- হোম
- >
- আইন-মানবাধিকার
- >
- জব্বার রাজাকারের বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ
জব্বার রাজাকারের বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, এরশাদের জাতীয় পার্টির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার ১৯৭১ সালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তার শ্বশুর ছিলেন মুসলিম লীগের নেতা। শ্বশুরের হাত ধরেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা ও মানবতাবিরোধী নানা অপরাধ সংঘটিত করেন তিনি।
এলাকায় বসেই তিনি রাজাকার বাহিনী সংগঠিত করার নেতৃত্ব দেন। তার নির্দেশেই মঠবাড়িয়ায় মেধাবী ছাত্র ও হিন্দুদের হত্যাসহ সব ধরনের লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ৬ সেপ্টেম্বর জব্বারের নির্দেশে তার মামাশ্বশুর রাজাকার কমান্ডার পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার টিকিকাটা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইস্কান্দার মৃধা, মুকুল বাদশা, রুহুল মৃধা ও আনসার খলিফার নেতৃত্বে ২৫/৩০ জনের রাজাকার বাহিনী উপজেলার আঙ্গুলকাটা গ্রামের মিত্র বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময়ে তারা ৩৭ জনকে ধরে সূর্যমণি বেড়িবাঁধে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এতে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন ২৫ জন।
১৯৬৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় যশোর বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকারী গণপতি হালদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিরেন, ভিপি আনোয়ারুল কাদির, জিয়াউজ্জামান, গোলাম মোস্তফা, অমল, শ্যাম ব্যাপারী ও আব্দুল মালেক হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী ছিলেন জব্বার ইঞ্জিনিয়ার।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগে বলা হয়েছে, ৭১ সালে সাপলেজা কাচারিবাড়ির এক জনসভায় জব্বার ইঞ্জিনিয়ার উদ্ধত কন্ঠে বলেছিলেন ‘মুক্তিযোদ্ধা ও হিন্দুদের স্থান এই পাকিস্তানের মাটিতে হবে না, হিন্দুদের সম্পদ সব গনিমতের মাল, সব কিছু মুসলমানদের ভোগ করা জায়েজ’।
জব্বার সুন্দরবন উপকূল এলাকার রাজাকারদের রিং লিডার ছিলেন। তিনি এ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শহীদ সওগাতুল আলম ছগিরের গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেন। তিনি উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হকের গ্রামের বাড়িতেও লুটপাট করেন। ওই মুক্তিযোদ্ধার মাকে রাইফেল দিয়ে পিটিয়েছেন।
প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ইঞ্জিনিয়ার জব্বার ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ফুলঝড়িতে দুইজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেন। এছাড়া নাথপাড়া ও কুলুপাড়ার শতাধিক বাড়িতে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করেন।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ফুলঝুড়িতে একজনকে হত্যা এবং ৩৬০টি বাড়ি-ঘর লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করেন।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, নলিতে ১১ জনকে গণহত্যা ছাড়াও ৬০টি বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করেন।
চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, ফুলঝড়িতে প্রায় দুইশত নিরস্ত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করেন ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার।
পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল জব্বার আঙ্গুলকাটা এবং মঠবাড়িয়া থেকে ৩৭ জনকে আটক, মালামাল লুণ্ঠন, অপহরণ, নির্যাতন, ১৫ জনকে গুরুতর জখম এবং ২২ জনকে গণহত্যা করেন।
যুদ্ধাপরাধী আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ার ১৯৬৫ সালে আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচনে তৎকালীন চেয়ারম্যান মেম্বারদের ভোটে প্রথম এমপিএ নির্বাচিত হন। সত্তরের নির্বাচনে তৎকালীন মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে মঠবাড়িয়া-বামনা-পাথরঘাটা আসনে নির্বাচন করেন। দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আবার তিনি প্রকাশ্য রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
১৯৮৬ সালে এরশাদের জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে পিরোজপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনে পুনরায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ওই সময় তিনি পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন।
১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে টিন ও চাল আত্মসাতের মামলা হয়। এরপর মামলা থেকে বাঁচতে বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালে পুনরায় তিনি জাতীয় পার্টিতে ফিরে গিয়ে কেন্দ্রীয় রাজনীতি শুরু করেন। এরপর জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বিনোদ বিহারী বিশ্বাসের ছেলে যজ্ঞেশ বিশ্বাস বাদী হয়ে ১৯৭২ সালে জব্বার ইঞ্জিনিয়ারকে প্রধান আসামি করে স্থানীয় দুই শতাধিক রাজাকারের বিরুদ্ধে হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতনের অভিযোগে মঠবাড়িয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু পঁচাত্তরের পট-পরিবর্তনের পর এখানে স্বাধীনতাবিরোধীদের উত্থানের কারণে মামলা দু’টি ধামাচাপাসহ সব নথিপত্র গায়েব হয়ে যায়।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।