পরিচালকদের ২% শেয়ারের বাধ্যবাধকতা অবৈধ ঘোষণা
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের শতকরা দুই ভাগ শেয়ার রাখা বাধ্যতামূলক করে দেয়া বিধান অবৈধ ঘোষণা করেছে আদালত।
আজ বুধবার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের বেঞ্চ একটি রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি করে এই রায় দেয়।
তবে এই রায়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর রশীদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, “পরিচালকরা ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করলে কোম্পানির প্রতি তাদের মায়া থাকে না।”
তবে পুঁজিবাজারে এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, এমনটি মানতে নারাজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এইমস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াওয়ার সাঈদ।
তিন বছর আগে পুঁজিবাজারে ধস নামলে বাজার স্থিতিশীল করতে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়, তাতেই পরিচালকদের ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা আসে।
এরপর বিএসইসির ওই আদেশের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এনসিসি ব্যাংক) উদ্যোক্তা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের রিট আবেদনে ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর হাই কোর্ট রুল দিয়েছিল।
শাহ মোহাম্মদ আহসানুর রহমান বলেন, “আমরা ওই নোটিসের ডি ও ই কে চ্যালেঞ্জ করেছি। আদালত রুল দিয়েছিল। এখন রুল অনুসারে আবেদন মঞ্জুর করে রায় দিয়েছে।”
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বিধানের ডি’তে বলা হয়েছে, উদ্যোক্তা পরিচালকদের শতকরা দুই ভাগ শেয়ার থাকতে হবে। আর ই’তে বলা হয়েছে, এরা পরিচালক পদ ছেড়ে দিলে ৫ ভাগ আছে এমন কেউ পরিচালক হতে পারবে।
আহসানুর বলেন, “আমাদের যুক্তি ছিল, এখানে দুই ধরনের বিধান রয়েছে। এটা বৈপরিত্য সৃষ্টি করে। তাছাড়া যে কোম্পানির ৪০-৪৫ জন শেয়ার হোল্ডার আছে, তারা কী করবে? কিভাবে আপনি এত শেয়ার দেবেন? এই যুক্তিতে আদালত এই বিধান অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে।”
এনসিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের করা রিট আবেদনে আদালত রুল দিয়েছিল। তিনি ব্যাংকটির পরিচালনা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানও ছিলেন।
আহসানুর বলেন, “ওই নিয়ম করার পর তাকে ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়াও চলছিল, এ অবস্থায় তিনি হাই কোর্টে আসেন। হাই কোর্ট তাতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলে।”
তিনি বলেন, এই ব্যাংকের ৪৯ জন উদ্যোক্তা শেয়ার হোল্ডার রয়েছেন। তারা যদি উদ্যোক্তা পরিচালক হতে চান, তাদেরকে আবেদনের সময়ই নতুন নিয়মে পর্যাপ্ত শেয়ার থাকতে হবে।
“চলমান পরিচালকদের ২ ভাগ আর বাকিদের ৫ ভাগ করে শেয়ার রাখা সম্ভব না, কারণ তা ১০০ ভাগকে ছাড়িয়ে যায়।”
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণের বিষয়ে ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর আদেশ জারি করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।
এতে বলা হয়, কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ওই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ এবং প্রত্যেক পরিচালকের ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে।
আদেশ জারির ছয় মাসের মধ্যে এ শর্ত পূরণ করতে বলা হয়, যা শেষ হয় ২০১২ সালের ২১ মে।
২০১২ সালের ৪ জুন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, ২১ মে’র পরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২০৯টি কোম্পানির ২৩৫ জন উদ্যোক্তা, পরিচালকের ২ শতাংশের কম শেয়ার ছিল।
ওই বছরের ২২ মে এনসিসি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুরেন্স ও প্রাইম ফিনান্সের ২৪ জন পরিচালক হাই কোর্টে পাঁচটি আবেদন করেন।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অধ্যাদেশ, ১৯৬৯-এর যে ধারার ক্ষমতাবলে এসইসি ওই নির্দেশনা দিয়েছিল, সেই ২ সিসি ধারা অবৈধ ঘোষণার আবেদন জানান পরিচালকরা।
এসব আবেদনে ওই বছরের ৪ জুন রুল দেয় আদালত। এসইসি আইনের ২ সিসি ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
রুলের চূড়ান্ত শুনানি করে ওই মাসেই দেয়া রায়ে সবগুলো রুল খারিজ করে দেয় আদালত।
এসইসির ওই ধারায় বলা হয়েছে, ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন অথবা বিদ্যমান কোনো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হলে এসইসি এ ধরনের শর্ত আরোপ করতে পারবে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।