লক্ষ্মীপুরে এ বছর ৯০ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদন
নারিকেল সুপারী আর মেঘনার রূপালী ইলিশের জন্য সমৃদ্ধ লক্ষ্মীপুর। গত দেড় যুগ থেকে দেশের ৬৫ ভাগ সয়াবিন এখানে উৎপাদিত হওয়ায় এ জেলা বর্তমানে সয়াবিনের রাজধানী হিসেবে খ্যাত। এ বছর জেলায় সয়াবিন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব রেকর্ড। ফলনও হয়েছে ভাল। বর্তমানে মাঠ থেকে ফসল তোলা ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে পুরোদমে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবছর ৯০ হাজার মেট্রিক টনের বেশী সয়াবিন উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তারা। উৎপাদিত সয়াবিনের মূল্য তিন শ’ কোটি টাকারও বেশি।
তবে দেশের ৬৫ ভাগ সয়াবিন এখানে উৎপাদিত হলেও কৃষকদের দাবির ২০ বছরেও স্থানীয়ভাবে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ৪৭ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষ হয়। এর মধ্যে সদরে সাত হাজার, কমলনগরে সতের হাজার ২শ’, রামগতিতে সতের হাজার ১শ’ ও রায়পুর উপজেলায় ছয় হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। যা গতবারের তুলনায় তিন হাজার ৩৫ হেক্টর বেশী। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭৭ হাজার ৬১ মেট্রিক টন ধরা হলেও ৯০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি উৎপাদিত হয়েছে। বর্তমানে স্থানীয়ভাবে প্রতি মন সয়াবিন ১২শ’ থেকে ১৪শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সেই অনুপাতে জেলায় মোট উৎপাদিত সয়াবিন ৩শ’ কোটি টাকারও বেশী হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এখানে উৎপাদিত সয়াবিনের অধিকাংশ পোল্ট্রি খাদ্য তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।
সোনালী ব্যাংক লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের এজিএম এনামুল হক জানান, এবার সয়াবিন চাষি কৃষকদের মাঝে রাষ্ট্রয়ত্ব ৫টি ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় এক কোটি ৪৩ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। ৪ পার্সেন্ট সুদ ও সহজ শর্তে তিন শতাধিক কৃষকের মাঝে এ টাকা বিতরণ হয়। তবে জেলায় প্রায় লক্ষাধিক সয়াবিন চাষি থাকায় তা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য বলে জানিয়েছে কৃষকরা।
অন্যদিকে এনজিও সংস্থা কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (কোডেক) লক্ষ্মীপুরের জোনাল ম্যানেজার মো. মোশারফ হোসেন জানান, এ মৌসুমে তারা জেলায় দু’ হাজার সয়াবিন চাষিকে ৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন। কৃষি বিভাগের স্থানীয় মাঠ কর্মীদের সহযোগিতায় তারা কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনিও দাবি করেন কৃষকদের নায্যমূল্য প্রাপ্তি ও আবাদে সফলতা ধরে রাখতে স্থানীয়ভাবে সয়াবিন ভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরী।
এদিকে কমলনগর ও রামগতি উপজেলার একাধিক কৃষক জানান, তারা চেষ্টা করেও ব্যাংক থেকে ঋণ না পেয়ে স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে সয়াবিন চাষ করছেন। ১৯৯৫সাল থেকে জেলায় সয়াবিন ভিত্তিক শিল্প কারখানা তৈরী করার জন্য স্থানীয় কৃষি বিভাগের মাদ্যমে তারা সরকার ও শিল্প উদ্যোক্তাদের কাছে দাবি করে আসছেন। কিন্তু ২০বছরেও দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় তারা নায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষাবাদে। এব্যাপারে দ্রুত সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কৃষকরা।
রায়পুর উপজেলার চর বংশী ইউনিয়নের মাঝিকান্দি গ্রামের সয়াবিন চাষি হযরত আলী জানান, তিনি কোডেক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ৪০ শতাংশ জমিতে সয়াবিন চাষ করেছেন। ভাল ফলন হয়েছে। এবার কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা তার লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
অপর চাষি খোরশেদ আলম প্রামানিক জানান, গত বছরের তুলনায় এবার ফলন কিছুটা কম হয়েছে। কিন্তু গতবার ফসল পানিতে নষ্ট হয়ে গেলেও এবার ঘরে তুলতে পেরে তারা খুবই খুশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ওসমান খাঁন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ইতোমধ্যে মাঠের ৬০ ভাগ সয়াবিন ঘরে তুলেছে চাষিরা। দেশের ৬৫ ভাগ সয়াবিন এখানে উৎপাদন হয়ে থাকে। চাষিদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ ও সহজে বাজারজাত করণের জন্য স্থানীয়ভাবে সয়াবিনভিত্তিক শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করেছেন। ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বেশ কয়েকবার জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় অনুরোধ করেছেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।