫) গত চারদিন আগে জ্বরে আক্রান্ত হন। আজ শুক্রবার সকালে প্রচণ্ড খিচুনী উঠলে সংকটজনক অবস্থায় মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে তার স্বজনরা। হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. এস.কে নাথ দরিদ্র ওই রোগীকে ভর্তি করেন। ভর্তির পর রোগীকে তিনি কোন প্রাথমিক চিকিৎসাসেবাও দেননি।
এরপর কয়েকদফা রোগীর স্বজনরা ওই চিকিৎসকের চেম্বারে ধরনা দিলে ডা. এসকে নাথ একটু পরে দেখব বলে সময়ক্ষেপন করেন। এসময় তিনি তার চেম্বারে ভিজিট বাণিজ্যের ব্যাক্তিগত রোগী নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। দুপুরের দিকে হাসপাতালের বেডে রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে সংকটজনক কালাম খাঁর স্বজনরা চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে হাতে পায়ে ধরেন। এরপর আসছি বলে চিকিৎসক আর তাকে দেখতে যাননি।
এদিকে সংকটজনক ওই রোগীকে হাসপাতালের বেডে ফেলে রেখে চিকিৎসক এসকে নাথ হাসপাতাল থেকে নিজের বাড়িতে চলে যান। এদিকে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে দুপুর তিনটার দিকে হতভাগ্য কালাম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালে বিক্ষুব্ধ জনতা ভীড় করেন। এ সময় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিচার দাবি করে বিক্ষোভ করেন জনতা।
মৃত কালামের স্ত্রী খাদিজা বেগম অভিযোগ করেন, হাসপাতালে ভর্তিও পর ওই চিকিৎসক একবারের জন্যও আমার অসুস্থ স্বামীরে দেখে নাই। তার চেম্বারে গিয়া কয়েকবার হাতে পায় ধইরা কানছি হে আসে আসে নাই। গরীব বইলা আমার স্বামীর চিকিৎসা পাই নাই।
পাশের বেডে চিকিৎসারত স্থানীয় দাউদখালী গ্রামের শামসুল হক সিকদার (৭২) অভিযোগ করেন কালামের অবস্থা দেখে আমরা ডাক্তারকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য অনুরোধ করি কিন্তু ডা. এসকে নাথ কোন গুরুত্ব দেয়নি। চিকিৎসকের অবহেলাই তার মৃত্যু হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত চিকিৎসক এস.কে নাথকে হাসপাতালে গিয়ে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের কাছে রোগী ভর্তির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, রোগী সংকটজনক ছিল। পরিবারের স্বজনদের বরিশাল মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
রোগী ভর্তি করে কেন একটি বারের জন্যও তার চিকিৎসাসেবা দেওয়া হল না জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি তো আর ফেরেস্তা না। রোগী মরতেই পারে।
এ ব্যাপারে মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম দিপু বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগী মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার দায়িত্বে ছিলেন ডা. এস.কে নাথ। চিকিৎসকের অবহেলায় রোগী মারা গেছে এমন অভিযোগ আমি পাইনি। এ বিষয়ে চিকিৎসকের অবহেলা ছিল কিনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।