ঘূর্ণিঝড় মহাসেন তাণ্ডবের বছর ঘুরল, ক্ষতচিহ্ন এখনও দগদগে!
আজ সেই ভয়াল ১৬ মে। একটি বিভীষিকাময় দিন। এই দিনে ‘মহাসেন’ নামের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে উপকূলীয় জনপদে। এক বছরেও সেই তান্ডবের ক্ষত শুকায়নি। আজও ঘুরে দাড়াতে পারেনি ক্ষতিগ্রস্তরা। কর্মহীন অনেকে পায়নি নতুন কোন কাজের সন্ধান, ঘরহারাদের হয়নি মাথাগোঁজার ঠাঁই।
ভয়াল রূপ নিয়ে ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ দুই দফায় প্রায় ছয় ঘন্টা ব্যাপি ঘূর্ণিঝড়ের এ তান্ডবে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীসহ বিভিন্ন এলাকায় কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়েছিলো। মহাসেনের এক বছর হয়ে গেলেও সরকারি ভাবে কোন সাহায্য-সহযোগীতা পায়নি ক্ষতিগ্রস্তরা।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রশাসনের ক্ষয়-ক্ষতি তথ্য বলছে, মহাসেনের আঘাতে উপজেলায় খুব বেশি, বেশি ও আংশিক ১৮ হাজার ৯৬০ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ৪৪২৪ টি, আংশিক ৫৩৩৭ টি ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও গবাদিপশু, ফসল, চিংড়ি ঘের, বেঁড়িবাধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের সমুদ্রের মোহনায় রামনাবাদ নদীর তীরের মৃদুপাড়ায় ভর দুপুরে ভাঙা ঘরের মাচার ওপর বসে খাচ্ছিলেন ষাটোর্ধ বয়সী সুতাইসে রাখাইন। এক সময়ের গোটা পাড়ার নেতৃত্ব দিতেন, পাড়ার প্রধান ছিলেন। নিঃস্ব হতে হতে এখন আর এই ঘরটুকু ছাড়া কিছুই নেই। কিন্তু এই ঘরটাও ২০১৩ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের তা-বে ভেঙে গেছে। এক বছরের হয়ে গেলেও ঘর তোলার সামর্থ্য হয়নি তার।
সমুদ্রের মোহনায় রামনাবাদ নদীর তীরের এই রাখাইন পাড়াটি প্রতিনিয়ত দুর্যোগের মুখেই থাকে। এক একটি ঘূর্ণিঝড় এদের জীবনের গতি বদলে দেয়। এর ওপর আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি মূলধারার সমাজের অবহেলা তো আছেই। ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকা রাখাইন নাগরিক মৃদুপাড়ার সুতাইসে রাখাইনের অবস্থা থেকেই এখানকার গোটা রাখাইন সম্প্রদায়ের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। নিজের ছোট্ট ভিটেয় ভাঙা ঘরে বসবাস করছেন সুতাইসে রাখাইন। বেড়া নেই, চালা নেই। শুধু আছে একটা পাটাতন বিহিন মাচা। মহাসেনের এক হয়ে গেলো।
সুতাইসে রাখাইন নিজে কিছুই বলতে পারলেন না। অভাবের কারণে জীবনের নানামুখী ওলটপালট হয়ে গেছে । অনেকটা বাকরুদ্ধ।
সুতাইসে রাখাইনের ভাগ্নে থামুসে রাখাইন বলেন, বয়সের ভারে সুতাইসে রাখাইনের শরীরে বেঁধেছে নানা রোগবালাই। কাজকর্ম করতে পারছেন না। আর্থিক অনটনের কারণে মহাসেনে বিধ্বস্ত হওয়া ঘরটা তুলতে পারেননি।
মৃদুপাড়ার ছোট্ট এই এলাকা ঘুরে চোখে পড়ে বিপন্ন এক একটি ঘর। ঘরের বেড়া আছে তো চালা নেই। বারান্দার চালা হয়তো অনেক আগেই ভেঙে পড়েছে, অর্থের অভাবে সংস্কার হচ্ছে না। শুধু সুতাইসে রাখাইন নয় এভাবে রাঙ্গাবালীতে মহাসেনে ক্ষতিগ্রস্ত শত শত পরিবার আজও তাদের বিধ্বস্ত বসত বাড়ি-ঘর সংস্কার করতে পারেনি। তাই বাধ্য হয়ে বিধ্বস্ত ঘরেই মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের ছাতিয়ান পাড়া গ্রামের মান্নান আকনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘মহাসিন বন্যা ওইলো। কিছুই পাই নাই। ঘর ভাইঙ্গা গ্যাছে। ঠিক করতে পারি নাই।’
এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তায়ন বাস্তায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তপন কুমার ঘোষ বলেন, ‘রাঙ্গাবালীর বিছিন্ন এ জনপদ দুর্যোগ কবলিত। এবং মহাসেনে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাঙ্গাবালী। অথচ সরকারি কোন ধরনের বরাদ্দ আসেনি। আমরা শুনেছি তালিকা তৈরিতে অনিয়ম হয়েছে। আর একারণেই কোনও বরাদ্দ আসেনি।’
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।