- হোম
- >
- আইন-মানবাধিকার
- >
- ইঞ্জিনিয়ার জব্বারের বিরুদ্ধে ৫ অভিযোগ
ইঞ্জিনিয়ার জব্বারের বিরুদ্ধে ৫ অভিযোগ
জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক সংসদ সদস্য ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শেষ হয়েছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা, গণহত্যা, ধর্মান্তরিতকরণ, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে তার জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। মঙ্গলবার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেবেন তদন্ত সংস্থা।
প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানাতে সোমবার সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে (সেফ হোম) এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান, জ্যেষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তা সানাউল হক ও এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
আব্দুল হান্নান খান ব্রিফিংয়ে জানান, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৩৬ জনকে হত্যা ও গণহত্যা, ২০০ জনকে ধর্মান্তরিতকরণ এবং ৫৫৭টি লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার অপরাধের ঘটনাস্থল মঠবাড়িয়ার ফুলছড়ি, ললি ও আঙ্গুলকাটা।
ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে সাক্ষী করা হয়েছে ৪৬ জনকে।
মঙ্গলবার এ প্রতিবেদন দেওয়া হবে প্রসিকিউশনের কাছে। প্রসিকিউশন এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করবেন ট্রাইব্যুনালে।
আব্দুল হান্নান খান জানান, তদন্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছেন। গত বছরের ১৯ মে তদন্ত শুরু হয়ে রোববার শেষ হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়টি বুঝতে পেরে এই ব্যক্তি সম্ভবত তদন্ত শুরুর আগেই যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন বলেও জানান তিনি।
তদন্তের মূল প্রতিবেদন হচ্ছে ৯৯ পৃষ্ঠার ও পুরো প্রতিবেদনটি ১ হাজার ৯০০ পৃষ্ঠার হচ্ছে বলেও জানান তদন্ত সংস্থা।
সূত্র জানায়, জব্বার ইঞ্জিনিয়ার বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় তার বড় মেয়ের বাসায় আছেন। সেখানে তার বড় ছেলে নাসির উদ্দিনও থাকেন।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, এরশাদের জাতীয় পার্টির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার ১৯৭১ সালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তার শ্বশুর ছিলেন মুসলিম লীগের নেতা। শ্বশুরের হাত ধরেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা ও মানবতাবিরোধী নানা অপরাধ সংঘটিত করেন তিনি।
এলাকায় বসেই তিনি রাজাকার বাহিনী সংগঠিত করার নেতৃত্ব দেন। তার নির্দেশেই মঠবাড়িয়ায় মেধাবী ছাত্র ও হিন্দুদের হত্যাসহ সব ধরনের লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ৬ সেপ্টেম্বর জব্বারের নির্দেশে তার মামাশ্বশুর রাজাকার কমান্ডার পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার টিকিকাটা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইস্কান্দার মৃধা, মুকুল বাদশা, রুহুল মৃধা ও আনসার খলিফার নেতৃত্বে ২৫/৩০ জনের রাজাকার বাহিনী উপজেলার আঙ্গুলকাটা গ্রামের মিত্র বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময়ে তারা ৩৭ জনকে ধরে সূর্যমনি বেড়িবাঁধে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এতে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন ২৫ জন।
১৯৬৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় যশোর বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকারী গণপতি হালদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিরেন, ভিপি আনোয়ারুল কাদির, জিয়াউজ্জামান, গোলাম মোস্তফা, অমল, শ্যাম ব্যাপারী ও আব্দুল মালেক হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী ছিলেন জব্বার ইঞ্জিনিয়ার।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে বলা হচ্ছে, ৭১ সালে সাপলেজা কাচারিবাড়ির এক জনসভায় জব্বার ইঞ্জিনিয়ার উদ্ধত কন্ঠে বলেছিলেন ‘মুক্তিযোদ্ধা ও হিন্দুদের স্থান এই পাকিস্তানের মাটিতে হবে না, হিন্দুদের সম্পদ সব গনিমতের মাল, সব কিছু মুসলমানদের ভোগ করা জায়েজ’।
জব্বার সুন্দরবন উপকূল এলাকার রাজাকারদের রিং লিডার ছিলেন। তিনি এ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শহীদ সওগাতুল আলম ছগিরের গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেন। তিনি উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হকের গ্রামের বাড়িতেও লুটপাট করেন। ওই মুক্তিযোদ্ধার মাকে রাইফেল দিয়ে পিটিয়েছেন।
যুদ্ধাপরাধী আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ার ১৯৬৫ সালে আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচনে তৎকালীন চেয়ারম্যান মেম্বারদের ভোটে প্রথম এমপিএ নির্বাচিত হন। সত্তরের নির্বাচনে তৎকালীন মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে মঠবাড়িয়া-বামনা-পাথরঘাটা আসনে নির্বাচন করেন। দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আবার তিনি প্রকাশ্য রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদের জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে পিরোজপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনে পুনরায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ওই সময় তিনি পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন।
১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল বিরুদ্ধে টিন ও চাল আত্মসাতের মামলা হয়। এরপর মামলা থেকে বাঁচতে বিএনপিতে যোগ দিলেও ২০০১ সালে পুনরায় তিনি জাতীয় পার্টিতে ফিরে এসে কেন্দ্রীয় রাজনীতি শুরু করেন। এরপর জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বিনোদ বিহারী বিশ্বাসের ছেলে যজ্ঞেস বিশ্বাস বাদী হয়ে ১৯৭২ সালে জব্বার ইঞ্জিনিয়ারকে প্রধান আসামি করে স্থানীয় দুই শতাধিক রাজাকারের বিরুদ্ধে হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতনের অভিযোগে মঠবাড়িয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু পঁচাত্তরের পট-পরিবর্তনের পর এখানে স্বাধীনতাবিরোধীদের উত্থানের কারণে মামলা দু’টি ধামাচাপাসহ সব নথিপত্র গায়েব হয়ে যায়।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।