সাঘাটার চরাঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের অব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষকদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার দারুণ চরের স্কুল গুলোতে দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষার অচল অবস্থা বিরাজ করছে।
সরজমিনে জানা গেছে, সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া, জুমারবাড়ী, সাঘাটা ইউনিয়নের চরাঞ্চলের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর বেশীর ভাগ শিক্ষক দিনের পর দিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে পারিবারিক কাজে ব্যস্ত দিন কাটছেন।
অথচ ওই সব শিক্ষকরা নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে এলেও তারা কেবল খেলাধুলা করে ফিরে যাচ্ছে। ২/১ জন শিক্ষক স্কুলে এলেও অনেক দেড়িতে এসে নির্ধারিত সময়ের আগেই স্কুল ছুটি দিয়ে চলে যান। আবার কোন কোন স্কুলে ২/৩ জন শিক্ষকের পরিবর্তে স্থানীয় ভারাটিয়া একজন অর্ধ শিক্ষিত যুবক অথবা যুবতীর দ্বারা পাঠদান চালানো হচ্ছে। স্কুলে না আসা শিক্ষকরা প্রতি মাসে একদিন স্কুলে এসে পুরা মাসের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই চলে যান।
হাটবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১১ টায় গিয়ে দেখা গেছে ২ জন শিক্ষকের উপস্থিতি। তাদের সাথে কথা হলে একজন প্রধান শিক্ষিকার পরিচয় দিয়ে বলেন, এ বিদ্যালয়ে ৬ জন শিক্ষক কর্মরত। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষক রাহেনুর রহমান ৩ নভেম্বর ২০১১ইং তারিখে বিদ্যালয়ে যোগদান করে দীর্ঘ দিন অনুপস্থিত আছেন। পরবর্তীতে ২২ শে জানুয়ারী/২০১৪ ইং তারিখে পুনরায় যোগদান করে অনুপস্থিত রয়েছেন। ওই শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও বেতন ভাতা নিয়মিত ভাবেই উত্তোলন করে আসছেন।
অপর সহকারী শিক্ষিকা সাবিনা নাছরিন ১/৭/২০১৩ ইং তারিখে বিদ্যালয় থেকে নিজের সুবিধাজনক স্কুলে ডেপুটেশনে চলে গেলেও হাটবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুকুলে বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। হাট বাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাড়ে ১১ টা পযর্ন্ত অবস্থান করাকালীন সময় বাকী ২ জন শিক্ষককে উপস্থিত পাওয়া যায়নি। ওই স্কুলে শিশু শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ৪১০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। এত বেশী শিক্ষার্থীকে মাত্র ২ থেকে ৩ জন শিক্ষক দ্বারা পাঠদান করাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে।
চর দীঘলকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা ৫ জন । ওই স্কুলে ১২ টার সময় গিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে ৩ জন শিক্ষককে দেখা গেছে। এ সময় বাকী শিক্ষকদের স্কুলে না আসার ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আসাদুল্যার সাথে কথা হলে তিনি জানান, সহকারী শিক্ষক আউয়াল মাঝে মধ্যে স্কুলে আসেন, ১ জন শিক্ষিকা অনুপস্থিত রয়েছেন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা সুরাইয়া আকতারের বাড়ি জুমারবাড়ি গ্রামে তিনি কোন দিন স্কুলে যান না, দীর্ঘ দিন ধরে নিজের সন্তানদের লেখাপড়া করানোর জন্য বগুড়ায় অবস্থান করছেন। শিক্ষিকা সুরাইয় আকতার স্কুলে আসেন কি না? উপস্থিত ছাত্র ছাত্রীদের কাছে জানতে চাইলে ৫ম শ্রেণীর ছাত্র আনোয়ার হোসেন, রোল নং-১৮, নুর আলম, রোল-১৩, রাসেল, ১২, ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী ময়না, আমেনা, তৃতীয় শ্রেণীর জরিনা, সবুজ, বল্লাল, এ প্রতিনিধিকে জানায়, ওই শিক্ষিকাকে কোন দিন দেখেনি তাদের নামও জানি না।
ওই স্কুলের প্রক্সি শিক্ষিকা সোভার সাথে কথা হলে তিনি জানান, ১ জন শিক্ষিকা স্কুলে আসেন না তার পরিবর্তে মাসিক ২ হাজার টাকায় পাঠদান করে আসছি। একই অবস্থাত বিরাজ করছে সিপিগাড়ামারা, চর হলদিয়া, দীঘলকান্দি, পাতিলবাড়ি, গুয়াবাড়ি, কুমারপাড়া, গাড়ামারা ও কানাইপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে।
অভিযোগ উঠেছে, চরাঞ্চলের স্কুলগুলোতে কর্তব্য ফাঁকি দেয়ার সুযোগ থাকায় সুবিধাভোগীরা এখন চরের বিদ্যালয়ে বদলী নিচ্ছেন তদবির করে। চরে বদলী নিতে পারলে শিক্ষকদের যেমন স্কুলে যেতে হয় না অপর দিকে বদলী দেয়ার বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও মোটা অংকের সেলামী পেয়ে থাকেন। এ কারণে চরের স্কুলে বদলী নেয়ার প্রতি শিক্ষকদের আগ্রহ বাড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রধান শিক্ষক স্কুল ফাঁকি দেয়া শিক্ষকদের প্রতারক উল্লেখ করে বলেন, এরা শিক্ষার শত্রু“ ছাড়া কিছু না।
এছাড়াও রয়েছে শিক্ষকদের উপবৃত্তি প্রদানে অনিয়ম, বিদ্যালয় উন্নয়নের অর্থ লোপাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশু অধিকার লংঘনসহ নানা কারণে চরের প্রাথমিক শিক্ষায় অচল অবস্থা বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণ করা হলেও আগের তুলনায় চরে শিক্ষার মান দিন দিন আরো হ্রাস পাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সাঘাটা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার রাবেয়া বেগম জানান, শিক্ষক স্কুলে না যাওয়ার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবিহিত করেছি এবং বেতন বন্ধের সুপারিশ করেছি। এর পরও যদি বেতন বন্ধ না হয় সেখানে আমার করণীয় কি আছে? অপর সহকারী শিক্ষা অফিসার প্রভাষ চন্দ্র বলেন, রাজনৈতিক কারণে ওই সব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার ইয়াকুব হোসেন খান বলেন, শিক্ষকরা স্কুল ফাঁকি দেওয়া ও বদলী লোক দিয়ে বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের পাঠদান করানো হয় এটা আমার জানা নেই।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।