- হোম
- >
- কৃষিজ ও প্রাণিজ
- >
- চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি মৌসুমে আমের ফলন নিয়ে শংকা
চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি মৌসুমে আমের ফলন নিয়ে শংকা
আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবারও আমের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজনৈতিক সঙ্কট ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা না দিলে এবারও আম-চাষীরা লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা করছেন।
যদিও চলতি মৌসুমে চলমান একাধিক তাপপ্রবাহ, ভ্যাপসা গরম ও অধিক বৃষ্টিহীনতার কারণে গোড়া শুকিয়ে পড়ে যাচ্ছে আম গাছের আম। যদিও একসময় বৃহত্তর রাজশাহী জেলায় অধিকাংশ আম উৎপাদন হত কিন্তু বর্তমানে প্রায় সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে এর গাছ ও বাগান। ধান চাষের চেয়ে আম-চাষে অধীক লাভবান হওয়ায় প্রতিবছরই জেলার বরেন্দ্র অঞ্চল ও চরাঞ্চলসহ নতুন নতুন এলাকায় বড়-বড় আম-বাগান গড়ে উঠছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হুদা জানান, প্রতিবছর আম-বাগান বৃদ্ধি পেয়ে জেলার ৫টি উপজেলায় বর্তমানে প্রায় ২৪ হাজার ২শ ৫০ হেক্টর জমিতে ১৯ লাখ বিভিন্ন জাতের আম-গাছ রয়েছে। সারা দেশে প্রায় ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে বছরে সাড়ে সাত লক্ষ মেট্রিকটন আম হয় যার এক-তৃতীয়াংশই হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতে। জেলায় প্রায় দুই শতাধিক প্রজাতির আম গাছ থাকলেও বানিজ্যিক ভাবে বেশী চাষ হয় ১০/১২ টির মত জাত।
পরিসংখ্যান মোতাবেক জেলার বৃহত্তম শিবগঞ্জ উপজেলায় ১৩হাজার ৫০হেক্টর জমিতে ৯লক্ষ ৮৩হাজার ৪৮০টি গাছ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে ৪হাজার ১শ ৫৫হেক্টর জমিতে ৩লক্ষ ১৯হাজার ৯শ ৮০টি, গোমস্তাপুরে ২হাজার ৯শ ১৫হেক্টর জমিতে ২লক্ষ ৩৪হাজার ৮শ ২৫টি গাছ, ভোলাহাটে ২হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ১লক্ষ ৫২হাজার ৯শ টি গাছ ও নাচোলে ১হাজার ৬শ ৬০হেক্টর জমিতে ১লক্ষ ৩২হাজার ৮শ ১৫টি গাছ রয়েছে।
কৃষি বিভাগের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৮সালে জেলায় ২১হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে ১৬লক্ষ ৪২হাজার ৫শ গাছের বিপরীতে আমের উৎপাদন হয়েছিল ১লক্ষ ৫৩হাজার মেট্রিক টন, ২০০৯সালে ২২হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে ১৬লক্ষ ৭২হাজার ৫শ গাছের বিপরীতে আমের উৎপাদন হয়েছিল ১লক্ষ ৫হাজার মেট্রিক টন, ২০১০সালে ২২হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে ১৬লক্ষ ৯৬হাজার ১শ ৬০ গাছের বিপরীতে আমের উৎপাদন হয়েছিল ১লক্ষ ৭২হাজার মেট্রিক টন, ২০১১সালে ২৩হাজার ৩শ ৭০হেক্টর জমিতে ১৭লক্ষ ৬৪হাজার গাছের বিপরীতে আমের উৎপাদন হয়েছিল ১লক্ষ ৮৫হাজার মেট্রিক টন, ২০১২সালে ২৩হাজার ২শ ৮০হেক্টর জমিতে ১৭লক্ষ ৮১হাজার ৯শ ৩০গাছের বিপরীতে আমের উৎপাদন হয়েছিল ১লক্ষ ৬৮হাজার মেট্রিক টন।
কৃষি বিভাগ এবছর জেলায় ২লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে আবহাওয়ার তারতম্যে,মুকুল দেরিতে আসা বা নামলা মুকুল, প্রচণ্ড খরা, কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়া ও কয়েকদফা বড় ধরনের শিলাবৃষ্টিতে বিপুল পরিমাণ আম ঝরে পড়ায় ২লক্ষ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
আমের পোকা দমন ও রোগবালাই রোধে আম চাষীরা কীটনাশকসহ গাছ পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত রয়েছেন। খরা মোকাবেলায় সেচ দেয়া হচ্ছে। তবে রোগবালাই ও বড় ধরনের ঝড় এ বছর কিছুটা কম বলে জানাচ্ছেন চাষীরা। কিন্তু মাস খানেক থেকে গাছগুলি নতুন পাতা ছাড়ায় বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে গুটি টিকতে।
এটাও উৎপাদন কমের অন্যতম কারণ বলে জানালেন চককীর্তির উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আপেল মাহমুদ ও দেশের অন্যতম বৃহৎ জেলার কল্যাণপুর হর্টিকালচার সেন্টারের কৃষি কর্মকর্তা মোত্তালেব হোসেন।
এদিকে, শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট উপজেলার বিস্তির্ণ আম-বাগানগুলোতে প্রচুর আম রয়েছে। চলতি মে মাসের শেষ সপ্তাহে বাজারে আগাম জাতের গোপালভোগ, হিমসাগর, বোগলা গুটি, বোম্বে, বৃন্দাবনি, ক্ষুদি খিরসাসহ গুটি আম নামবে।
ইতোমধ্যে জেলার সবচেয়ে বড় আমের বাজার কানসাট সহ শিবগঞ্জ, ভোলাহাট, রহনপুর, মল্লিকপুর ও জেলা শহরের সদরঘাটের আমের আড়তগুলো তৈরী ও মেরামত কাজ চলছে পুরোদমে। ভোলাহাটের আম চাষী ও ব্যবসায়ী জহির ও রহমান জানান, বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও ৫০লক্ষ টাকা দিয়ে আম-বাগান কিনে চিন্তায় রয়েছেন তারা।
যদি আগামীতে গেল মৌসুমের মত দেশে হরতাল-অবরোধ তথা রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়ে বা প্রাকৃতিক বৈরিতা অব্যাহত থাকে তবে আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা বিরাট ক্ষতির মুখে পড়বেন। যদিও দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগে পুরোদমে বাগান কেনাবেচা করছেন। জেলার বিপুল সংখ্যক মানুষ শুধু আম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজ করেই বছর পার করে ।
অন্যদিকে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে আগাম জাতের গুটি ও শেষ মৌসুমের আশ্বিনা আমের উৎপাদন নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তিত আম চাষীরা। অনেক বড় বড় আশ্বিনা বাগানে এবার তুলনামুলক ভাবে আম কম। অধিক মুনাফালোভী আম ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কীটনাশক ও বিষ কোম্পানীর প্ররোচনায় গত কয়েক বছর ধরে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়াই বিভিন্ন বালাইনাশক ব্যবহার করায় ক্রমাগত ক্ষতির মুখে পড়ছে আম বাগানগুলো।
এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষনা কেন্দ্র (আম গবেষণা কেন্দ্রে) এর উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. শরফউদ্দিন জানান, আম গুণগত দিক থেকে পুষ্টিমান, স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয় ফল হলেও আমবাগানে বিনা কারণে কীটনাশকের ব্যবহার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বালাই নাশকের ব্যবহারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে নেয়া হলে, একদিকে যেমন আমের উৎপাদন বাড়বে, অন্যদিকে তেমন কমবে বাগান ধ্বংসের ঝুঁকি।
এদিকে জেলা থেকে পরিবহন শুরু হয়েছে প্রায় পরিপক্ক কাঁচা আম। এ ছাড়া সোনামসজিদ স্থল বন্দর দিয়ে পাশের সীমান্তবর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলার আম ঢুকছে দেশের বাজারে।
দেশে ও জেলায় তেমনভাবে আধুনিক বানিজ্যিক আম ভিত্তিক শিল্প ও রপ্তানির সুযোগ না থাকায় বিশ্বের নবম আম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবেই থেকে যাচ্ছে বাংলাদেশ যেখানে ফলটি ঘিরে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে অর্থনৈতিক উন্নতির। পরিকল্পিত ব্যাপক সরকারি ও বেসরকারি উদ্যেগ দ্রুতই আমকে নিয়ে যেতে পারে শক্তিশালী ও লাভজনক কৃষিপণ্যের কাতারে এবং বাড়াতে পারে কর্মসংস্থান।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।