সুন্দরগঞ্জে বিশেষ কাবিখা প্রকল্পের গম লুটপাট
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বিশেষ কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) প্রকল্পের কাজে লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেন তেন কাজ করে প্রি-ওয়ার্ক ও পোষ্ট-ওয়ার্ক (কাজের আগে ও পরে) মাপে গোঁজামিল দেখিয়ে বেশিরভাগ টাকা আত্মসাত করা হয়। উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগসাজসে স্থানীয় সাবেক সাংসদের লোকজন ও প্রকল্প চেয়ারম্যানরা ভুয়া মাস্টাররোল (শ্রমিকদের কার্য তালিকা) দাখিল করে এই টাকা লুটপাট করেন।
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের বর্তমান সাংসদ মনজুরুল ইসলাম লিটন বলেন, কয়েকটি প্রকল্প পরিদর্শন করে কাজের অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি। এনিয়ে জেলা প্রশাসক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু তারা কোন পদক্ষেপ নেননি।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিশেষ কাবিখা কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ে ৩০০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটন ২৯ হাজার ৮ শত টাকা হিসেবে এই পরিমাণ গমের সরকারি মূল্য ৮৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এক মেট্রিক টন গম দিয়ে ২০৬ দশমিক ৭৮ ঘন মিটার ভরাট করা যাবে। বিশেষ কর্মসূচির ক্ষেত্রে স্থানীয় সাংসদ প্রকল্পের তালিকা দেন।
জেলা প্রশাসক অনুমোদনের পর প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। উপজেলার তারাপুর, শান্তিরাম, বেলকা ও রামজীবন ইউনিয়নের ঈদগাহ মাঠ ভরাট ও সড়ক সংস্কারে চৌদ্দটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। গত জানুয়ারিতে কাজ শুরু হয়ে ৩০ জুন শেষ করার কথা। প্রকল্প গুলোতে যেন তেন কাজ করে ইতোমধ্যে গত ১৫ জানুয়ারী পিআইও কার্যালয় থেকে ১৫০ মে.টন গম ছাড় দেয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পগুলোর কাজ সম্পূন্ন করা না হলেও বাকি ১৫০ মে.টন গম ছাড় দেয়ার পায়তাঁরা করা হচ্ছে।
তিনটি প্রকল্প সরজমিনে ঘুরে কাজের অস্তিত্ব মেলেনি। এর মধ্যে তারাপুর ইউনিয়নের খোর্দ্দামৌজার মানিকের খেয়াঘাট হতে নজিরের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কি.মি. সড়ক পুনঃ নির্মাণে ১৭ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই পরিমাণ গম দিয়ে তিন হাজার ৫১৬ ঘন মিটার মাটি কাটা যাবে। কিন্তু সড়কটি মেপে দেখা গেছে, যে পরিমাণ মাটি ফেলা হয়েছে, তা ৮২৭ ঘন মিটারের বেশি হবে না। গমের হিসাবে শ্রমিক ব্যয় চার মেট্রিক টন। খোর্দ্দা গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ সড়কের পাশেই আমার বাড়ি। গোঠা সড়কে যে পরিমাণ মাটি ফেলা হয়, তা এক থেকে দেড় লাখ টাকার বেশি শ্রমিক খরচ হবে না।
প্রকল্প চেয়ারম্যান ও তারাপুর ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শাহ আলম বলেন, সাবেক সাংসদের লোকজন আমাকে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা দেন। তা দিয়ে সড়কের কাজ করেছি। তারাপুর ঈদগাহ মাঠ ভরাটে ২০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই পরিমান গম দিয়ে চার হাজার ১৩৬ ঘন মিটার মাটি কাটার কথা।
তারাপুর গ্রামের শিক্ষক মুকুল মিয়া বলেন, আমি প্রতিদিন এই মাঠের পাশ দিয়ে উপজেলা শহরে যাতায়াত করি। কিন্তু ৩০-৪০ জন শ্রমিককে কয়েকদিন মাত্র মাটি ফেলতে দেখেছি। অথচ প্রকল্প চেয়ারম্যান ও তারাপুর ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রুহুল আমীন ভুয়া মাষ্টাররোল (শ্রমিকদের কার্য তালিকা) দাখিল করে টাকা লুটপাট করেন। শুধু তাই নয়, তিনি তারাপুর ঈদগাহ মাঠ থেকে আবুল হোসেনের বাড়ি পর্যন্ত সড়ক পুনঃ নির্মাণেও ২০ মেট্রিক টন বরাদ্দ পান। এ কাজেও লোক দেখানো মাটি ফেলে টাকা লুটপাট করেন।
জানতে চাইলে ইউপি সদস্য রুহুল আমীন বলেন, আত্মসাতের অভিযোগ সঠিক নয়। বরাদ্দকৃত সব গম দিয়েই মাটি ভরাট করা হয়। তবে কাজে উনিশ-বিশ হতে পারে।
লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করে সুন্দরগঞ্জের পিআইও জহিরুল ইসলাম বলেন, যেসব প্রকল্প চেয়ারম্যান কাজ ঠিকমত করেননি, তাদের পুরো গম ছাড় করা হয়নি। সময় আছে, কাজ বুঝে নেওয়া হবে।
সুন্দরগঞ্জ আসনের সাবেক সাংসদ কর্ণেল (অব.) আব্দুল কাদের খান বলেন, আমি প্রকল্প তালিকা দিয়েছি। কিন্তু তদারকির দায়িত্ব পিআইও’র। কারণ তালিকা দেওয়ার পরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। অথচ রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।